পণ্ডিত রামকানাইয়ের জন্মজয়ন্তী

রামকানাইয়ের জন্মজয়ন্তীতে সংগীত পরিবেশনা
রামকানাইয়ের জন্মজয়ন্তীতে সংগীত পরিবেশনা

বরেণ্য সংগীত সাধক পণ্ডিত রামকানাই দাশের ৮৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করে তাঁর গড়া সংগঠন সংগীত পরিষদ নিউইয়র্ক। দুদিনব্যাপী এই আয়োজনের প্রথম দিন গত ২৭ এপ্রিল ছিল দিনব্যাপী রামকানাইগীতি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন পণ্ডিত রামকানাই দাশের সুযোগ্য কন্যা কাবেরী দাশ। ২৮ এপ্রিল সংগীত পরিষদের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। বৈশাখ মাস হওয়ায় আগত সবাই এসেছিল পয়লা বৈশাখের লাল-সাদা পোশাকে। ছিল বিভিন্ন স্বাদ ও মুখরোচক খাবারের আয়োজন।
সুনামগঞ্জে জন্ম নেওয়া রামকানাই দাশের জীবনের শুরু হয়েছিল যাত্রা দলের তবলাবাদক হিসেবে। সংগীতের প্রতি তাঁর তীব্র ভালোবাসা তাঁকে করে তোলে সমৃদ্ধ ও সর্বজনীন। এক জীবনে তিন ধরনের সংগীতে তিনি ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। রামকানাই দাশ উচ্চাঙ্গসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত ও লোকসংগীত তিন বিভাগেই মুনশিয়ানা দেখান, যা ছিল একটি বিরল ঘটনা। প্রচারবিমুখ, অহংবোধশূন্য ও কঠোর অধ্যবসায়ী ছিলেন বলেই তিনি এই অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছেন। তাঁর লেখা ও সুর করা রামকানাইগীতিতে তাঁর জীবন ও দর্শনের পরিচয় মেলে।
গত ২৮ এপ্রিল মূল উৎসবের দিন শুরু হয় রামকানাই দাশকে নিয়ে লেখা ‘সংগীতের এক সাধক পুরুষ রামকানাই’ গানটির সমবেত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। সকালে পরিবেশিত এই গানের কথা লিখেছেন ড. তপন বাগচী ও সুর করেছেন কাবেরী দাশ। এতে অংশ নেন সফুল বড়ুয়া, ইরামনি দেবী, জারিফ হাসান, কামরুন্নাহার খানম, অনিতা মোদক, অভিজিৎ সিংহ, ঋতিকা দাশ, স্নিগ্ধ সম্প্রীতি, সামী স্পন্দন, আরিশা দাশ, জয়িতা নন্দী ও ধীমান শাহিদ।
তাহরিনা পারভীন প্রীতির উপস্থাপনায় প্রারম্ভিক পর্ব শুরু হয় শিশুদের পরিবেশনার মাধ্যমে। হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন সংগীত পরিষদের অধ্যক্ষ কাবেরী দাশ। তবলায় ছিলেন পিনুসেন দাশ। সুদীপ্তা ধরের গাওয়া রজনীকান্তের প্রার্থনা সংগীত দিয়ে এই পর্ব শুরু হয়। তারপর একে একে পরিবেশিত হয় দীপ্র তালুকদার, রাজিয়া সুলতানা, আরিশা হাসান, প্রিতম কুমার সিনহা ও রীদা নূরের গাওয়া ছড়া গান, মাজরেহা শাহিদের দেশাত্মবোধক গান, দয়িতা তালুকদারের রবীন্দ্রসংগীত, সামিয়া সুলতানা আধুনিক গান এবং অঙ্কিতা সরকার রামকানাই গীতি পরিবেশন করেন।
দ্বিতীয় পর্বে জয়িতা নন্দী, স্রোতি দাশ ও আফরিন খান অতুল প্রসাদের গান, আরিশা দাশ, স্নিগ্ধ সম্প্রীতি, মোহায়লা উদ্দীন ও অভিজিৎ সিংহ দ্বীজেন্দ্রগীতি, বাবিদা আহমেদ দেশাত্মবোধক গান, অমিত দে লোকগীতি ও অর্জুন দে শাহ আব্দুল করিমের গান পরিবেশ করে। তৃতীয় পর্বে ঋতিকা দাশ নজরুলসংগীত, শ্রাবন্তী দাশ রবীন্দ্রসংগীত, ধীমান শাহিদ শিতালং শাহের গান, স্বামী স্পন্দন ও নওরীন শাওলিন রামকানাই গীতি, সুতীব্র বড়ুয়া শাহ আব্দুল করিমের গান, স্বর্ণা রায় রজনীকান্তের গান, ওয়াহিদা শহীদ, ইমতিয়াজ লতিফ ও মনন হায়দার আধুনিক গান পরিবেশন করে। চতুর্থ পর্বে গান গেয়ে শোনান সংগঠনের সিনিয়র শিল্পীরা। ইরামনি দেবী, জারিফ হাসান, অনিতা মোদক ও শীলা রায় আধুনিক গান, সফুল বড়ুয়া পল্লিগীতি, কৃষ্ণা দেব রবীন্দ্রসংগীত, কামরুন্নাহার খানম সুবর্ণগীতি, নাওমি খান পল্লিগীতি ও নওরা খান নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানের শেষে পণ্ডিত রামকানাই দাশের নাতনি শ্রেষ্ঠা প্রিয়দর্শিনী তবলা লহরা ও সুকন্যা শৈলী প্রথমে একটি রামকানাই গীতি ও পরে একটি ধামাইল পরিবেশন করেন।