আইস নামছে, ১৪ জুলাই থেকে ব্যাপক অভিযান

স্বাধীনতা দিবসের রাত থেকেই অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারে আমেরিকাজুড়ে অভিযান শুরু করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্সি। এবার এই অভিযানের পরিধি বাড়ছে। সারা দেশে অবৈধ অভিবাসী পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তারে ১৪ জুলাই থেকে অভিযান শুরু হচ্ছে। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (ডিএইচএস) বর্তমান ও সাবেক তিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অর্থায়ন প্রশ্নে কংগ্রেসকে দেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এ অভিযান শুরু হচ্ছে। এর আগে অভিবাসন সংস্থার কিছু কর্মকর্তার বিরোধিতার মুখে অভিযানটি বিলম্বিত

হয়। কিন্তু এখন এই অভিযান ১৪ জুলাই থেকে শুরুর খবর পাওয়া গেছে। আমেরিকার অন্তত ১০টি বড় শহরে এই অভিযান চালানো হবে। তবে অভিযানের সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছু জানা যায়নি।
ডিএইচএসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান, আইসের নেতৃত্বেই অভিযান পরিচালিত হবে। এ সময় ব্যাপকভাবে বহিষ্কার করা হবে অবৈধ অভিবাসীদের। এই অভিযান চলার সময় এমনকি বৈধ অভিবাসীদেরও গ্রেপ্তার করা হতে পারে। অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। সতর্কতা হিসেবেই এমনটি করা হতে পারে। তবে এ অভিযানের ধরন নিয়ে এর চেয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।

এই অভিযানের বিষয়টি গোপন রাখতে চাইলেও খোদ প্রেসিডেন্টের কারণেই তা সম্ভব হয়নি। অভিযানটি সম্পর্কে প্রথম টুইটার পোস্টের মাধ্যমে তিনি সবাইকে অবহিত করেন। এতে অভিযান পরিচালনায় থাকা আইস কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অভিযানটি অবশ্য গত জুনেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এমন অভিযানের বিরোধী অবস্থানে ছিলেন ডিএইচএসের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি কেভিন কে ম্যাকালিনান। গণহারে অভিযান চালিয়ে কোনো সন্তান থেকে তার পরিবারকে পৃথক করার ঝুঁকি তিনি নিতে চাননি। এ কারণে তিনি এমনকি আইসের সে সময়ের পরিচালক মার্ক মরগানকে অভিযান প্রত্যাহারের অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু মরগান এ বিষয়ে সরাসরি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযান পরিচালনার আদেশ আদায় করেন। পরে অভিযান শুরুর মাত্র দুদিন আগে ২১ জুন তা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ১০ লাখ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছিল। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের (ইউএসসিআইএস) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কেন কুচিনেলি সম্প্রতি ‘ফেস দ্য নেশন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রায় ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর আদেশ পাওয়ার পরপরই ইউএসসিআইএস তাঁদের শনাক্ত করবে। এরপর গ্রেপ্তার করে তাঁদের নিজ নিজ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। আইস ও ডিএইচএস এ কাজে সহায়তা করবে।

এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে আইস কর্মকর্তারা বলেন, কাগজপত্রহীন যেসব অভিবাসী আমেরিকায় বাস করছেন, তাঁরা সবাই অভিবাসন আইন ভাঙছেন। আইস এজেন্টরা রাজনীতির বিতর্কে না জড়িয়ে অভিবাসন আইন অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীদের নির্বাসন দেবেন।

কেন কুচিনেলি ও আইসের বিবৃতির পরপরই অভিবাসীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়। এখন এই শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ডিএইচএস কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, অবৈধ অভিবাসীদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে তাঁদের পারিবারিক আটককেন্দ্রে রাখা হবে। টেক্সাস ও পেনসিলভানিয়ার আটককেন্দ্রগুলোকেই এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। তবে স্থান স্বল্পতা দেখা দিলে তাদের বিভিন্ন হোটেলেও অন্তরীণ রাখা হতে পারে। এই আটকাবস্থা সংশ্লিষ্টদের ভ্রমণ নথি হাতে পাওয়া পর্যন্ত থাকবে। তবে আইসের লক্ষ্য থাকবে এ ধরনের পরিবারগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব আমেরিকা থেকে বহিষ্কার করা। প্রাথমিকভাবে আইস অন্তত ২ হাজার অভিবাসীকে টার্গেট করবে, যাদের নামে আগে থেকেই আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের আদেশ রয়েছে।

এবারের অভিযানে মূলত লক্ষ্য বানানো হচ্ছে সেই সব অভিবাসী পরিবারকে, যারা সম্প্রতি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করেছেন। ডিএইচএসের বর্তমান এক কর্মকর্তা বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে এসব অভিবাসী পরিবারকে আইস কার্যালয়ে হাজির হতে এবং আমেরিকা থেকে অতিসত্বর চলে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি।

আইসের মুখপাত্র ম্যথিউ বার্ক ১০ জুলাই এক বিবৃতিতে বলেন, অভিযান সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু জানাতে চায় না আইস। আইসের কর্মীদের নিরাপত্তা বিবেচনাতেই এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য গোপন রাখা হচ্ছে।

অবৈধ অভিবাসীদের গণহারে আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে পুরো আমেরিকাই এখন দ্বিধাবিভক্ত বলা যায়। অভিবাসীদের মধ্যে সংশয় ও শঙ্কা ভীষণভাবে বাড়ছে। এ ছাড়া অনেক অঙ্গরাজ্যের স্থানীয় প্রশাসন, রাজনীতিক ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এমনকি অভিবাসী বিতাড়নের এখতিয়ার যে ডিএইচএসের, তার মধ্যেও রয়েছে এ নিয়ে বিভক্তি। কিন্তু তারপরও ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হচ্ছে, তারা আমেরিকামুখী অভিবাসী স্রোত যেকোনো মূল্যে থামাতে চায়।

তবে এ অভিযান ঠিক কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ আইসের মধ্যেই। এক আইস এজেন্ট বলেছেন, এরই মধ্যে আসন্ন অভিযানের বিষয়টি অভিবাসী কমিউনিটিগুলোয় বেশ প্রচার পেয়েছে। ফলে তারা সাবধান হয়ে যাবে। অনেকে এজেন্ট এলে দরজা না খোলার মতো কৌশল নেবে। আর যেহেতু আইস এজেন্টদের কারও দরজা জোর করে খোলার এখতিয়ার নেই, সেহেতু এ ক্ষেত্রে তাদের তেমন কিছু করার থাকবে না। এ ছাড়া অভিবাসন আইনজীবীরা বিভিন্ন অভিবাসী পরিবারের নামে থাকা মামলা পুনরায় শুরুর কৌশল নেবে, যাতে আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি বিলম্বিত করা যায়। এমন বহু কৌশলকে এখন মোকাবিলা করতে হবে। ফলে অভিযানের সাফল্য নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।