ট্রাম্প বনাম বাইডেন উত্তপ্ত বাগ্যুদ্ধ

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন

আইওয়া অঙ্গরাজ্যে গতকাল মঙ্গলবার প্রায় একই সময় নির্বাচনী সভা করে গেলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এখনো দেড় বছর বাকি, কিন্তু সত্তরোর্ধ্ব এই দুই রাজনীতিক ইতিমধ্যেই একে অপরকে নিজেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ধরে নিয়েছেন। আইওয়াতে সে কথার প্রমাণ মিলল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাইডেনকে ‘স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন’ ও একজন ‘পরাজিত মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এই লোকটাকে কেউ সম্মান করে না। যতবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, ততবারই হেরেছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁকে উচ্ছিষ্ট ভান্ডার থেকে তুলে এনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিলেন। তাঁর শুধু কম বুদ্ধি তাই নয়, কাজ করার শক্তিও নেই।

অন্যদিকে বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রতি একটি হুমকি হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, ট্রাম্প গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বদলে উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনকে আঁকড়ে ধরেছেন। অথচ তিনি একজন খুনি। বাইডেন বলেন, ট্রাম্প ও কিম একটা ব্যাপারে একমত, আর তা হলো জো বাইডেনকে কিছুতেই প্রেসিডেন্ট হতে দেওয়া যাবে না। বাইডেন যুক্তি দেখান, ট্রাম্প আশ্রয়প্রার্থী শিশুদের তাদের পিতামাতার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন, শার্লটসভিলে বর্ণবাদী মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ‘চমৎকার’ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বাণিজ্যযুদ্ধের নামে তিনি যা করছেন, তাতে এই দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমন একজনকে কিছুতেই আরও চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হতে দেওয়া যায় না।

অধিকাংশ রাজনৈতিক ভাষ্যকারই একমত, ট্রাম্প বাইডেনকেই তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনা করছেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ২২ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা তাঁদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। সব জনমত জরিপেই এগিয়ে বাইডেন। আইওয়া, যেখানে বারাক ওবামা পরপর দুবার বিজয়ী হয়েছিলেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প খুব সহজেই ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাস্ত করেন। তবে এ মুহূর্তে যে জনমত রয়েছে, তাতে এগিয়ে বাইডেন। 
তাঁরা দুজনেই কার্যত বুড়ো, তা সত্ত্বেও ট্রাম্প বাইডেনকে অতি দুর্বল ও অলস হিসেবে আক্রমণ করেন। তিনি বাইডেনকে একটি ডাকনামও দিয়েছেন, স্লিপি জো বা ঘুমকাতুরে জো। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বাইডেন বলেন, ‘আমাকে দেখে কি আপনাদের ঘুকাতুরে মনে হয়?’ তিনি স্বীকার করেন, ‘বয়স নিয়ে তাঁদের দুজনের ব্যাপারেই প্রশ্ন উঠতে পারে। আমি শুধু বলি, দেখুন আমি কী করি, কীভাবে করি।’

যে ভাষায় ও যে ক্ষিপ্রতায় ট্রাম্প জো বাইডেনকে আক্রমণ করেন তাতে স্পষ্ট তিনি তাঁকে নিজের পুনর্নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন। বাইডেনকে একজন ‘লুজার’ হিসেবে বর্ণনা করলেও ট্রাম্প স্বীকার করেন, নিজের প্রতিপক্ষ হিসেবে তিনি বাইডেনকে বেশি পছন্দ করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘বাইডেন মানসিকভাবে দুর্বল, আর আমি মানসিকভাবে দুর্বল মানুষদের বিরুদ্ধে লড়তেই পছন্দ করি।’
জনমত জরিপ থেকে স্পষ্ট, ডেমোক্র্যাটিক সমর্থকেরা মনে করছেন বাইডেনই পারবেন ট্রাম্পকে পরাস্ত করতে। ট্রাম্প তাঁর প্রতি যে পরিমাণ মনোযোগ দিচ্ছেন, বাইডেনের জন্য তা শাপে বর হয়ে এসেছে। পত্রপত্রিকায় এখন এই দুজনকে নিয়েই কথা হচ্ছে। বাকি যে ২১ জন ডেমোক্র্যাটিক সদস্য নিজ দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লড়ছেন, তাঁরা কার্যত রাজনৈতিক দর্শকে পরিণত হয়েছেন। এই আইওয়াতেই প্রমাণ মিলবে এই মনোযোগ কতটা কার্যকর হয়েছে। আগামী বছর ৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিপ্রধান এই রাজ্যের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থকেরা দলের বাছাইপর্বের নির্বাচনে প্রথম ভোট দেবেন।