আবার সারচার্জের ফাঁদে ক্যাবিরা

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ম্যানহাটনে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে একটি সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ম্যানহাটনে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে একটি সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়। ছবি: রয়টার্স

নিউইয়র্ক নগরের গণপরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে নগর ও অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে নিউইয়র্ক সিটি ট্যাক্সি ও উবারের কনজেশন সারচার্জ বা বাড়তি করারোপ করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আবার যাত্রী ভাড়ায়। বাড়ানো হয়েছে ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া। তবে এই বাড়তি কর ও যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ক্যাবচালকেরা।
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা থেকে নগরের ট্যাক্সিক্যাবের সেবার ভাড়া আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থাকে করের আওতায় আনতে এবং মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন অথোরিটিকে (এমটিএ) সাহায্য করার কথা বলে এই নিয়ম চালু করা হয়েছে।
এখন থেকে ম্যানহাটনের ৯৬ স্ট্রিটের দক্ষিণে চালানো ট্যাক্সিক্যাবের মধ্যে উবার, লিফট ও অন্যান্য সমমানের গাড়িকে ২ দশমিক ৭৫ ডলারের সারচার্জ এবং হলুদ ক্যাবকে অতিরিক্ত ২ দশমিক ৫০ ডলার বাড়তি কর দিতে হবে। এ ছাড়া শেয়ার পুলের জন্য ০ দশমিক ৭৫ ডলার বাড়তি ফি দিতে হবে।
নতুন করে বর্ধিত এই কর গ্রাহকদের জন্য বাড়তি ভাড়ার বোঝায় রূপ নিয়েছে। এটা মূলত গ্রাহকের কাছ থেকে চালকের হাত হয়ে অঙ্গরাজ্য সরকার পাবে। এমটিএকে আরও উন্নত করে তুলতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে বলে অঙ্গরাজ্য সরকারের তরফে বলা হচ্ছে। 

এই সারচার্জ ট্যাক্সিক্যাব চালক ও মালিকদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে। তারা বলছেন, এটি তাদের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি ক্যাবচালকদের সাম্প্রতিক আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে তারা এটিকে ‘আত্মহত্যা কর’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ক্যাবচালকেরা নগর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। যার ফলে সাময়িকভাবে সারচার্জ বন্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। মামলাটি আবার আদালতে তোলা হয় এবং ৩১ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক মামলাটি বাতিল করার কাজ এগিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এমটিএকে যানজট মুক্ত এবং আরও দ্রুতগতির করে তুলতে এই তহবিল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি খুবই প্রয়োজনীয়। তিনি একটি হিসাব দিয়ে বলেন, এই সারচার্জ নগরের অর্থ তহবিলে বছরে প্রায় ৪০ কোটি ডলার জোগান দেবে। কুমোর মতে, কেবল সাবওয়েতে বিলম্বের কারণে প্রতিদিন মানুষের ১০ লাখ ডলার নষ্ট হয়।
নিউইয়র্ক নগরকে যানজটমুক্ত করতে গিয়ে সব মোটরযানকে এখন থেকে বাড়তি মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে নগরের যানবাহন চালকদের জন্য কনজেশন সারচার্জ দেওয়ার আইনটি প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু অস্থায়ী প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণের আদেশের কারণে এই আইন বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়।
নতুন করে বাড়তি করারোপের প্রতিবাদ করছেন ক্যাবচালকেরা। তাঁরা বাড়তি করারোপের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ম্যানহাটনের সড়কে বিক্ষোভ করেছেন। তারা ৩ ফেব্রুয়ারি গভর্নর কুমোর ম্যানহাটন অফিসের বাইরে বিক্ষোভ করেন। এতে ক্যাবচালকেরা ‘নো মোর ট্যাক্স অন ড্রাইভারস ব্যাক’ বলে স্লোগান দেন। র‍্যালিতে অংশ নেওয়া দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ম্যানহাটনে ক্যাব চালানো ৭৫ বছর বয়সী ইউরিয়া লিনডাউইর বলেন, ‘নগরে আমাদের “ক্যাশ কাও” হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের জন্য কর ব্যবস্থা সহজ করার পরিবর্তে উল্টো বাড়তি কর আমাদের পিঠে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ভৈরভি দেশাই গভর্নর কুমোকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এটি ট্যাক্সিক্যাব চালকদের পিঠে ছোরা মারার শামিল। ক্যাবচালকেরা বলছেন, যে সময়ে তারা বাড়তি ফি’র মুখে পড়ছেন, সে সময়ে ট্যাক্সি ব্যবসায় চরম মন্দাভাব বিরাজ চলছে। তারা আর্থিক কষ্টে আছেন। ক্যাবচালকেরা ফি বাড়ানোর এই আইনকে ‘সুইসাইডাল ট্যাক্স’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ক্যাব ব্যবসায় ভয়াবহ মন্দার কবলে পড়ে নিউইয়র্কে এরই মধ্যে তিনজন ট্যাক্সিক্যাব মালিক ও পাঁচজন চালক আত্মহত্যা করেছেন।