এবারও ট্রাম্পের তুরুপের তাস 'বর্ণবাদ'

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘বর্ণবাদী’ আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। সোমবার তিনি আক্রমণ করেছেন আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড আল শার্প্টনকে। তাঁকে ‘কন ম্যান’ বা তস্কর হিসেবে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।

চারজন অশ্বেতকায় নারী কংগ্রেস সদস্যকে ‘নিজ নিজ দেশে ফিরে যাও’ বলে ভর্ৎসনা করে মহাবিতর্ক আগেই শুরু করেছিলেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহে এই বিতর্কে তিনি ঘৃতাহুতি দেন কংগ্রেসের প্রবীণ আফ্রিকান-আমেরিকান সদস্য ইলাইজা কামিংসকে তাঁর নিজ শহর বাল্টিমোরের হতদরিদ্র অবস্থার জন্য কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেন। ইঁদুরে বোঝাই শহরটি কোনো মানুষের পক্ষে থাকার অনুপযোগী ঘোষণা দিয়ে তার জন্য কামিংসকে দায়ী করেন ট্রাম্প। কামিংসকে আক্রমণ করার জন্য ট্রাম্পকে ‘বর্ণবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন শার্প্টন। আর এ জন্য শার্প্টনও ট্রাম্পের আক্রমণের শিকার হলেন।

ট্রাম্পের এসব আক্রমণের কোনোটাই অপরিকল্পিত নয়। হোয়াইট হাউসের একাধিক সূত্র স্বীকার করেছে, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে এসব ট্রাম্পের পরিকল্পিত রণকৌশল।

গত নির্বাচনে অভিবাসন ও বর্ণবিভাজনকে পুঁজি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। এবারও তিনি আশা করছেন, নিজের অনুগত শ্বেতকায় সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে বর্ণবাদ হবে তাঁর তুরুপের তাস।

রিপাবলিকান নির্বাচনী বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, নির্বাচনে জয়ের জন্য বর্ণবিদ্বেষ একটি ভালো রণকৌশল। বিশেষত স্বল্পশিক্ষিত ও কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলোর শ্বেতকায়দের মধ্যে কৃষ্ণাকায় ও বাদামি বহিরাগতদের প্রতি প্রবল বর্ণবাদী মনোভাব রয়েছে। শহুরে মূল্যবোধের প্রতিও তাঁদের প্রবল ঘৃণা রয়েছে। এরাই ২০১৬ সালে ট্রাম্পকে বিজয়ী হতে সাহায্য করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন প্রায় নিরঙ্কুশ।

ট্রাম্প নিজেও মনে করেন, বিরোধী ডেমোক্র্যাট বা স্বতন্ত্র ভোটারদের দলে টানার জন্য তাঁর নমনীয় হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি নিজ বেইসের সাহায্যেই জিতব’।

তবে জনমত জরিপ দেখে মনে হচ্ছে, ২০১৬ সালে ট্রাম্পের এই কৌশল কাজে এলেও ২০২০ সালে তাঁর সাফল্যের নিশ্চয়তা নেই।

অর্থনীতি চমৎকার অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প আজ পর্যন্ত দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের সমর্থন অর্জন করতে পারেননি।

খোলামেলাভাবে যে বর্ণবাদী অবস্থান ট্রাম্প গ্রহণ করেছেন, দেশের অধিকাংশ মানুষই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি শ্বেতকায় ভোটারদের ৫১ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে তাঁরা একমত নন। প্রতি ১০ জন শ্বেতকায় ভোটারদের মধ্যে ৪ জনই মনে করেন, ট্রাম্পের কথা বর্ণবাদী। অশ্বেতকায় ও ডেমোক্রেটিক ভোটারদের হিসাবে আনলে অধিকাংশই ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধী। এমনকি ট্রাম্প-সমর্থক হিসেবে পরিচিত ফক্স নিউজের নিজস্ব জরিপ অনুসারে, দেশের ৬৩ শতাংশ মানুষ অশ্বেতকায় নারী কংগ্রেস সদস্যদের ওপর ট্রাম্পের আক্রমণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ট্রাম্পের ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রায় সবাই কঠোর ভাষায় তাঁর (ট্রাম্প) বর্ণবাদী বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন।

জো বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প ও তাঁর বর্ণবাদী অবস্থান আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য একটি হুমকি। এই দেশ তার ইতিহাসে এত বড় হুমকির সম্মুখীন হয়নি।

নিম্নভাষী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স পর্যন্ত ট্রাম্পকে বর্ণবাদী হিসেবে তিরস্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট গাত্রবর্ণের ভিত্তিতে দেশের মানুষকে বিভক্ত করতে চাইছেন।’

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘ট্রাম্প আমেরিকাকে মহান নয়, তাকে ফের শ্বেতকায়দের দেশ বানাতে চান।’

ডেমোক্র্যাটদের ক্রুদ্ধ সমালোচনা সত্ত্বেও ট্রাম্প এত দিন তাঁদের উপেক্ষা করতে পেরেছেন মূলত রিপাবলিকান পার্টির সরব সমর্থনের কারণে। কংগ্রেসের অধিকাংশ রিপাবলিকানই ট্রাম্প-সমর্থক ‘লাল’ অঙ্গরাজ্যগুলোর বাসিন্দা। নির্বাচনী বিপর্যয় এড়াতে এঁরা কেউ-ই ট্রাম্পকে চটাতে চান না। সে কারণে তাঁর খোলামেলা বর্ণবাদী অবস্থান সত্ত্বেও দলের শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতাই ট্রাম্পের সমালোচনা করেননি। ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হবেন—সে কারণে তাঁরা রাশিয়ার নির্বাচনী হস্তক্ষেপ নিয়েও কোনো সমালোচনা করতে প্রস্তুত নন। উভয় দলের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও গত সপ্তাহে সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ঠেকাতে দুটি প্রস্তাবিত আইন উত্থাপনে বাধা দিয়েছেন।

একজন ভাষ্যকার মন্তব্য করেছেন, রেসিজম (বর্ণবাদ), রাশিয়া ও রিপাবলিকান—এই তিন ‘আর’-এ ভর করেই নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার অপেক্ষায় আছেন ট্রাম্প।