নিউইয়র্ক বইমেলায় বিদায়ের সুর

বইমেলায় প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা স্টলে লেখক ও আয়োজকেরা। ছবি: প্রথম আলো
বইমেলায় প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা স্টলে লেখক ও আয়োজকেরা। ছবি: প্রথম আলো

নিউইয়র্কে চার দিনব্যাপী বইমেলা ও বাংলাদেশ উৎসবের বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করেছে। ১৬ জুন ছিল মেলার তৃতীয় দিন। ১৭ জুন জুইশ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে মেলার শেষ দিনের আয়োজন। মেলা চলবে বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যাবে বইমেলা।

তৃতীয় দিন জ্যাকসন হাইটস ছিল বইয়ের উৎসবে মুখরিত। তৃতীয় দিনেও ছিল যথারীতি আড্ডা ও প্রাতরাশের আয়োজন। সদ্য প্রয়াত নাট্যকার মমতাজউদ্দীন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে অংশ নেন জামাল উদ্দীন হোসেন ও শিরিন বকুল। ছিল নতুন বই ও লেখক পরিচিতি অনুষ্ঠান। লেখক কথা ও প্রকাশক কথা অনুষ্ঠান ও স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন শিরিন বকুল। দুপুরে বাবা দিবস উপলক্ষে বইমেলায় আসা লেখক, কবি ও প্রকাশকেরা সম্মিলিতভাবে কেক কেটে দিবসটি উদ্‌যাপন করেন।

বিকেলে ফেরদৌস সাজেদীনের সঞ্চালনায় ছিল অনুষ্ঠান অভিবাসী লেখক। অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা জানানো হয় ওয়ালেদ চৌধুরী ও ফরিদুর রেজা সাগরকে। শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিবেশনায় রবীন্দ্র সংগীতের অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক শ্রোতা-দর্শকের আগমন ঘটে।

মেলা নিয়ে প্রকাশক, লেখক ও পাঠকদের মধ্যেও বেশ মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক জ্যাকসন হাইটসের পড়ন্ত রোদে দাঁড়িয়ে বললেন, ২৮ বছর পর এখন সময় এসেছে বই মেলাকে ভিন্ন ধাপে নিয়ে যাওয়ার।

নালন্দা প্রকাশনীর কর্ণধার রেদোয়ান জুয়েল বলেন, মেলা গতবারের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ। বই বিক্রি আশানুরূপ নয়।

আহমেদ পাবলিশিং হাউসের মেছবাহ্ উদ্দীন আহমদ বলেন, ‘যেহেতু এখন বইমেলার পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে তাই যদি মেলা আয়োজনের দায়িত্ব বাংলাদেশ হাইকমিশনকে দেওয়া হয় তাহলে মেলা ভবিষ্যতে আরও সুন্দর হবে বলে আমার মনে হয়।’

কথা প্রকাশ স্টলের দায়িত্ব পালনকারী তাসকিনুল হক মেলা সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জহিরুল আবেদীন জুয়েল অবশ্য তাঁর স্টলের বই বিক্রি নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট নয় বলে জানালেন। তাঁর মতে, মেলায় প্রকৃত ক্রেতার সংখ্যা কম।

বইমেলা ও বাংলাদেশ উৎসবের তৃতীয় দিনে মঞ্চে কবি, সাহিত্যিক ও লেখকেরা। ছবি: প্রথম আলো
বইমেলা ও বাংলাদেশ উৎসবের তৃতীয় দিনে মঞ্চে কবি, সাহিত্যিক ও লেখকেরা। ছবি: প্রথম আলো

প্রথমা প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী পরিচালক কবি জাফর আহমদ রাশেদও মেলা নিয়ে ইতিবাচক মতামত জানিয়েছেন।

অঙ্কুর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মেসবাহ উদ্দীন আহমেদের খুবই আশাবাদী। তিনি বলেন, শুধু বই বিক্রি করে মুনাফা করাই এই বইমেলায় যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য নয়। তিনি বিদেশের মাটিতে এত বিশাল এই আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, এমন একটি উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। এই মেলার মধ্য দিয়েই দেশের সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে অভিবাসী লেখক ও লেখনীর একটি সেতুবন্ধন রচিত হচ্ছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রথমবারের মতো নতুন স্টল নিয়ে আসা প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা স্টলের আয়োজকেরা বেশ উচ্ছ্বসিত। তারা নতুন লেখক তৈরির পাশাপাশি ডায়াসপোরা সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার স্টল ব্যবস্থাপনায় থাকা ইশতিয়াক রূপু ও আবদুস শহীদ বলেন, তাঁদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী বেশি বই বিক্রি হয়েছে এই স্টলে। অন্বয় প্রকাশের হ‌ুমায়ূন কবির ঢালী বলেন, দূর দেশে বাংলা বইয়ের পাঠকদের এমন উচ্ছ্বাস দেখে ভালো না লাগার কোনো কারণ নেই। প্রবাসীরা যে দেশকে কতটা ভালোবাসেন তাঁর প্রমাণ এ বইমেলা।

অভিনয় শিল্পী লুৎফুন নাহার লতাও মেলা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘বইমেলা আমাদের একটি মিলন মেলাও বলা যায়। এখানে এলে সবার সঙ্গে দেখা হয়, কুশল বিনিময়ের সুযোগ ঘটে।’

মেলার প্রায় সব স্টলেই ছিল লেখক–পাঠকদের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো
মেলার প্রায় সব স্টলেই ছিল লেখক–পাঠকদের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো

মেলার তৃতীয় দিনে লেখক আদনান সৈয়দ জানান, বইমেলার শেষ দিন উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রকাশকেরা বই বিক্রিতে ৩০% বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছেন।

বেঙ্গল পাবলিকেশনকে মেলায় সেরা স্টলের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পাঠক ও বইপ্রেমীরা মেলা নিয়ে খুব খুশি। তাঁরা অনেকেই জানালেন, তাঁরা খুব আগ্রহ নিয়েই মেলা দেখতে এসেছেন। মেলায় এলে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। প্রিয় লেখকদের সঙ্গেও দেখা হয়ে যায়।

বইমেলা শেষ হবে ১৭ জুন। এদিন অনুষ্ঠিত হবে জ্যাকসন হাইটস জুইস সেন্টারে (৭৭ স্ট্রিট, ৩৭ অ্যাভিনিউ)। শুধু বাংলাদেশ থেকে আসা প্রকাশকদের বইয়ের স্টল নিয়ে বসছে বইমেলার এই চতুর্থ দিন। মেলা চলবে বেলা তিনটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।