সরকারে অচলাবস্থা দায় কার?

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ‘ফেডারেল গভর্নমেন্ট শাটডাউন’ বা কেন্দ্রীয় সরকার অচলাবস্থার প্রথম সপ্তাহ শেষ হয়ে এখন দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই ‘সরকার অচলাবস্থা’ নতুন বছরেও অব্যাহত থাকবে; তবে তা কত দিন গড়াবে সেটাই এখন ভাবার বিষয়। বছরের শেষপ্রান্তে এসে ডিসেম্বরের ছুটির মৌসুমে মানুষের যখন উৎসবের আমেজে, ফুরফুরে মেজাজে সময় কাটানোর কথা, তখন ট্রাম্পের এই সরকারের অচলবস্থা আমেরিকার অর্থনীতির চাকাকে একরকম কুঠারাঘাত করে বন্ধ করে দিয়েছে। 

বড়দিন ও নববর্ষের আনন্দময় সময়ে আমেরিকার সরকারি সেবা বা আংশিক সরকারের অচলবস্থার ঘোষণা দিয়ে আমাদের হীরক রাজা হোয়াইট হাউসে বসে বিরহের গান গাইছেন, ‘সে যে কেন এল না, কিছু ভালো লাগে না।’ কারণ তার প্রিয়জনেরা এমন আনন্দের দিনেও কেউ তাঁর কাছে ছিল না। রানি মেলানিয়া রাজপুত্রকে নিয়ে ছুটি কাটাতে গেছেন; রাজকন্যা ইভাঙ্কা তার প্রিন্স জেরাড কুশনারকে নিয়ে ছুটি কাটাচ্ছেন। সুতরাং বিরহী ট্রাম্পের এখন টুইটারে নানারকম টুইট টুইট খেলা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
কিন্তু দেশের আমজনতার জীবন তো আর তাঁর মতো বিলাসী, খেয়ালি বা পাগলামির জীবন নয়। খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে এমনিতেই আনন্দের বড় অভাব। তাদের ছুটতে হয় ঘড়ির কাটা ধরে। তাদের বাঁচতে হয় সপ্তাহান্তে পাওয়া পে-চেকের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু বালক প্রেসিডেন্টের নানা হঠকারী সিদ্ধান্তের মতোই এই শাটডাউনের সিদ্ধান্তের কারণে নানা বিপর্যয় নেমে এসেছে সাধারণ মানুষের জীবনে আর দেশের অর্থনীতিতে।
সপ্তাহখানেক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের বিচার বিভাগে কর্মরত আমার ছোট ছেলে মন খারাপ করে জানাল, ‘মাম, আমার বেতন কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ ট্রাম্প গভর্নমেন্ট শাটডাউন ঘোষণা করেছে।’ এই শাটডাউন আরও বিলম্বিত হলে বাসা ভাড়াসহ জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যয় মেটাতে আমাদের মতো পরিবারগুলোকে হিমশিম খেতে হবে। আমার ছেলের মতোই এমন অনেক আমজনতা যারা কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য কাজ করে, তারা সবাই ইতিমধ্যেই হতাশায় ভুগতে শুরু করেছে। অনেকেরই অনেক গোছানো পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে নিঃসঙ্গ বসে থাকলেও তাঁর খাওয়া-দাওয়া আর বাসস্থান নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। এবার অনেক আমেরিকানকেই বড়দিন আর নববর্ষ পালনে সংযত থাকতে হয়েছে। বাসাভাড়া পরিশোধের চিন্তায় আতঙ্কিত হতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে প্রায় ৮ লাখ আমেরিকান সরকারি কর্মচারী ট্রাম্পের এই অযৌক্তিক গভর্নমেন্ট শাটডাউনের শিকার। নিম্ন আয় বা মধ্য আয়ের যেসব কর্মচারীর পে-চেক টু পে-চেক জীবন ধারণ করতে হয়, তাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। কারণ তাদের বাড়িভাড়া, বাড়ির মর্টগেজ, গাড়ির ইন্স্যুরেন্স, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল এবং গ্রোসারির খরচে তো আর শাটডাউনের কোনো সুযোগ নেই।
দেশের কোনো মানুষই গভর্নমেন্ট শাটডাউন চায় না। কাজের বিনিময়ে বেতন পাওয়া যাবে না, তা কেউই চায় না। ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান, গ্রিনপার্টি—তা সে যেই পার্টিরই সমর্থক হোক না কেন সবারই অর্থ প্রয়োজন। ট্রাম্প ঘোষিত এই শাটডাউনের পেছনের গল্পটা সব আমেরিকানই কম–বেশি জানেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এজেন্ডা পূরণ করতে এই নাটকীয় শাটডাউনের অবতারণা করেছেন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে এলেও এখনো তিনি এই দেয়াল নির্মাণে কংগ্রেস থেকে পূর্ণাঙ্গ তহবিল আদায় করতে পারেননি। তবে এবার বিষয়টির হেস্তনেস্ত করে ছাড়বেন বলেই যেন মনস্থ করেছেন তিনি। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে কংগ্রেস তহবিল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার অচল করে দেন এই অদূরদর্শী প্রেসিডেন্ট। কারণ ট্রাম্পের দাবির অর্থের বিল নিয়ে সিনেট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময় অবশ্য ট্রাম্প এই দেয়াল মেক্সিকোর অর্থে নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁর নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্লোগানই ছিল ‘মেক মেক্সিকো পে ফর দ্য ওয়াল’। এর আগে গত মার্চেও ট্রাম্প অনুরূপ হুমকি দিয়েছিলেন। তবে সেবার এই হুমকি দেওয়া হয়েছিল অভিবাসন আইন পরিবর্তনের কথা বলে। আর গত জানুয়ারিতে অভিবাসন-সম্পর্কিত জটিলতার কারণেই অল্প সময়ের জন্য সরকারে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল।
মেক্সিকো সংলগ্ন সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি ডলার চেয়েছেন ট্রাম্প। দেয়াল নির্মাণের পুরো খরচ মেক্সিকো সরকার বহন করবে—ট্রাম্পের এই দিবাস্বপ্ন বা বালখিল্য আবদারকে মেক্সিকো সরকার গোড়াতেই নাকচ করে দেয়। এরপর ট্রাম্প এই বড় অঙ্কের বিলটি সিনেটে পাশ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। এই বিষয়ে ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে সিনেটে বিলটি পর্যাপ্ত ভোট না পেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপরই সরকারি সেবা বন্ধ করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এরপর ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিনেটের সব অধিবেশন মুলতবি ছিল।
ডেমোক্র্যাটদের দাবি, ট্রাম্পকে অবশ্যই দেয়াল নির্মাণের কথা বাদ দিতে হবে।
গত ২১ ডিসেম্বর ভোটের আগে দেয়ালটি নিয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছিল ডেমোক্র্যাটরা। তবে তাতে ট্রাম্পের দাবি করা অর্থ তহবিলের কথা উল্লেখ ছিল না। এতে ক্ষিপ্ত ট্রাম্প বলেন, তিনি ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন না। এদিকে, সরকারি সেবা আবার চালু হতে হলে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। যদিও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মতে, দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে।
সরকারে অচলাবস্থার কারণে ১৫টি সরকারি বিভাগের নয়টিই বন্ধ রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিবহন ও বিচার বিভাগ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। নাগরিকেরা এসব মন্ত্রণালয়ের অধীন কোনো সেবা গ্রহণ করতে পারছেন না। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারি পার্ক ও বনাঞ্চলও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় হাজার হাজার সরকারি কর্মচারীকে বিনা বেতনে কাজ করতে হচ্ছে। অন্যথায় সাময়িক ছুটিতে থাকতে হবে। চলতি বছর এ নিয়ে মোট তিনবার সরকারে অচলাবস্থার দেখা দিল।
এরই মধ্যে গত ২২ ডিসেম্বর সিনেটে নজিরবিহীন এক অধিবেশনের আয়োজন করা হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অধিবেশনটি মুলতবি ঘোষণা করা হয়। আমেরিকার সরকারি কার্যক্রমের অচলাবস্থার দ্বিতীয় দিনে সিনেট অধিবেশনে আবার এই ভোটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
এই অচলাবস্থার জন্য ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান নেতারা একে অপরকে দায়ী করছেন। রিপাবলিকান শীর্ষ নেতা মিচ ম্যাককালাম ডেমোক্র্যাটরা ‘দায়িত্বহীন রাজনৈতিক খেলা’ খেলছেন বলে অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট নেতারা চান, বাজেট বিলের অংশ হিসেবে অভিবাসনের বিষয়ে সমঝোতায় আসবেন ট্রাম্প।
সিনেটের নিয়ম অনুযায়ী, এই বিল পাস করতে হলে সিনেটের ১০০ সদস্যের মধ্যে ৬০ জনের সমর্থন লাগবে। সেখানে রিপাবলিকান সিনেটরের সংখ্যা ৫১। তারা ইতিমধ্যে বিল পাস করাতে আগের দফায় ভোট দিয়েছিলেন। তাই বাজেট বিল পাস করাতে কমপক্ষে ৯ জন ডেমোক্র্যাট সিনেটরের ভোট দরকার। এ অবস্থায় ডেমোক্র্যাটদের নিজের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে রাজি করানোর বদলে উল্টো ঝগড়া উসকে দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এক টুইটবার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘মার্কিন সামরিক বাহিনী ও সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য রিপাবলিকানরা লড়ে যাচ্ছেন দেখে তিনি খুব আনন্দিত। ডেমোক্র্যাট সিনেটররা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসীদের বন্যা বইয়ে দিতে চান।’
আমেরিকায় অর্থবছর শুরু হয় অক্টোবরের প্রথম দিন থেকে। চলতি অর্থবছরে এ নিয়ে তিনবার সাময়িক বাজেট পাস করে প্রশাসনে অর্থায়ন অব্যাহত রাখতে হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো পাস করা সাময়িক বাজেটের মেয়াদ গত ডিসেম্বর রাত ১২টায় শেষ হয়েছে। এর ফলে অনিশ্চয়তায় পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষা, বিচার, অর্থ, পর্যটন, রাজস্ব, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ১০ লাখ কর্মী। নতুন বাজেট পাস না হওয়া পর্যন্ত এসব কর্মীকে সাময়িকভাবে অবৈতনিক ছুটিতে যেতে হবে। দপ্তরগুলোর কার্যক্রমেও স্থবিরতা দেখা দেবে। অভিবাসন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কট্টর নীতি এবং রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির রশি টানাটানিতে বাজেট পাস হয়নি। ট্রাম্প এ জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করে বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের পক্ষ নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে জিম্মি করেছে।
স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসের মতে, সরকারে অচলাবস্থার ফলে মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি সপ্তাহে ৬৫০ কোটি ডলার। সংস্থাটি বলেছে, বাজেটের অভাবে সরকার বেতন না দিলে কর্মীরা ব্যয় করতে পারে না। এতে ব্যবসায়ের ক্ষতি হয় এবং বেসরকারি খাতের কর্মজীবীরা আয় বঞ্চিত হয়। আবার খুচরা বিক্রির দোকানে কেনাকাটা কমলে সরকার কর থেকে বঞ্চিত হয়। আর সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হ্রাসে ব্যাহত হয় কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি।
অচলাবস্থা দেখা দেবে হোয়াইট হাউসেও। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউসে মোট কর্মী ১ হাজার ৭১৫ জন। এর মধ্যে এক হাজারের বেশি কর্মীকে ইতিমধ্যেই অবৈতনিক ছুটিতে যেতে হয়েছে বলে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বলেন, প্রতিরক্ষা বিভাগের অসামরিক কর্মীরা ছুটিতে যাওয়ায় দাপ্তরিক কার্যক্রমের পাশাপাশি যুদ্ধজাহাজ ও জঙ্গি বিমানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মার্কিন কর বিভাগের ৯০ ভাগ কর্মীকে অবৈতনিক ছুটি দিতে হবে। এর ফলে ট্যাক্স রিফান্ড ও অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রশাসনের কর্মীদের ছুটিতে পাঠানোয় সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর, আয় ও অন্যান্য তথ্য যাচাই ব্যাহত হবে এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নতুন ঋণ প্রক্রিয়াকরণ থেমে যাবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট আলোচনার সময় ট্রাম্পের একটি ঘোষণার জেরে কংগ্রেসে অচলাবস্থা শুরু হয়। গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) কর্মসূচির মেয়াদ না বাড়ানোর ঘোষণা দেন। ড্রিমারস প্রোগ্রাম নামে পরিচিত এই কর্মসূচি বন্ধ হলে হুমকিতে পড়বে শৈশবে অবৈধভাবে আমেরিকায় আসা সাত লাখ অভিবাসীর জীবন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এসব অভিবাসীকে সুরক্ষা দিতে ২০১৩ সালে পাঁচ বছরের জন্য কর্মসূচিটি চালু করেন।
বাজেট অনুমোদনের শর্ত হিসেবে ডেমোক্র্যাটরা ড্রিমার কর্মসূচির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা অভিবাসন ইস্যুতে ছাড় দিতে রাজি হননি। দুপক্ষের দর-কষাকষি ও সমঝোতার মধ্যে অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার কংগ্রেসে স্বল্পমেয়াদি বাজেট পাস হয়েছে। ড্রিমারস কর্মসূচির মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। মেয়াদ না বাড়লে এর আওতায় সুরক্ষা পাওয়া সাত লাখ মানুষ গ্রেপ্তার ও আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়বে। চতুর্থবারের মতো সাময়িক বাজেট পাসের আগে ডেমোক্র্যাটরা কর্মসূচিটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রশ্নে অনমনীয় অবস্থান নেন। বিকল্প হিসেবে তারা চার সপ্তাহের পরিবর্তে দুই সপ্তাহের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের পরামর্শ দেন, যাতে আরেকটি প্রস্তাবনা অনুমোদনের আগে ড্রিমার ইস্যুতে দর-কষাকষি করা যায়।
রিপাবলিকানরা চার সপ্তাহের বাজেট নিয়েও অনমনীয় অবস্থান নেন। ড্রিমারস কর্মসূচিটি আলাদা আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে তাঁরা বলেছেন, বাজেটের সঙ্গে অভিবাসন আলোচনা জুড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। দুপক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে ২১ ডিসেম্বর শেষ মুহূর্তে হোয়াইট হাউস থেকেও সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিনেটে ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমারকে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। দুজনের আলোচনায় ট্রাম্প ড্রিমার ইস্যুতে কিছুটা নমনীয় হওয়ার আশ্বাস দেন বলে হোয়াইট হাউসের একটি সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে। বৈঠক শেষে এক টুইটে ট্রাম্প নিজেও সমঝোতা হচ্ছে বলে জানান। কিন্তু সিনেটর শুমার হোয়াইট হাউস থেকে ক্যাপিটল হিলে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় হোয়াইট হাউস থেকে আবার তাকে ফোন করা হয়। হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলি তাঁকে জানান, ড্রিমার নিয়ে আবারও আলোচনা করতে হবে। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে সিনেটরের দেওয়া পরামর্শ ‘বেশি উদার’ বলেও কেলি মন্তব্য করেন। হোয়াইট হাউস থেকে ডেমোক্র্যাট নেতাকে এ বার্তা দেওয়ার পর সিনেটে আর কোনো সমঝোতা সম্ভব হয়নি।
সিনেটে ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার এই অচলাবস্থাকে ‘ট্রাম্প শাটডাউন’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘মার্চ থেকে সাত লাখ স্বপ্নবাজ তরুণের জীবন বিপন্ন হবে জেনে আমরা ছাড় দিতে পারি না।’ অন্যদিকে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, মার্কিন নাগরিকেরা দেখেছেন— কারা সরকারকে সচল রাখতে চায়, আর কারা নাগরিকদের স্বার্থের চেয়ে অভিবাসীদের বেশি প্রাধান্য দিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স আবার এই শাটডাউনকে ‘শুমার শাটডাউন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, যারা এ অবস্থা সৃষ্টি করেছেন, তারা আইনপ্রণেতা নন, বরং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ও পরাজয়মুখী। তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন নাগরিকদের জিম্মি রাখা অবস্থায় আমরা অবৈধ অভিবাসীদের মর্যাদা নিয়ে আলোচনায় বসতে পারি না।’
বড়দিনের দিন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছিলেন, অনেক ফেডারেল কর্মচারীই এই শাটডাউনকে সমর্থন করছে। তাঁর ভাষায়, ‘অনেক ফেডারেল কর্মচারীই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছে, যত দিন পর্যন্ত দেয়াল নির্মাণের বাজেট না পাওয়া যায়, তত দিন শাটডাউন চলুক।’