ট্রাম্পের অ্যাটর্নি জেনারেল অপসারিত, এরপর ম্যুলার?

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেফ সেশনস। রয়টার্স ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেফ সেশনস। রয়টার্স ফাইল ছবি

মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর ২৪ ঘণ্টা পার হয়নি, তার আগেই অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে পদচ্যুত করলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গতকাল বুধবার সকালে চিফ অব স্টাফ জেনারেল জন কেলি সেশনসকে ফোন করে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত জানান। বিস্মিত সেশনস দিন দুয়েকের সময় চেয়েছিলেন। কেলি জানিয়ে দেন, অসম্ভব। গতকালই ম্লান হেসে বেরিয়ে যান সেশনস।

ট্রাম্প অস্থায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সেশনসের চিফ অব স্টাফ গ্রেগ হুইটেকারকে। বিধিমতো এই পদ পাওয়ার কথা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রজেনস্টাইনের। তাঁকে ডিঙিয়ে হুইটেকারকে এই পদে নিয়োগ দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নে তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারকে অপসরণের উদ্দেশ্যেই কি ট্রাম্প এমন তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়েছেন?

অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জেফ সেশনস স্বার্থ-সংঘাতের কারণে রাশিয়া–তদন্ত থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত বিশ্বাসঘাতকতা—এ কারণে সেশনসকে ট্রাম্প কখনোই ক্ষমা করেননি। মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে তাঁকে অপসারণ করা হলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এই বিবেচনায় ট্রাম্প এত দিন সেশনসকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেননি।

সেশনস নিজেকে প্রত্যাহার করায় ম্যুলার–তদন্তের বিচার বিভাগীয় তদারকির দায়িত্ব পড়েছিল সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রড রজেনস্টাইনের ওপর। নিজের সহকর্মীদের সঙ্গে ট্রাম্পকে অপসারণের ব্যাপারে কথা চালাচালি করে তিনিও প্রেসিডেন্টের বিরাগভাজন হন। ট্রাম্প ইঙ্গিত করেছেন, রজেনস্টাইনকেও তিনি অপসরণ করবেন।

সম্ভবত সে কারণেই রজেনস্টাইনকে ডিঙিয়ে তাঁর অধস্তন হুইটেকারকে অস্থায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া অন্য আরও একটি কারণ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। আইওয়ার এই সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর পরিচিত ট্রাম্পের অতি অনুগত সমর্থক হিসেবে। ট্রাম্প বরাবরই একজন অতি অনুগত অ্যাটর্নি জেনারেলকে খুঁজছিলেন, মুখেও সে কথা বলেছেন। হুইটেকারকে অস্থায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর নিউইয়র্ক টাইমস তাঁকে ‘লয়ালিস্ট’ বা অতি বিশ্বস্ত নামে অভিহিত করেছে।

ট্রাম্পের প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্য ছাড়াও হুইটেকারের অন্য পরিচয়, তিনি ম্যুলার–তদন্তের একজন কঠোর সমালোচক। একাধিক প্রকাশিত নিবন্ধে ও টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি ম্যুলার–তদন্ত বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। যদি ম্যুলারকে পদচ্যুত করা সম্ভব না হয়, তাহলে এই তদন্ত বাবদ সব অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে তাঁকে ‘ধুঁকে ধুঁকে মারার’ পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিচার বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ম্যুলার–তদন্তসহ এই বিভাগের সব কাজকর্মের তদারকির দায়িত্ব এখন হুইটেকারের। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের ধারণা, ট্রাম্প এখন যেকোনো সময়ে হুইটেকারকে ম্যুলারকে অপসারণের নির্দেশ দেবেন। ম্যুলার গত কয়েক সপ্তাহ কার্যত নীরব রয়েছেন। তবে নীরবে ও পশ্চাতে তাঁর তদন্ত অগ্রসর হচ্ছে। জানা গেছে, এবার তাঁর লক্ষ্য ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ পুত্র ট্রাম্প জুনিয়র। হিলারি ক্লিনটনের ব্যাপারে ক্ষতিকর প্রমাণ রয়েছে—এই কথা শুনে ট্রাম্প–তনয় ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ট্রাম্প টাওয়ারে একজন রুশ আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার করেছিলেন। ম্যুলার যাতে ট্রাম্প জুনিয়রের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে ট্রাম্প আগ বাড়িয়ে সেশনসকে সরিয়ে হুইটেকারকে বসানোর ব্যবস্থা করেছেন বলে ভাবা হচ্ছে।

বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা ম্যুলারের অপসারণের যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর সতর্ক উচ্চারণ করেছেন। সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের নেতা চাক শুমার এক টুইটে ট্রাম্পের নাম নিয়ে বলেছেন, এমন কাজ করবেন না। সিনেটের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির ডেমোক্রেটিক সদস্য সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার বলেছেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ম্যুলারকে অপসরণ করা হলে তা হবে বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ এবং প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার অপপ্রয়োগ। এমনকি সদ্য নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি ম্যুলারের অপসারণের যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন।

‘ম্যুলারকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে প্রতিবাদ জমায়েতের আহ্বান জানানো হয়েছে। নয় শতাধিক অধিক স্থানে এই জমায়েত হবে বলে জানানো হয়েছে।