সাহিত্য একাডেমির ১০১তম আসর অনুষ্ঠিত

সাহিত্য একাডেমির ১০১তম আসরে অতিথি ও সদস্যরা। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন
সাহিত্য একাডেমির ১০১তম আসরে অতিথি ও সদস্যরা। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন

ঝুম বৃষ্টি সঙ্গে দস্যি হাওয়া। এমন বৃষ্টিভেজা দিনে দেড় ঘণ্টার পথ শেষে ট্রেন এসে থামে গন্তব্যে। শেষ বিকেলের নরম আবছা আলোয় বৃষ্টি জলে ঢাকা পিচঢালা পথ ধরে সাহিত্য একাডেমির ছিমছাম ঘরে গিয়ে দেখা গেল উপচে পড়া আনন্দের গল্প। একের পর এক লেখক, কবি, সাহিত্যিকেরা এমন প্রতিকূল পরিবেশেও পাখির মতো উড়ে এসে প্রাণের টানে জড়ো হতে থাকেন ঘরটিতে। যেখানে সবার চোখে নব সৃষ্টির ভেলা। বৃষ্টির ছাঁট তখন সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে ভোগান্তির বদলে রূপান্তরিত হয় ভালোবাসায়।
এমন গল্পের মতো বৃষ্টিস্নাত একটি দিনে জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্কের মাসিক ১০১তম সাহিত্য আসর। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।
কবিতার মাস এপ্রিল মাস। লুবনা কাইজারের আবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আবৃত্তিতে আরও যাঁরা অংশ নেন তাঁরা হলেন—নীরা কাদরী, কুমকুম সেন, মমতাজ বেগম সুমী, এম এ সাদেক ও আনোয়ারুল হক লাভলু।
১০১তম আসরে আলোচনায় যাঁরা অংশ নেন তাঁরা হলেন—হাসান ফেরদৌস, মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, ফেরদৌস সাজেদীন, হুসনে আরা, নিনি ওয়াহেদ, আদনান সৈয়দ ও সোনিয়া কাদের।
সাহিত্য পাঠের একটি পর্যায়ে লেখক হাসান ফেরদৌস তাঁর আলোচনায় বলেন, ‘কবিতার পাবলিক ফেস আছে। কবিতায় কবি প্রতিবাদ করেন। আজকের আসরে পঠিত কবিতাগুলোতে নুসরাতকে নিয়ে যে আবেগ প্রকাশ পেয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। কবির কাছে কোনো হাতিয়ার নেই। কবিতায় কবি তাঁর ক্রোধ প্রকাশ করেন৷ কবির গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিজস্ব কণ্ঠস্বর তৈরি করা। কবিতা বলতে হবে ইংগিতে পাঠক উন্মোচন করবে কবিতাকে। কবিতায় স্টেটমেন্ট তৈরি করতে নেই। কবিতার কথাগুলো বলতে হবে শিল্পের আড়াল দিয়ে।’
সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘আজ অন্য অনুষ্ঠান ছিল। সাহিত্য একাডেমির প্রতি টান অনুভব করায় এখানে চলে আসি। কবিতা যত ভালো, সুন্দর ঠিক ততটাই মারাত্মক। যাঁরা সৎ পথে চলে কবিতা তাঁদের জন্য সুন্দর হাতিয়ার, যাঁরা অসত্যের পথে থাকে কবিতা তাঁদের জন্য মারাত্মক।’
সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ বলেন, সাহিত্য একাডেমি অনেক দূর এগিয়েছে। নিয়মিত অনেক কাজ করে যাচ্ছে। সাহিত্য একাডেমিতে আসা নতুন লেখকদের দিকনির্দেশনার জন্য প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকেরা এগিয়ে আসুক।
অধ্যাপিকা হুসনে আরা বলেন, কবিতা বিজ্ঞানের চেয়েও শক্তিশালী। কবিরাই পারেন অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত সময়কে কাটিয়ে মানবিক হয়ে উঠতে।
লেখক আদনান সৈয়দ বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে সবার কবিতা শুনছিলাম। খুব ভালো লেগেছিল। শুনে আরও ভালো লাগছে সাহিত্য একাডেমি সামনের দিনগুলোতে উন্নতির জন্য নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ভালো যেকোনো বিষয়কেই আমরা সাদরে গ্রহণ করি।’ পথের পাঁচালির লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ভারতবর্ষ পত্রিকার সম্পাদকের মন্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাহিত্য একাডেমি এমন একটি জায়গায় যাক, যে জায়গা থেকে কোনো একদিন এমন লেখক সৃষ্টি হবে ৷
লেখক সোনিয়া কাদের বলেন, ‘সাহিত্য একাডেমিতে এসে প্রতি মাসে সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে একটা পূর্ণতার স্বাদ নিয়ে ঘরে ফিরে যাই।’ মে মাসের ১২ তারিখ সাহিত্য একাডেমি ব্রঙ্কস শাখার আয়োজনে উদ্‌যাপিত ইফতার পার্টির আয়োজনে সবাইকে নিমন্ত্রণ জানান তিনি।
আসরের সর্বশেষ আলোচক লেখক ফেরদৌস সাজেদীন সবাইকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজকের আসরে পঠিত কবিতাগুলো ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। কবি সময়ের সঙ্গে চলেন। সদ্য নুসরাতের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনাটি নিয়ে অনেকের কবিতায় আজ প্রতিবাদের অনুরণন দেখেছি। তাঁর একটা লেখা পাঠ শেষে তিনি বলেন, আজকের আসরে মনে হচ্ছে যেন উষা সংগীত শুনেছি।
এবারের আসরে যাঁরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন তাঁরা হলেন—কাজী আতীক, শাহীন ইবনে দিলওয়ার, দলিল রহমান, রানু ফেরদৌস, তাহমিনা খান, বেনজীর শিকদার, শাম্মি আক্তার হ্যাপি, কবিতা হোসাইন, স্বপ্ন কুমার, মাসুম আহম্মেদ, সালেহীন সাজু, সুরীত বড়ুয়া, আহম্মেদ হোসেন বাবু, আবদুস শহীদ, ম জাকির মিঁয়া, আবুল বাশার, হাবীবুর রহমান, রুপা খানম, পলি শাহীনা ও আসরের ছোট্ট বন্ধু তামান্না আহম্মেদ শান্তি।
আসরে আরও যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন—আবু সায়ীদ রতন, নাসির শিকদার, আল মাসুদ জীবন, সেলিম ইব্রাহীম, পারভীন বানু, সুলতানা আক্তার, নীলিমা সেরাও, রাহাত কাজী শিউলি ও পপি কুলসুম প্রমুখ।
সবাইকে আগামী আসরের আমন্ত্রণ ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।