ট্রাম্পের সঙ্গে কংগ্রেসের সংঘাত বেড়েই চলেছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত মার্কিন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউসের কার্যকলাপের ওপর নজরদারির অংশ হিসেবে তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। ট্রাম্প সরাসরি বলে দিয়েছেন, এসব তদন্তের একমাত্র উদেশ্য তাঁকে রাজনৈতিকভাবে বিব্রত করা। এ কারণে তিনি বা হোয়াইট হাউসের কোনো কর্মকর্তা কংগ্রেসের কোনো তদন্তে সহযোগিতা করবেন না।

ক্রমাগত না না বলা সত্ত্বেও ট্রাম্পের প্রতিরোধ–দেয়ালে ফাটল চিহ্ন দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযান বা ক্যাম্পেইনের অন্যতম কর্মকর্তা, পরে হোয়াইট হাউসে তাঁর যোগাযোগ পরিচালক হোপ হিক্স কংগ্রেসের বিচার বিভাগীয় কমিটির সামনে গোপন সাক্ষ্য দিতে সম্মত হয়েছেন। ম্যুলার তদন্তের সময় তাঁর সাক্ষ্যে হোপ হিক্স স্বীকার করেন, ট্রাম্পের হয়ে তিনি বহুবার মিথ্যা বলেছেন। ট্রাম্প যে রাশিয়ার আঁতাতবিষয়ক ম্যুলার তদন্তে হস্তক্ষেপ করেছেন, সে বিষয়ে হিক্স অনেক কিছুই জানেন। সে কারণে তাঁকে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করতে বিচার বিভাগীয় কমিটি সমন জারি করে। ট্রাম্প সে সমন অগ্রাহ্য করে কংগ্রেসে সাক্ষ্য না দিতে হিক্সকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে হিক্স কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতায় সম্মত হয়েছেন।

ব্যাপারটা ট্রাম্পের ভালো লাগেনি। তিনি এতটাই ক্ষিপ্ত হয়েছেন যে গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে সফররত পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদার উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের শুনিয়ে বলেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনি হয়তো জানেন না, আমি বলছি আমার দেশের বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা একদম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। নির্বাচনে জেতার জন্য আমার প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে। কিন্তু জেনে রাখুন, আমেরিকার জনগণ এর কোনোটাই সহ্য করবে না।’

ট্রাম্প যতই রাগে জ্বলুন না কেন, ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, হোয়াইট হাউসের কার্যকলাপের তদন্ত কংগ্রেসের ওপর শাসনতন্ত্র ন্যস্ত নজরদারি দায়িত্বের অংশ হিসেবেই করা হচ্ছে। তাঁরা এই মুহূর্তে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের বদলে সংসদীয় তদন্তের ওপরেই জোর দিচ্ছেন। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, এসব তদন্তের ভেতর দিয়েই অভিশংসনের জন্য তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ সম্ভব হবে।

এই প্রক্রিয়ার সবশেষ পদক্ষেপ হিসেবে কংগ্রেসের নজরদারি ও সংস্কার কমিটি অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ও বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের বিরুদ্ধে কংগ্রেস অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করেছে। ডেমোক্র্যাটরা অভিযোগ করেছিলেন, আমেরিকার পরবর্তী জনসংখ্যা গণনার প্রক্রিয়া প্রভাবিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন গণনাকৃত ব্যক্তি মার্কিন নাগরিক কি না, এই মর্মে একটি প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁদের ধারণা, এমন প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করায় অনেক অশ্বেতকায় অভিবাসী আদমশুমারিতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে, আর তাতে আমেরিকার শ্বেতকায়দের সুবিধা হবে। কীভাবে এমন প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো, তা জানার জন্য নজরদারি কমিটি বিচার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন নথি চেয়ে পাঠিয়েছিল। অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাণিজ্যমন্ত্রী সেসব নথিপত্র কংগ্রেসের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করেন। এসব নথি তাঁর ‘নির্বাহী অধিকারের’ অন্তর্ভুক্ত, এই যুক্তিতে ট্রাম্প সেসব নথি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

গতকাল নজরদারি কমিটির সব ডেমোক্রেটিক সদস্য সর্বসম্মতভাবে উইলিয়াম বার ও উলবার রসকে কংগ্রেস অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করেন। ট্রাম্পবিরোধী হিসেবে পরিচিত মিশিগানের জাস্টিন আমাশ একমাত্র রিপাবলিকান সদস্য, যিনি এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় কমিটির প্রধান কংগ্রেসম্যান এলাইজাহ কামিংস এসব নথি সংগ্রহে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।