নিউইয়র্কে পতিতাবৃত্তি বৈধ করার উদ্যোগ

নিউইয়র্কে পতিতালয় আইনসিদ্ধ করার প্রস্তাব উঠেছে। যৌনকর্মীরা বলেছেন, এ তাদের অধিকার। আর এতে সমর্থন দিচ্ছে কোনো কোনো উদারনৈতিক রাজনৈতিক মহল। তবে বিক্ষোভে নামছেন নাগরিকেরা। নিউইয়র্ককে লাস ভেগাস বা ব্যংকক বানানোর যেকোনো উদ্যোগ প্রতিরোধ করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্কে আগ্নেয়াস্ত্র বৈধ ও গাঁজা এখন বৈধ। এরপর পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করে বিশ্বের অন্যতম সেরা এ নগরীকে বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
ডেমোক্র্যাট দলের আইন প্রণেতারা ১০ জুন স্টেট কংগ্রেসে আইন প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবে পতিতাবৃত্তিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করার কথা বলা হয়েছে। ব্রুকলিন থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট স্টেট সিনেটর জুলিয়া স্লাজার এ আইন প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছেন। ডেমোক্র্যাট দলের শক্তিশালী একটি অংশ এ উদ্যোগের সমর্থন জানাচ্ছেন।
ডেমোক্র্যাট দলের কুইন্স ডিসট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী এমন উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, নিউইয়র্ককে পাপের নগরী করার যেকোনো উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করা হবে। এ নিয়ে নিউইয়র্কের নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্রতিবাদ জানানোর জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। 

আমেরিকার একমাত্র নেভাদা রাজ্যে পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রিতভাবে আইনসিদ্ধ। এ কারণে নেভাদার লাস ভেগাসকে ‘পাপের নগরী’ বলা হয়। অন্য সব উদার রাজ্যে বেশ কিছুদিন থেকে যৌনকর্মী ও অতি উদারপন্থীদের একটি পক্ষ সম্মতি সাপেক্ষে যৌন কর্মকে আইনসিদ্ধ করার চেষ্টা করে আসছেন। সম্প্রতি ম্যাসাচুসেটস ও মেইন অঙ্গরাজ্যে এ নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন গাঁজা আর আগ্নেয়াস্ত্রের মতো পতিতাবৃত্তিকেও অচিরেই বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।
বহু ধর্ম, জাতিগোষ্ঠীর বসবাসে সমৃদ্ধ নিউইয়র্কে নগরীত পতিতাবৃত্তি এখন আইনত নিষিদ্ধ। অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্মের জন্য জেল জরিমানার দণ্ড রয়েছে। এ আইনের কড়াকড়ি আরোপ থাকার ফলে নিউইয়র্কে যৌনকর্মীদের গোপন আস্তানায় প্রায়ই ধরপাকড় হয়। যৌন অপরাধের জন্য আইন লঙ্ঘনকারীদের প্রায়ই দণ্ড পেতে হয়।

এ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পতিতাবৃত্তি আইনসিদ্ধ করার পক্ষের সমর্থকেরা বলেছেন, বিরাজমান আইনটি বৈষম্যমূলক। এ আইনের প্রয়োগে সংখ্যালঘু নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশ্বের উদারনৈতিক নগরীগুলোর উদাহরণ দিয়ে তারা বলেছেন, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আইন করে যৌনতা নিষিদ্ধ করা মানবাধিকার বিরোধী। যৌনকর্মীরা বলেছেন, ‘শরীর আমার। এ শরীর বিক্রি করে জীবনযাপন করার অধিকারও আমার আছে। টি এস ক্যান্ডি নামের ব্রঙ্কসের এক যৌনকর্মী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পুলিশের হয়রানির কারণে তাঁকে না খেয়ে থাকতে হয়। তিনি মনে করেন, পেশা হিসেবে কাজটি বেছে নেওয়ার অধিকার আছে, তা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

স্যাংচুয়ারি ফর ফেমিলিজ নামের একটি সংগঠন এর মধ্যই মাঠে নেমেছে। তারা বলছে, এমন আইনের ফলে নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা বাড়বে, বাড়বে সহিংসতা। নিউইয়র্কের নানা ধর্মীয় গোষ্ঠীও এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। বহু ধর্ম ও সংস্কৃতির মিশ্রণে গড়ে ওঠা নগরীকে পাপের নগরীতে পরিণত করার উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন নাগরিকদের শক্তিশালী একটি পক্ষ।

কুইন্সের জামাইকায় বসবাস করেন প্রবাসী আতাউর রহমান। নিউইয়র্কে পতিতালয় আইনসিদ্ধ করার উদ্যোগের সংবাদে তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন। আতাউর রহমান বলেন, ‘সব ধর্ম, সমাজ সংস্কৃতির মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর পরিণাম ভালো হবে না।’ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেছেন, ‘প্রতিবাদ জানিয়ে আমাদের বসে থাকলে হবে না। প্রতিটি এলাকার জনগণকে তাঁদের নিজ নিজ জনপ্রতিনিধির কাছে প্রতিবাদ জানাতে হবে।’ এ নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।