ভোটচোর আসলে কে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা ভোট চুরির মাধ্যমে নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর বলে অভিযোগ করেছেন। নির্বাচনে জেতার পর তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে তিনি ৩০ লাখ ভোট কম পেয়েছেন। এর একমাত্র কারণ ডেমোক্র্যাটরা অবৈধ অভিবাসীদের দিয়ে ভোট ডাকাতি করেছে। ভোট চুরির অভিযোগ প্রমাণের জন্য তিনি বিশেষ কমিশন পর্যন্ত নিয়োগ করেছিলেন। মাস কয়েক খাটাখাটির পর কোনো ভোট চুরির প্রমাণ না পাওয়ায় সে কমিশন অবশ্য পরে বাতিল করা হয়।

এখন জানা গেছে, অন্য কেউ নয়, ভোট চুরির কাজে হাত পাকিয়েছে ট্রাম্পেরই রিপাবলিকান দল। নর্থ ক্যারোলাইনার কংগ্রেস আসনের নির্বাচন থেকে এর প্রমাণ মিলেছে। প্রথমে বলা হয়েছিল, ৬ নভেম্বরের নির্বাচনে নর্থ ক্যারোলাইনার একটি আসনে রিপাবলিকান প্রার্থী মার্ক হ্যারিস তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক প্রার্থী ড্যান ম্যাকক্রেডিকে হাজার খানেক ভোটে পরাজিত করেছেন। সে সময় এ নিয়ে কোনো বিবাদ হয়নি। ম্যাকক্রেডিও কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই নিজের হার স্বীকার করে নেন। কিন্তু পরে জানা গেল, মার্ক হ্যারিস তাঁর পক্ষে কাজ করার জন্য একজন ঠিকাদার নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল ডাকযোগে ভোটপত্র সংগ্রহ করা। এসব ভোটপত্র আবসেন্টি ব্যালট নামে পরিচিত। যাঁরা কোনো কারণে নিজে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন না, তাঁদের জন্য এই ভোটপত্র দেওয়া হয়। এই রিপাবলিকান ঠিকাদারের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুধু ভোটপত্র সংগ্রহই করেননি। নিজেরাই ইচ্ছামতো ভোটপত্র পূরণ করেছেন। নিজের পছন্দের প্রার্থীর নামে ভোট দিয়েছেন। এমনকি তাঁরা ভোটদাতাদের সইও করেছেন। এই পুরো ব্যাপারটাই বেআইনি।

নির্বাচনের রাতে বেসরকারিভাবে রিপাবলিকান প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অ্যাবসেন্টি ব্যালট নিয়ে কারচুপি হয়েছে—এ কথা জানার পর নর্থ ক্যারোলাইনার ইলেকশন বোর্ড নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যায়িত করতে অস্বীকার করে। তারা এখন বলছে, বেআইনি কাজের পূর্ণ তদন্ত প্রয়োজন। তারা যদি যথেষ্ট অনিয়মের প্রমাণ পায়, তাহলে আগের নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভোটের আয়োজন করতে হতে পারে।

প্রথম অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর স্থানীয় রিপাবলিকান পার্টি কেবল প্রতিবাদ করেনি। উল্টো অভিযোগ করে বলে, ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের জেতা নির্বাচন ছিনতাই করেছে। দলের চেয়ারম্যান সিএনএনকে জানান, ভোট চুরির যে প্রতিবেদন তাঁরা প্রচার করেন তা দেখার পর তাঁর বমি করতে ইচ্ছা হয়েছিল। পরে ইলেকশন বোর্ড কারচুপির কথা জানানোর পর তিনি অবশ্য মত বদলান।

কংগ্রেসের পরবর্তী সম্ভাব্য স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ভোট চুরি করে যদি কেউ নির্বাচনে জিতে থাকে, তাহলে তাকে প্রতিনিধি পরিষদে আসন গ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী ম্যাকক্রেডি পরাজয় স্বীকার করে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তা–ও ফিরিয়ে নিয়েছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী মার্ক হ্যারিসের কাছে জানতে চেয়েছেন, এই ভোট চুরির ব্যাপারে তাঁর কী ভূমিকা। তিনি এ নিয়ে কী জানেন।

মজার কথা হলো, ট্রাম্প এত দিন ভোট চুরির অভিযোগ তুলে তুলকালাম কাণ্ড করেছেন। সেই ট্রাম্পই এখন পর্যন্ত এ নিয়ে মুখ খোলেননি। মুখে কুলুপ এঁটে আছেন তাঁর দলের অন্য নেতারাও।