ট্রাম্পের হম্বিতম্বি এক রাতেই শেষ

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার সকালে জানিয়েছিলেন, তিনি পূর্বনির্ধারিত তারিখে (২৯ জানুয়ারি) কংগ্রেসে তাঁর বর্ষশেষের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ দেবেন। এটি তাঁর শাসনতান্ত্রিক দায়িত্ব। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর।

কিন্তু রাত পোহানোর আগেই ট্রাম্পের এই আস্ফালন শেষ হয়ে যায়। কংগ্রেসের ৭৮ বছর বয়সী ডেমোক্রেটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির কাছে নতিস্বীকার করেছেন তিনি। সবশেষ ট্রাম্প জানিয়েছেন, ফেডারেল সরকারের কর্মবন্ধ বা শাটডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর ভাষণ দিচ্ছেন না।

নাটকের শুরু বুধবার সকাল থেকে। প্রথমে ট্রাম্প এক চিঠিতে ভাষণদানের ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্ত জানান পেলোসিকে।

ট্রাম্পের চিঠি হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেক চিঠিতে পেলোসি সরাসরি জানিয়ে দেন, প্রেসিডেন্ট যেখানে খুশি ভাষণ দিতে পারেন, কিন্তু তাঁর নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ভবনে নয়।

২৯ জানুয়ারি ট্রাম্পের এই ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। তার আগে চিঠি দিয়ে পেলোসি কর্মবন্ধের কারণে নিরাপত্তা–সংকট দেখা দিয়েছে মর্মে ভাষণ বিলম্বিত করার প্রস্তাব করেন।

পেলোসির এ কথা অগ্রাহ্য করে ট্রাম্প কংগ্রেস ভবনে এসে ভাষণদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু ট্রাম্প চাইলেই কংগ্রেসে এসে তাঁর বার্ষিক ভাষণ দিতে পারেন না। এ জন্য তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে কংগ্রেসকে একটি প্রস্তাব পাস করতে হবে। পেলোসি জানিয়ে দেন, এই মুহূর্তে তেমন কোনো প্রস্তাব উত্থাপনের ইচ্ছা তাঁর নেই। তাঁর বক্তব্য—অন্য কিছুর আগে কর্মবন্ধ শেষ করতে হবে।

ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে পেলোসি বলেন, ‘আমি আশা করি, কর্মবন্ধ শেষ হলে উভয়ের সুবিধামতো সময়ে আপনি এই ভাষণ দেবেন।’

একাধিক ভাষ্যকার বলেছেন, পেলোসির আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্প যে কংগ্রেসে এসে ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তা ছিল ডেমোক্রেটিক স্পিকারের প্রতি ছুড়ে দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ।

ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ট্রাম্পের ভাবখানা ছিল, আমন্ত্রণ থাকুক বা না থাকুক, তিনি আসছেন। পেলোসি পারেন তো তাঁকে থামাক। তাঁর সে কথায় গুরুত্ব না দিয়ে পেলোসি তাঁকে ঠিকই থামিয়ে দিলেন।

‘ভাষণ হবে না’—এই মর্মে বুধবার পেলোসির চিঠি পাওয়ার পর হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, ট্রাম্প ঠিক ২৯ তারিখেই ভাষণ দেবেন। ঠিক কোথায় এই ভাষণ তিনি দিতে পারেন, সে বিষয় তারা খতিয়ে দেখছে। জানানো হয়, ট্রাম্প ওয়াশিংটনের বাইরে সম্ভবত মেক্সিকোর সীমান্তবর্তী কোনো শহরে এই ভাষণ দিতে পারেন।

কয়েক ঘণ্টা পর সুর বদলে ফেলেন ট্রাম্প। বুধবার রাতে এক টুইটে ট্রাম্প জানান, কর্মবন্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিচ্ছেন না।

ট্রাম্প স্বীকার করেন, কখন স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ হবে, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার স্পিকার পেলোসির। আর পেলোসি বলেছেন, কর্মবন্ধ শেষ হলেই এই ভাষণ হবে।

ট্রাম্প জানান, কংগ্রেসের বাইরে অন্য কোথাও এই ভাষণ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত তিনি বাতিল করেছেন। কারণ, প্রতিনিধি পরিষদে এই ভাষণের যে ঐতিহ্য ও গাম্ভীর্য রয়েছে, অন্য কোথাও তা পাওয়া সম্ভব নয়।

বামপন্থী মহলে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত পেলোসির দৃঢ় নেতৃত্বের মুখে নতিস্বীকার বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এক ভাষ্যকার লিখেছেন, ট্রাম্প সাদা পতাকা উড়িয়ে পেলোসির কাছে আত্মসমর্পণ করলেন।

আরও পড়ুন: