এবারে সমাজতন্ত্র বনাম ধনতন্ত্রের মার্কিন নির্বাচন

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

কার্ল মার্ক্সের জন্মের ২০০ বছর ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মৃত্যুর ৩০ বছর পর মার্কিন রাজনীতিতে সমাজতন্ত্র বনাম ধনতন্ত্র একটি প্রধান প্রসঙ্গ হয়ে উঠেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল অংশ খোলামেলাভাবেই সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি প্রস্তাব করছে। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টি ডেমোক্র্যাটদের এই ‘বামপ্রবণতা’কে পুঁজি করে ২০২০ সালের নির্বাচনকে সমাজতন্ত্র প্রশ্নে একটি গণভোট হিসেবে উপস্থিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে রিপাবলিকান পার্টি একটি বাধার দেয়াল। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে এটাই হবে তাঁদের প্রধান অস্ত্র।

উল্লেখ্য, কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে বামঘেঁষা অংশ ইতিমধ্যে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা’ ও জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ‘পূর্ণ সবুজ অর্থনীতি’ কর্মসূচির প্রস্তাব করেছে, যা রিপাবলিকানদের চোখে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থারই অন্য নাম। সমাজতন্ত্রের ওপর এই হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ বছর জানুয়ারিতে তাঁর ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে তিনি বলেন, আমেরিকা কখনোই সমাজতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে না। সম্প্রতি তিনি এমন কথাও বলেছেন, ‘পূর্ণ সবুজ কর্মসূচি নিয়ে যদি ডেমোক্র্যাটরা জেতে, তাহলে বলব, আমার হারাই উচিত।’

বিষয়টি নিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃবৃন্দ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অনেকেই বলছেন, বামঘেঁষা যে প্রস্তাব দলের প্রগতিশীল অংশ হাজির করেছে, মার্কিন জনগণ এখনো তার জন্য প্রস্তুত নয়। ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা’ ও ‘পূর্ণ সবুজ অর্থনীতি’র মতো কর্মসূচির পেছনে রয়েছেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-করতেজ ও তাঁর মতো সদ্য নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্যরা। ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে যাঁরা মনোনয়নপ্রত্যাশী, তাঁদের চারজন ইতিমধ্যে এই কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। দলের মধ্যপন্থী নেতারা বলছেন, সমাজতন্ত্র প্রশ্নে দল বিভক্ত হয়ে পড়ছে। এই কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হলে দল ট্রাম্পকে তো হারাতে পারবেই না, বরং সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ নির্বাচনে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

গত সপ্তাহে ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্যরা ভার্জিনিয়ায় তাঁদের বার্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন, তা হলো দলীয় ঐক্য। আদর্শগত প্রশ্নে বিভক্তির বদলে দলের সংসদীয় এজেন্ডার প্রতি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পাবে।

এই অবস্থায় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে একজন সর্বজনগ্রাহ্য মধ্যপন্থীকে খুঁজে নেওয়ার জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির ওপর চাপ বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই রকম একজন প্রার্থী হতে পারেন। সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুসারে, অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট বাইডেনকেই তাঁদের পছন্দ বলে জানিয়েছেন। দলের সবচেয়ে বামঘেঁষা প্রার্থী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স তাঁর চেয়ে ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে আছেন।

বাইডেন, যিনি এখনো দলীয় প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেননি, বলেছেন, তিনি বার্নি স্যান্ডার্সকে পছন্দ করেন, কিন্তু ‘আমি বার্নি নই’।