বিদেশিরা মেয়াদের বেশি থাকলে সাজা

আমেরিকার বৈধ ভিসায় আসার পর যারা ওভার স্টে বা মেয়াদ শেষেও থেকে যাবে, তাদের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে ইস্টার সানডের অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশ্য তার নির্বাচনী অঙ্গীকার নিয়ে কথা বলার সময় এই নির্দেশনা দেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি দক্ষিণ সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়ারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে তাঁর ঘোষিত যুদ্ধের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছেন। বৈধ ভিসায় এসে আমেরিকায় ওভার স্টে বা মেয়াদের বেশি থাকার হার কমানোর লক্ষ্যে তাঁর প্রশাসনের কঠোর দৃষ্টি দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। 

অভিবাসনের নানা তথ্য–উপাত্ত থেকে জানা যায়, বিদেশিদের মধ্যে বৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করে অনেকে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও এ দেশে থেকে যায়। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রধানকে নির্দেশনা দিয়ে চার মাসের মধ্যে তার এই পরিকল্পনার বিষয়ে মতামত জানাতে আদেশ দিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নির্দেশনার উদ্দেশ্য হলো, কোনো বিদেশি নাগরিক আমেরিকায় এসে অতিরিক্ত সময় যেন থেকে যেতে না পারে। এ বিষয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ‘ভ্রমণ বন্ড’ বা ‘এন্ট্রি ভন্ড’ চালু করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই বন্ড আমেরিকায় প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় পূরণ করতে হবে। আমেরিকায় প্রবেশের সময় যেকোনো দেশের নাগরিককে তার সব তথ্যসহ এই ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে।
তা ছাড়া যে সব দেশের বেশি নাগরিক এ দেশে পর্যটন ভিসায় আসেন তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে। আবার যে সব দেশের বেশি নাগরিক এ দেশে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন, তাদের আবেদন নাকচ করার কথাও নির্দেশনায় বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেছেন, যেসব দেশের নাগরিক বেশি করে আমেরিকায় ভিসার মেয়াদের বেশি থাকে, তাদের পরিসংখান বের করে স্ব স্ব দেশে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণদের অর্থ দণ্ড আরোপ করার পরিকল্পনার কথা নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন কঠোর করার সর্বশেষ এই আদেশ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের জন্য এক ধরনের ঝাঁকুনি বলে মনে করা হচ্ছে। এ দেশে অনুপ্রবেশকারী মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির হতাশা থেকে তৈরি অভিবাসন সংক্রান্ত নতুন এই নির্দেশনা।
রাজনৈতিক নেতারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, ভিসার অতিরিক্ত মেয়াদে থাকা লোকজন দক্ষিণ সীমান্ত অতিক্রমকারী অবৈধ অভিবাসীদের মতোই সমস্যা। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি বিদেশি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আমেরিকায় থেকে গেছে।
যদিও অনেক ক্ষেত্রে আমেরিকায় বৈধ (নন ইমিগ্রান্ট) প্রবেশ থেকে নানাবিধ সুবিধা পায়। তারপরও যারা ভিসা প্রক্রিয়াটির অপব্যবহার করে এবং যারা ভিসার সব রকম শর্তাবলি মেনে চলতে অস্বীকার করে, তাদের জন্যই মূলত এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখের নিয়মনীতি না মেনে চলায় আমাদের অভিবাসনের পুরো ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলেছে। এতে করে জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উল্লেখ করেন। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এখন এই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ আমাদের নিতেই হবে বলে তিনি মনে করেন।
আমেরিকায় পর্যটন বা সাময়িক ভিসায় আসা অতীতের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন।
২০০৬ সালে ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’ অনুমান করেছিল, দেশের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অংশ পর্যটন বা চাকরির ভিসায় এ দেশে এসেছিল। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা আর যায়নি।
আমেরিকার কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি ভিসার ওপর নজরদারি শুরু করেছে। অভিবাসন বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৬ লাখ বিদেশি তাদের ভিসার মেয়াদের চেয়ে বেশি অবস্থান করেছিল।