বিশ্বে উষ্ণতা বাড়লে বাইরে এত ঠান্ডা কেন?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে বিশ্বে। গ্রীষ্মকালে গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। আবার ভয়াবহ ঠান্ডায় জবুথবু জীবন। সবকিছুই বেশি বেশি। এই যেমন সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির চেয়ে অনেক বেশি নিচে নেমে গেছে। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে। বলছেন, বিশ্বে উষ্ণতা বাড়লে শীতে এত ঠান্ডা পড়ে কেন? এই দলে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

২৮ জানুয়ারি করা একটি টুইটে প্রেসিডেন্ট এমন কথাই বলেছেন। টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সুন্দর মধ্য পশ্চিমাংশে তাপমাত্রা মাইনাস ৬০ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও ঠান্ডা পড়তে পারে। অল্প সময়ের জন্যও মানুষ বাইরে বের হতে পারছে না। বৈশ্বিক উষ্ণতার কী হলো? দোহাই লাগে, তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। তোমাকে আমাদের খুব প্রয়োজন।’ ট্রাম্পের করা টুইট নিয়ে চলছে আলোচনা–সমালোচনা।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই টুইটে লাইক দিয়েছেন প্রায় দুই লাখ টুইটার ব্যবহারকারী। এটি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। কমেন্ট করেছেন এক লাখের বেশি মানুষ। সেসব কমেন্টে বেশির ভাগ মানুষ প্রেসিডেন্টকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে একটি ধারণা দেওয়া চেষ্টা করেছেন। আবহাওয়া আর জলবায়ু যে এক বিষয় নয়, সেটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা করেছেন বেশির ভাগ মন্তব্যকারী।

বিশ্বে উষ্ণতা বাড়ার পরও ঠান্ডা কেন বেশি পড়ছে? এর উত্তর নিহিত আছে স্থানীয় আবহাওয়া ও জলবায়ুর পার্থক্যের মধ্যে। দীর্ঘ মেয়াদে বায়ুমণ্ডল কীভাবে কাজ করে সেটা জলবায়ু ব্যাখ্যা করে। স্বল্প সময়ের মধ্যে কী হতে যাচ্ছে, সেটা আবহাওয়া বর্ণনা করে। এক অর্থে বলা যায়, আবহাওয়ার দীর্ঘ মেয়াদের সমষ্টিই হলো জলবায়ু। টুইটকারীরা প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি স্পষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আর দিনের আবহাওয়া দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা না করারও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

নিউইয়র্ক টাইমস ট্রাম্পের বোঝাপড়ার জন্য সুন্দর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। সেটা হলো আপনার পকেটে আজ কত টাকা আছে, সেটা আবহাওয়া। আর আপনার মোট কত সম্পদ আছে, সেটা জলবায়ু। একজন গরিব ব্যক্তি হয়তো হঠাৎ কিছু টাকা কুড়িয়ে পেলেন, তাতে কিন্তু তিনি বড়লোক হয়ে গেলেন না। আবার একজন ধনকুবের ভুলে তাঁর মানিব্যাগ বাসায় ফেলে গেলেও তিনি গরিব হয়ে যাবেন না। অর্থাৎ দীর্ঘ মেয়াদে কী হবে, সেটাই বিষয়।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের উষ্ণতা দুই থেকে সাত ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়তে পারে, যদিও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কত দ্রুত বাড়বে, এর ওপর সেটি নির্ভর করছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞান অস্বীকার করেন। বরং এর পেছনে খারাপ লোকের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে মনে করেন। তাদের সতর্ক করে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন।

২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটে শতাধিকবার ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ও ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন। নির্বাচনের আগে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে ধোঁকাবাজি বলেছেন। চীনারা এটাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। গত বছর প্রেসিডেন্ট এই ভাষ্য থেকে সরে যান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না এটা ধোঁকাবাজি। আমার মনে হয়, এখানে একটু পার্থক্য আছে। তবে এটা মানবসৃষ্ট, সেটা আমি জানি না।’ প্রেসিডেন্ট যা–ই বলুন না কেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও শতাধিক বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান একমত হয়েছে যে বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য প্রাথমিকভাবে মানুষই দায়ী।