যুবকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ ও আমাদের দায়িত্ব

কাজী কায়্যূম
কাজী কায়্যূম

কাজী নাফিস। তারপর আকায়েদ উল্লাহ। এবার তাঁদেরই সমবয়সী আরেক বাংলাদেশি যুবক আশিকুল আলমের (২২) নিউইয়র্কের মিনি বাংলাদেশ জ্যাকসন হাইটস থেকে গ্রেপ্তার? আমেরিকা প্রবাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে পরপর এই তিন যুবকের গ্রেপ্তার হওয়া, দোষী প্রমাণিত ও সাজাপ্রাপ্তি আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মান–সম্মানকে ধুলোয় মিশিয়েছে। ঘটনাগুলোর পর মার্কিনিরা বাংলাদেশি ও আমাদের যুবকদের অন্য চোখে দেখতে শুরু করেছে, যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমেরিকায় আমাদের নতুন প্রজন্মের সামনে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বৈকি। 

কিন্তু এতে কি আমরা যাঁরা মসজিদ-মাদ্রাসা, ইসলামিক ও সামাজিক সেন্টার ও সমিতি নিয়ে ধর্মীয় ও সমাজ সেবায় যুক্ত রয়েছি, তাঁদের কী কোনোই দায়িত্ব নেই?
৯/১১–এর পর, বিশেষ করে ধর্মীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জ্যাকসন হাইটের মোহাম্মদি কমিউনিটি সেন্টার, যার কার্যপরিধি কেবল মসজিদের চার দেয়ালের ভেতরই আবদ্ধ না রেখে এর স্বেচ্ছাসেবী অঙ্গসংগঠন ‘অ্যান্টি টেরোরিজম অ্যাওয়ারনেস ইউনিট (এইউ)’, যার মূলমন্ত্র বা মিশন স্টেটমেন্ট ‘Says Something, If Sees Something’ প্রচারের মাধ্যমেই অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। প্রবল প্রতিরোধ, সমালোচনা ও বিড়ম্বনা সত্ত্বেও কাজী নাফিস থেকে আকায়েদ উল্লাহ এবং যুক্তরাষ্ট্রে যখন যেখানে সন্ত্রাসবাদবিষয়ক ঘটনা ঘটেছে, কমিউনিটিকে সচেতন করতে সেসব বিষয় তুলে ধরতে অ্যান্টি টেরোরিজম অ্যাওয়ারনেস ইউনিট পিছপা হয়নি।
এইউ মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্রে গজিয়ে ওঠা কোনো এক বিশেষ বাংলাদেশি রাজনৈতিক জঙ্গি ধর্মীয় গোষ্ঠী, যাদের মূল আওয়াজ ‘ইসলামি হুকুমত ও জিহাদ’, যারা ভিন্ন নামে এ দেশের বিভিন্ন সুযোগের সদ্ব্যবহার করে, তাদেরই আমেরিকান গৃহপালিতদের পরিচালনায় ও ছলেবলে, কলে-কৌশলে দখলে নিয়ে মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার, মাদ্রাসা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো থেকে তাদের অদৃশ্য জিহাদি মতবাদ প্রদানের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় আমাদের নতুন প্রজন্মের মস্তিষ্ক ধোলাই করে চলেছে। পরিস্থিতির শিকার হয়ে ভয়াবহ জেনেও এমন সব দুষ্কর্মের দিকে তারা ধাবিত হতে দ্বিধাবোধ করছে না। এমনকি জান্নাত পাওয়ার ভুল ব্যাখ্যায় মগজ ধোলাই হয়ে পরমানন্দে সেদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সেসবে কি আমাদের টনক নড়ে না?
কাজী নাফিস ও আকায়েদ উল্লাহর ঘটনার পর তাঁদের পক্ষে ও তাঁদের মুক্তির জন্য এমনকি তাঁদের বাঁচাতে তথাকথিত কিছু অ্যাকটিভিস্টকে লবিং করতে এবং প্রেস কনফারেন্স করে পরোক্ষভাবে তাঁদের পক্ষেই কথা বলতে শুনেছি। তাঁদের আমরা এ–ও বলতে শুনেছি, ‘এরা আমাদের ছেলে, যেমন করেই হোক, এদের আমাদের বাঁচাতে হবে।’ এরা নাকি অসুস্থ! মানসিক ভারসাম্যহীন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এদের এমন বানাল? কেন এরা আজ মানসিক ভারসাম্যহীন হলো? কাদের প্ররোচনায় এরা এমন মরিয়া হয়ে উঠল? এইউ মনে করে যে এসব গভীর পানির মাছেরা, যারা আমাদের সহজ–সরল নতুন প্রজন্মকে উসকানি দিয়ে ‘নীরব জিহাদের’ ভূমিকায় এমন সন্ত্রাসী কাজ করাচ্ছে, তারা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তাই আসুন, আমরা এসব মোড়লের ও তাদের পরিচালিত ধর্মীয় সেন্টার বা সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করি এবং আমাদের যুবক–যুবতীদের তাদের হাত থেকে দূরে সরিয়ে রাখি। এইউ মনে করে যে ১ হাজার ৪০০ বছরের বেশি আগে নবী মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর শাশ্বত বিদায় হজের ভাষণের মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত আসা মানুষের জন্য যে ইসলাম দিয়ে গেছেন, সেই ইসলামই একমাত্র শান্তির ইসলাম। উপরন্তু তালিবান, আল–শাবাব, বকোহারাম, আইএসের সন্ত্রাসে ভরা ইসলাম কখনোই শান্তির ইসলাম হতে পারে না। এমন কর্মকাণ্ড পরোক্ষভাবে শান্তিপূর্ণ মুসলমান ও তাদের নতুন প্রজন্মকে সন্ত্রাসের দিকেই ধাবিত করবে। কাজী নাফিস, আকায়েদ উল্লাহ ও আশিকুল আলম তেমনই ইসলাম অনুসরণের কারণেই আজ তাঁদের এ দশা হয়েছে বলে সন্ত্রাসবাদবিরোধী সংগঠন অ্যান্টি টেরোরিজম অ্যাওয়ারনেস ইউনিট মনে করে।