ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান হলেও ছাড় নয়

গ্রিনহাউজ প্রভাবের জন্য দায়ী করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। নিউইয়র্ক নগরীর ‘নিউ গ্রিন ডিল’ অনুযায়ী, আগামী বছর থেকে ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ ও কুইন্সের শত শত কো-অপসগুলো কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরাসরি জরিমানার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেয়র।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্যান্য ভবন মালিকদের সতর্ক করতে গত সপ্তাহে ব্লাজিও ট্রাম্প টাওয়ারে যান। সেখানে তিনি বলেন, তারা যদি কার্বন নির্গমন হ্রাস না করে তবে তাদেরকে জরিমানা করা হবে। ম্যানহাটনের আটটি ট্রাম্প ব্র্যান্ডেড ভবনের একটি তালিকা প্রকাশ করে মেয়র বলেন, কার্বন নির্গমন কমানোর কোনো উন্নতি না হলে নতুন আইনের অধীনে সরাসরি জরিমানা করা হবে।

তিনি ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আপনার বায়ুদূষণকারী ভবনগুলো সমস্যার অংশ। আপনারা কার্বন নির্গমন না কমালে জরিমানা দিতে হবে।’

এর প্রতিক্রিয়ায় এক টুইটে এরিক ট্রাম্প বলেন, ‘ব্লাজিও তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক লাভের জন্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশনে হামলা চালাচ্ছেন। কিন্তু আমি নিউইয়র্ক নগরীর পক্ষে মেয়রের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে ইচ্ছুক।’

ব্লাজিও গত সপ্তাহে কার্বন নির্গমন হ্রাস না করতে পারলে নতুন আকাশচুম্বী গ্লাস-নির্মিত ভবনগুলো নিষিদ্ধ করারও হুমকি দিয়েছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সম্প্রতি গৃহীত নিউ গ্রিন ডিলের অধীনে নগরজুড়ে ইটের প্রাচীর দিয়ে তৈরি পুরোনো ভবনগুলোকেও জরিমানা করার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন আইনের হাত থেকে বাঁচতে সম্ভাব্য খরচ ও এর ফলাফল সম্পর্কে বাড়ির মালিকেরা চিন্তিত।

নর্থ কুইন্সভিউ নামে পরিচিত কুইন্স সমবায় বোর্ডের সভাপতি অ্যান্থনি গিগ্যান্টিয়ালে জুনিয়র শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, জ্বালানি খরচের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্বন নির্গমন হ্রাসে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও তাঁর ভবন হয়তো জরিমানার মুখে পড়তে পারে। ১৯৫০-এর দশকে নির্মিত লাল ইটের ভবনগুলোর নিরোধকও বর্তমান ভবনগুলোর মানের নিচে রয়েছে। ফলে এ আইনের হাত থেকে মোটাদাগে কেউই হয়তো বাঁচবে না। তিনি বলেন, ‘মোটামুটি মানের কে-অপগুলো এর ফলে দেউলিয়া হবে।’

নিউইয়র্কের আইন অনুযায়ী, গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাসে বড় ভবনগুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি ভবনকে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ৪০ শতাংশ হ্রাস করতে হবে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে এ নিঃসরণ ৮০ শতাংশ কমাতে হবে। আইন অমান্য করলে প্রতিটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনকে প্রতি টন কার্বন নিঃসরণের জন্য ২৬৮ ডলার হিসাবে জরিমানা গুনতে হবে।

গবেষকদের মতে, ‘পাঁচটি বরোর সব পুরোনো আবাসিক ভবন এ সমস্যায় আক্রান্ত। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিউইয়র্ক নগরীর মোট ভবনের ২০ শতাংশ ২০২৪ সালের মধ্যে এবং ৮০ শতাংশ ভবন ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমান তাপশক্তি-ব্যবহারের নির্দেশের ভিত্তিতে জরিমানার মুখোমুখি হবে। বর্তমান নির্দেশে ২৫ হাজার বর্গফুট বা তার চেয়ে বেশি এলাকার জন্য তাপশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে একটি সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবুজ জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করাই এ আইনের মূল উদ্দেশ্য।

আইনের সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করতে গবেষকেরা নগরীর ভবন মালিক ও ব্যবস্থাপকদের দেওয়া তাপশক্তি ব্যবহারের প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করেন। তাপ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি ও সে থেকে হওয়া কার্বন নিঃসরণের একটি আনুমানিক হিসাব তৈরি করে গবেষকেরা সম্ভাব্য জরিমানার অঙ্ক নির্ধারণের একটি চেষ্টা করেন। এতে দেখা যায়, ম্যানহাটনের ভবনগুলোর ৪৬ শতাংশই জরিমানার মুখে পড়বে।

নিউইয়র্ক কোঅপারিটিভস অ্যান্ড কনডোমিনিয়াম কাউন্সিলের ২ হাজার ৬০০টি অ্যাপার্টমেন্টসহ ১০টি কুইন্স কোঅপকে শনাক্ত করা হয়েছে, যা ২০২৪ সাল নাগাদ বার্ষিক ১৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে বাধ্য হবে। তারা তাদের তাপশক্তির প্রোফাইল উন্নত না করলে ২০৩০ সালে এ জরিমানার পরিমাণ বছরে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ডলারে দাঁড়াবে।

কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক মেরি অ্যান রোথম্যান বলেন, ‘এ বাড়ির মালিকেরা শিগগিরই বিশাল ব্যয় ও শাস্তিমূলক জরিমানা ভোগ করবে।’

এ বিষয়ে মেয়র কার্যালয়ের মুখপাত্র ফিল অর্টিজ বলেন, ‘বড় বড় স্থাপনার জন্য কার্বন নির্গমনের যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কঠিন হলেও অর্জনযোগ্য। কারণ, বিনা মূল্যে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও কম খরচে অর্থায়ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে তাদের।’

মেয়রের কার্যালয় জানায়, অষ্টম অ্যাভিনিউতে ১১১ গুগল মালিকানাধীন এক ব্লক-লম্বা শিল্পভবনটি কার্বন আইন লঙ্ঘনকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত। গুগলের অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেডের একক ইউনিটটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৩ লাখ ডলারের জরিমানা গুনতে হবে, যদি না তারা তাদের পরিচালন পদ্ধতি উন্নত না করে।

অন্যদিকে, মেয়র কার্যালয় গুগলকে তার তাপশক্তি হ্রাস প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ২০১৫ সালের মধ্যে কোম্পানিটি নগরীতে তার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়েছে। গুগল মুখপাত্রের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সাল থেকে কোম্পানি সৌর ও বায়ু থেকে শক্তি উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছে।