ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত চক্র আবারও সক্রিয়

বর্তমান সময়ে সংসারের যাবতীয় খরচসহ নানা কেনাকাটার নিরাপদ একটি উপায় ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার। বড় কোনো বিপদ-আপদেও কাজে লাগে ক্রেডিট কার্ড। অনলাইনে কেনাকাটার জন্য ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অথচ এই ক্রেডিট কার্ড নিয়ে স্বস্তিতে নেই ব্যবহারকারীরা। সক্রিয় জালিয়াত চক্রের হাতে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। অনেকেই পড়ছেন নানা ঝামেলায়।
কয়েক বছর আগে নিউইয়র্কে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ব্যাপক আকার ধারণ করে। স্টোর, অনলাইন অর্ডার, গ্যাস স্টেশন, এয়ার টিকিট, গাড়ি কেনার সময় ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি মারাত্মক আকার ধারণ করে। জালিয়াত চক্র হাতিয়ে নেয় অনেকের ব্যক্তিগত ক্রেডিট। পুলিশ, এফবিআইসহ সব গোয়েন্দা সংস্থা ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করে সর্বত্র। জালিয়াত চক্রের রাগব-বোয়ালসহ ধরা পড়ে অনেকেই। এর মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে ধরা পড়েন। বিচারে বিভিন্ন মেয়াদে কয়েকজনের সাজা হয়েছে। কয়েকজনকে সাজা শেষে আমেরিকা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতর মামলা থেকে রেহাই পেতে কেউ কেউ আমেরিকা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে বা কানাডা চলে গেছেন।

বাংলাদেশি কমিউনিটির এমন কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তি আছেন যাঁরা ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শর্ত সাপেক্ষে তাঁরা কারাগারের বাইরে আছেন। তাঁদের পাঁচ বছর প্রতি মাসে নিয়মিত থানায় হাজিরা দিতে হচ্ছে। মাসিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশকে অবহিত করতে হয়। জালিয়াতির জন্য ধরা পড়া অনেকের শরীরেই জিপিএস চিপস লাগানো। তাদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরে রাখা হয়। তাঁদের নিউইয়র্ক নগরের বাইরে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। সাজাপ্রাপ্তরা পুলিশের নজরে থাকলেও এদের অর্থবিত্তের দাপট এখনো দেখা যায়। অনেকেই ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে আমেরিকায় অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। কেউ একাধিক সুপারমার্কেটের মালিক হয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন।
ইদানীং অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত চক্র আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ছোট ছোট স্টোর অথবা যেকোনো জায়গায় একাধিকবার ক্রেডিট কার্ড সুইপ না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যতবার কার্ড সুইপ হবে ততবারই চার্জ হবে। যে সব প্রতিষ্ঠান একের অধিক ক্রেডিট কার্ড চার্জ করতে বলবে, এরা অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণা করছে। কেউ যদি বলে কার্ড চার্জ হয়নি, সঙ্গে সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড কাস্টমার সার্ভিসে কল করলেই বলে দেবে ওই স্টোরের চার্জ সম্পন্ন হয়েছে কি না।
অনেকেই ক্রেডিট কার্ডের ছোট ছোট চার্জের তেমন খেয়াল করেন না। মনে করেন, পাঁচ/দশ ডলারের বিষয় অথবা বিল আসলে দেখব। কিন্তু মাসের পরে এসব আর স্মরণে থাকে না। যেসব ব্যবসায়ী ইচ্ছা করে এসব করে তারা সুন্দর একটি হাসি দিয়ে বলবে, যদি দুবার চার্জ হয়ে যায় তবে ক্রেডিট কার্ডের বিল নিয়ে আসবেন। আমরা ঠিক করে দেব। এভাবে তারা একজন গ্রাহককে বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অথচ তার সততা থাকলে মুহূর্তের মধ্যেই সে বিষয়টির সমাধান করে দিতে পারে। ক্রেডিট কার্ড মেশিনে যুক্ত আছে ডিলিটের বোতাম। সে চাপ দিলেই সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু তা না করে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে।
১৪ জানুয়ারি সকালে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে জ্যামাইকার ১৬২ স্ট্রিটের একটি স্টোরে এমন একটি ঘটনা ঘটে। ব্যবসায়ী একজন গ্রাহকের কার্ড দুবার চার্জ করে। প্রথম চার্জে ছোট্ট একটি রসিদ বেরিয়ে আসে। দোকানের মালিক গ্রাহককে বললেন, কার্ডের চার্জটি সম্পন্ন হয়নি। ৮ দশমিক ৬২ ডলারের চার্জ। ওই স্টোরের গ্রাহক ছিলেন বাঙালি এক নারী। তাঁর সঙ্গে স্টোরের কর্মীর কিছু যুক্তিতর্কের পর মালিক এসে বলেন, মাসের শেষে বিল নিয়ে আসলে ডিলিট করে দেবেন তিনি। মেশিনে ডিলিট বোতাম ব্যবহার করার কথা বললে, মালিক সেটা সম্ভব নয় বলে জানান। ঘরে এসে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিকে কল দিলে তারা নিশ্চিত করে, ওই একই স্টোরে কার্ড দুবার চার্জ করা হয়েছে।
এ অবস্থায় ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো যেকোনো কেনাকাটায় কার্ড চার্জে কার্ড মালিকদের প্রতি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। প্রতারকচক্রের হাত থেকে বাঁচতে হলে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।