হোয়াইট হাউসে ১৭ মিনিটের নাটক

ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে দৈনন্দিন নাটকের অভাব নেই। তবে গতকাল মঙ্গলবার সেখানে টিভি ক্যামেরার সামনে যে নাটক আমেরিকা ও বিশ্ববাসী দেখল, তার জুড়ি মেলা ভার।


এদিন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পবিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই নেতা, আগামী কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটে ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমারকে আলাদা করে ডেকে এনেছিলেন বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার অচলাবস্থা মেটাতে।

২১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদিত না হলে ফেডারেল সরকারের অধিকাংশ কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে। ট্রাম্প শর্ত দিয়েছেন, তাঁর প্রস্তাবিত দেয়াল নির্মাণ বাবদ কমপক্ষে পাঁচ বিলিয়ন ডলার নতুন বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে তিনি তাতে স্বাক্ষর করবেন না। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছেন, দেয়াল নির্মাণসহ সীমান্ত সুরক্ষার জন্য তারা সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত করতে প্রস্তুত।

শুমার ও পেলোসি ধরে নিয়েছিলেন, তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ আলাপ-আলোচনায় এসেছেন, যার লক্ষ্য ফেডারেল সরকার বন্ধের ঘটনা ঠেকানো। ওভাল অফিসে এসে তাঁরা দেখেন, ট্রাম্প দেশ-বিদেশের তাবৎ সাংবাদিক ও টিভি প্রতিনিধিকে ডেকে এনেছেন। তাঁদের উপস্থিতিতেই আলোচনা শুরু হলো। ট্রাম্প সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, দেয়াল নির্মাণের জন্য তাঁকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার না দেওয়া হলে তিনি ফেডারেল সরকারের চাকা বন্ধ করে দিতে দ্বিধা করবেন না। গলা সপ্তমে চড়িয়ে তিনি জানালেন, ‘আমার জন্য সীমান্ত নিরাপত্তা অনেক বেশি জরুরি। সে জন্য সরকার বন্ধ করে দিলে কেউ যদি কেউ আমাকে দোষ দেয়, কোনো আপত্তি নেই। আমি গর্বের সঙ্গে সে অভিযোগ মেনে নেব।’

শুমার ও পেলোসি উভয়েই শান্ত ভাষায় প্রেসিডেন্টকে বোঝালেন, ‘আমাদের মতভেদের কারণে সরকারের কাজকর্ম বন্ধ করতে হবে কেন। আমরা চাই না সরকার বন্ধ হোক।’ সে কথায় কান না দিয়ে ট্রাম্প বললেন, ‘আমরা যা চাই, তা না পেলে সরকার বন্ধ করে দেব। যেভাবে হোক, এই অর্থ আমার চাই।’

মোট ১৭ মিনিটের এই বাদানুবাদ টিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

অধিকাংশ ভাষ্যকার মনে করেন, সাংবাদিকদের সামনে এই নাটক ট্রাম্প ভেবেচিন্তেই করেছেন। ম্যুলার তদন্ত নিয়ে তাঁর দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। এক দিন পর (অর্থাৎ বুধবার) নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালত তাঁর সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন মিথ্যা বলার অপরাধে কত দিন জেলে যাবেন, তার ঘোষণা দেবেন। কোহেন জানিয়েছেন, ট্রাম্পের নির্দেশেই নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে এক পর্নো তারকা ও এক প্লেবয় মডেলের মুখ বন্ধ রাখতে তিনি অর্থ জুগিয়েছেন। একই কারণে এফবিআই ও কংগ্রেসের সামনে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারেও তিনি সত্য গোপন করেন। সেই রায় প্রকাশের পর রেডিও-টিভিতে দিনভর এই নিয়ে আলোচনা হবে, তা থেকে আংশিক নজর ফেরানোর লক্ষ্যে বাজেট আলোচনার নামে শুমার-পেলোসিকে ডেকে তিনি এই নাটক করলেন।

কোনো কোনো রিপাবলিকান ভাষ্যকারের মতে, অভিবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তার প্রশ্নে আমেরিকার মানুষ ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছে। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ ও মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল নির্মাণকে পুঁজি করে ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি জিতেছিলেন, এই প্রশ্নকেই ২০২০ সালে তাঁর পুনর্নির্বাচনের কেন্দ্রে রাখতে চান। আর সেই নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম অধ্যায়টি তিনি এভাবেই লিখলেন।

ডেমোক্র্যাটদের হিসাব ভিন্ন। তাঁরা মনে করেন, অবৈধ অভিবাসন বন্ধ ও সীমান্ত নিরাপত্তার সঙ্গে দেয়াল নির্মাণের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি অর্থহীন রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর মাত্র, এ ব্যাপারের আমেরিকার মানুষ তাঁদের সঙ্গে আছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে সে কথার প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। দলের বামঘেঁষা নবনির্বাচিত সদস্যরা জানিয়ে দিয়েছেন, সীমান্ত সুরক্ষার জন্য যে অর্থ তাঁরা দিতে সম্মত হয়েছেন, তার এক ডলার বেশি দিতে তাঁরা রাজি হবেন না।

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর শুমার ও পেলোসি নিজ দলের সদস্যদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। এতে শুমার বলেন, ‘আমরা ভালো মনে আলোচনায় গিয়েছিলাম, কিন্তু ট্রাম্প “দেয়াল দেয়াল” করে তাঁর মেজাজ গরম করে ফেললেন।’ ট্রাম্প যে নিজেই সরকার বন্ধের দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন, শুমার সেটি তাঁর দলের জন্য বিজয় বলে ভাবছেন।

একই বৈঠকে পেলোসি জানান, তিনি শান্ত থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ‘বৈঠকে আমি চেষ্টায় ছিলাম মায়ের ভূমিকা পালন করতে, কিন্তু সমস্যা হলো আপনি যদি দুর্গন্ধযুক্ত বেজির সঙ্গে কাতুকুতু খেলতে যান, তাহলে আপনার সারা শরীরই দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে উঠবে।’