নিউইয়র্কে নবান্ন উৎসব উদ্যাপন

উৎসবের একটি পর্বে দলগত পরিবেশনা
উৎসবের একটি পর্বে দলগত পরিবেশনা

লং আইল্যান্ডে তথা নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো শিল্পাঙ্গনের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে নবান্ন উৎসব। ১১ নভেম্বর লেভিটটাউন কমিউনিটি হলের মিলনায়তনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে বাঙালির চিরন্তন নবান্ন উৎসব।
শিল্পাঙ্গনের মেধাবী ও পেশাদার শিল্পী, পৃষ্ঠপোষক, উপদেষ্টা ও কর্মীবৃন্দের সম্মিলিত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে বেলা একটায় নবান্ন উৎসবের সূচনা হয় পিঠা উৎসবের মাধ্যমে। আমন্ত্রিত দর্শক ও অতিথিদের সুস্বাদু পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করেন শিল্পাঙ্গনের শিল্পী ও কর্মীরা। একই সঙ্গে শুরু হয় শাড়ি, গয়না ও খাবারের মেলা।
দুপুর দুইটায় নবান্ন উৎসবের শুভ উদ্বোধন করা হয় বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে। শিশু-কিশোর ও শিল্পীদের দল নিয়ে নবান্ন শোভাযাত্রা শুরু হয় মিলনায়তনের প্রবেশদ্বার থেকে। ঢাক ঢোলের বাদ্যে বর্ণাঢ্য প্ল্যাকার্ড নিয়ে শোভাযাত্রা মিলনায়তন প্রদক্ষিণ করে মঞ্চে ওঠে। বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পাঙ্গনের শিল্পীরা। এরপর মঞ্চ আলোকিত করে ওঠেন বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী সুবীর নন্দী। সুবীর নন্দীকে শিল্পাঙ্গনের পক্ষ থেকে ফালাহ আহমেদ ও আকতার কামাল সম্মাননা ও উত্তরীয় প্রদান করেন। এরপর ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানের সঙ্গে প্রধান অতিথি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করেন।
আমর আশরাফের স্বাগত বক্তব্যের পর শিল্পী সুবীর নন্দী সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এরই সঙ্গে শিল্পাঙ্গনের আলেখ্যানুষ্ঠান ‘এসো হে সুন্দর’ পরিবেশনা দিয়ে নবান্ন উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়।
মাঝে ১৫ মিনিটের বিরতি ছাড়া রাত ১১টা পর্যন্ত একটানা চলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিল্পাঙ্গনের নিজস্ব পরিবেশনার পাশাপাশি আমন্ত্রিত তারকা শিল্পীদের পরিবেশনাও ছিল। শিল্পাঙ্গনের শিল্পীরা একে একে পরিবেশন করেন কবিতার আসর ‘ভালো থেকো’; নৃত্যালেখ্য ‘নবরবকিরণে’; গীতিআলেখ্য ‘ভালোবাসার গল্প’; পুঁথি পাঠের আসর ‘খনার বচন’; নবান্নের আলেখ্যানুষ্ঠান ‘নতুন সকাল’ ছাড়াও একক সংগীত, আবৃত্তি ও কৌতুক। আমন্ত্রিত শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন নজরুল কবীর, তাহরিনা পারভীন প্রীতি, শরিফুজ্জামান মুকুল ও মঞ্জুর কাদের। শিল্পাঙ্গনের শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন সামায়রা মাহিবা, এলমা হক, রাই সরকার, নুসায়বাহ কবির, লিয়ানা মাহবিন, সানজিদা রাহমান রাইনা, আয়না মাহিবা, আবীর ইসলাম, সাহিল কামাল, তাসনিম লোকমান, জিনাতুন নাহার হেরা, লিউনা মুহিত, শারমিন হক, শাহনাজ কোরেশী, কামরুন আহমেদ, শাহপার খান ডানা, শুক্লা রায়, নাদিরা আহমেদ মুন্না, সাবিনা হাই উর্বি, তাহমিনা তাহরীন বুলা, তাসফিয়া রুবাইয়াৎ, সোনিয়া হক, ইশরাত কুমু, মৌসুমী বড়ুয়া, ফারজানা সুলতানা শরমিন, ইশরাত আহমেদ পোরশিয়া, মাহনাজ হাসান কেয়া, সামিনা আশরাফ লাজু, বিদিশা দেওয়ানজী, সৌগত সরকার, সাইফুল্লাহ পারভেজ, মোহাম্মদ শানু, দীপ্তি বড়ুয়া, মাহমুদ চৌধুরী, সায়েম শাহরিয়ার এবং অশোক চৌধুরী।
সংগীত পরিকল্পনা, পরিচালনা ও শিল্পাঙ্গনের ভাব সংগীতের সুর করেন বিদিশা দেওয়ানজী। সহযোগিতায় ছিলেন
সাইফুল্লাহ পারভেজ। শিল্পাঙ্গন সংগীতের কথা লিখেছেন মো. নজরুল ইসলাম।
নবান্ন উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন প্রকৌশলী ও সমাজ সেবক সৈয়দ জাকি হোসেন, নাসাউ কাউন্টির এক্সিকিউটিভের প্রতিনিধি ও নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। নাসাউ কাউন্টি থেকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় প্রথিতযশা শিল্পী সুবীর নন্দী, মেধাবী শিল্পী বিদিশা দেওয়ানজী ও সৌগত সরকার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন শিল্পাঙ্গনকে।
নবান্ন উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল পাঁচজন তারকা শিল্পীর পরিবেশনা। প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী প্রিয়া ডায়েস তাঁর নৃত্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশ ও নবান্নের ওপর ভিত্তি করে নৃত্যালেখ্য উপস্থাপন করেন। মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার ও চলচ্চিত্রের প্রথিতযশা শিল্পী শিরীন বকুল একাধারে আবৃত্তি ও দুটি নাটকে অভিনয় করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’ নাটকের অংশবিশেষে নন্দিনীর চরিত্রে শিরীন বকুল ও রাজার চরিত্রে ছিলেন মো. নজরুল ইসলাম। বিশেষ আকর্ষণ ছিল দ্বিতীয় নাটক ‘এখানে দরজা ছিল’। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত আমর আশরাফের ভাবনা ও প্রয়োগে এবং মো. নজরুল ইসলামের রচনা ও নির্দেশনায় এই নাটকে অভিনয় করেন দুই তারকা শিল্পী শিরীন বকুল এবং লাক্স সুন্দরী, মডেল ও অভিনেত্রী মিলা হোসেন। তাঁদের সঙ্গে অভিনয়ে আরও যোগ দেন প্রতিষ্ঠিত রূপসজ্জাশিল্পী ও অভিনেতা ম ম জসীম, শওকত রিমন, মোহাম্মদ শানু, মোস্তফা মোর্শেদ মানু, লতিফ রহমান, মো. আওকাত খান, সামায়রা মাহিবা, সোনিয়া হক, ইশরাত কুমু ও মো. নজরুল ইসলাম।
নবান্ন উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেন দুজন বিখ্যাত শিল্পী। ধ্রুপদি ও আধুনিক গানের মিষ্টি কণ্ঠ তনিমা হাদী এবং শিল্পী সুবীর নন্দীর পরিবেশনায় বিমোহিত হন দর্শকেরা। তবলায় ছিলেন তপন মোদক, কিবোর্ডে রিপন, অক্টোপ্যাডে তুরার দত্ত, গিটারে আকাশ আহসান ও মোহাম্মদ শানু। অনুষ্ঠান শেষে লটারি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজয়ী হন শিল্পী শিরীন বকুল, ম ম জসীম ও ইকবাল ইসলাম।
আমর আশরাফের সার্বিক সমন্বয়ে, ফালাহ আহমেদ ও আকতার কামালের ব্যবস্থাপনায়, মো. নজরুল ইসলামের গ্রন্থনায় ও বেবী আজিজের উপস্থাপনায় সুপরিকল্পিত নবান্ন উৎসব লং আইল্যান্ড তথা নিউইয়র্কে এক দৃষ্টান্ত। অনুষ্ঠানে মঞ্চসজ্জার নকশা করেন টিপু আলম, পোশাক সরবরাহ করেন বিবির বায়না, শব্দ নিয়ন্ত্রণ করেন নিবিড় খান, আলোকের দায়িত্বে আতিয়ার রহমান এবং চিত্রগ্রহণে ছিলেন কাজী শফিকুল হক।
শিল্পাঙ্গনের উপদেষ্টা রাহাত হোসেন নাজু, আবুল কালাম আজাদ, রোজিনা কবির, মো. রফিকুল ইসলাম, রাজিবুল হক ও শাহাব আহমেদ, শুভাকাঙ্ক্ষী মিজান রহমান, আবদুর রহমান, মাহবুবুর রশীদ, হুসেন শরীফ আহমেদ, মো. নুরুর রহমান, শাফকাত মোস্তফা, মীরা রহমান, অনিক রহমান, জাকারিয়া হোসেন জিকো, হাসান ইসলাম সানি, ইকবাল ইসলাম, পলি ইসলাম, জাওয়াদ হোসেন হাসিব, সাইফুল ইসলাম, খালেদ চৌধুরী, শামীম ইসলাম, সোনিয়া পান্না ও স্বপন কবিরের চেষ্টায় নবান্ন উৎসব এক দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে।