ট্রাম্পের ঐক্যের ডাক ১২ ঘণ্টাও স্থায়ী হলো না

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার তাঁর স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের প্রতিহিংসা, প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১২ ঘণ্টা পার না হতেই ট্রাম্প তাঁর সেই ডাক ভুলে নিজেই কংগ্রেসের ডেমোক্রেটিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বাগ্‌যুদ্ধে নেমে পড়েছেন।

প্রেসিডেন্টের ক্ষোভের মূল কারণ, ডেমোক্রেটিক-কংগ্রেসের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির প্রধান এডাম শিফ ট্রাম্পের আর্থিক লেনদেন নিয়ে নতুন তদন্ত শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন।

ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁর বা তাঁর পরিবারের আর্থিক বিষয়ে কোনো তদন্ত তিনি সহ্য করবেন না।

ট্রাম্পের প্রথম দুই বছর রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে ছিল কংগ্রেসের উভয় কক্ষ। তাই এ ব্যাপারে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন অবস্থা বদলে গেছে।

গতকাল বুধবার এডাম শিফ জানিয়েছেন, শুধু রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যবসায়িক লেনদেন নয়, অন্য যেকোনো বিদেশি সরকার বা সংস্থার সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়েও তাঁর কমিটি তদন্ত করবে। ট্রাম্প বা তাঁর পরিবার অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত কি না, সে–সংক্রান্ত সব প্রতিবেদন তাঁরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবেন।

শিফ জানান, ট্রাম্পের কার্যকলাপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কোনো পর্যায়ে বিপদগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা তাঁর কমিটির এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে।

গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়ে এডাম শিফকে একজন ‘ভাড়াটে রাজনীতিক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই লোকটার (শিফ) একমাত্র লক্ষ্য নিজের জন্য নাম কেনা।

গোয়েন্দা কমিটি তাঁর (ট্রাম্প) ব্যাপারে যে তদন্তের কথা ঘোষণা করেছে, তার প্রতিবাদ করেন ট্রাম্প। তাঁর ভাষ্য, এই তদন্তের একটাই লক্ষ্য—দেশের প্রেসিডেন্টকে হয়রানিতে ফেলা। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ট্রাম্পের হুমকিতে অবশ্য পিছু হটার পাত্র নন শিফ। তাৎক্ষণিক জবাবে তিনি বলেছেন, বোঝাই যাচ্ছে ট্রাম্প ভয় পেয়েছেন। ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর ঘনিষ্ঠ অনেক সহকর্মী এখন হয় জেলে, নয়তো তদন্তকাজে এফবিআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন।

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও তদন্তের ব্যাপারে শিফকে সমর্থন জানিয়েছেন। মঙ্গলবারের ভাষণে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটরা যদি তাঁর সহযোগিতা চান, তাহলে তদন্তের পথ ছাড়তে হবে। গতকাল সে কথা উল্লেখ করে স্পিকার পেলোসি বলেন, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এমন কোনো হুমকি দেওয়া প্রেসিডেন্টের জন্য মোটেই শোভন নয়। প্রেসিডেন্টের কার্যাবলির ওপর নজরদারি কংগ্রেসের শাসনতান্ত্রিক দায়িত্ব। কংগ্রেস সে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর।

কংগ্রেসের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটি ইতিমধ্যে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে শুনানির জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ট্রাম্প তাঁকে ও তাঁর পরিবারের প্রতি হুমকি দিচ্ছেন—এই অজুহাতে কোহেন কংগ্রেসের সামনে শুনানিতে আপত্তি করেছিলেন। পরে আনুষ্ঠানিক সমন পেয়ে তিনি শুনানিতে আসতে সম্মত হন।

কোহেনের মাধ্যমেই ট্রাম্প মস্কোতে ট্রাম্প টাওয়ার নির্মাণের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছিলেন। এই টাওয়ারের ব্যাপারে রুশ সরকার, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কোনো গোপন লেনদেন হয়েছে কি না, তা জানতে আগ্রহী শিফ ও তাঁর কমিটি।

ট্রাম্পের আয়কর হিসাব সংগ্রহেও কংগ্রেস আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রাজস্ব বিভাগ নিরীক্ষা করছে—এই যুক্তিতে ট্রাম্প এখনো তাঁর আয়করের হিসাব প্রকাশ করেননি। এই হিসাব পাওয়া গেলে ট্রাম্পের আর্থিক উৎস ফাঁস হবে—সে কারণে বামঘেঁষা ডেমোক্রেটিক সদস্যরা অবিলম্বে হিসাব তলবের দাবি তুলেছেন। তবে কংগ্রেসের আয়-ব্যয়বিষয়ক কমিটির প্রধান রিচার্ড নিল এই ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করার পরামর্শ দিয়েছেন।