কানাডিয়ান রকিস ছোঁয়ার গল্প

বানফ ন্যাশনাল পার্ক। এখানে একেক লেকের পানির রং একেক রকম
বানফ ন্যাশনাল পার্ক। এখানে একেক লেকের পানির রং একেক রকম

রকি মাউন্টেন উত্তর আমেরিকায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৪ বর্গমাইল বিস্তৃত। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে শুরু, আলবার্টা হয়ে আমেরিকাতে আইডাহো, মনটানা, ওমিং ও কলোরাডো হয়ে শেষ হয়েছে নিউ মেক্সিকো স্টেটে।

বানফ ন্যাশনাল পার্ক কানাডার প্রথম ন্যাশনাল পার্ক যা আলবার্টা প্রভিন্সে রকি মাউন্টেনের ২ হাজার ৫৬৪ বর্গমাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। বানফ ন্যাশনাল পার্ক প্রকৃতি প্রেমীদের লিস্টের প্রথম সারিতেই থাকে। ক্যালগারি শহর থেকে মাত্র ১০০ মাইল পশ্চিমে এই বিস্ময়কর সৌন্দর্যের অবস্থান। বানফ পাহাড়ঘেরা ছোট্ট শহর। শহরটা ন্যাশনাল পার্কের মধ্যেই অবস্থিত। যদি কারও লাক্সারিয়াস ট্যুরের ইচ্ছা থাকে তাহলে বানফ শহরে থাকতে পারেন। এই শহরে তিন তারকা হোটেলে প্রতি রাতের খরচ গড়ে ৩০০ কানাডীয় ডলার। পাঁচ তারকা হোটেলে থাকতে হলে প্রতি রাতের জন্য কমপক্ষে ৭০০ কানাডীয় ডলার বাজেট রাখতে হবে।

পিস ব্রিজ
পিস ব্রিজ

আর যদি ব্যাকপ্যাকার হন তবে ক্যালগারি শহরে থাকতে পারেন। কালগারি শহরে ৬০ ডলারে হোটেল পাওয়া যাবে। আরও কম চাইলে এয়ার বিএনবি। এয়ার বিএনবিতে ৩০ ডলারের কমেও থাকার জন্য ভালো জায়গা পাবেন। পরিবার/বন্ধুদের সঙ্গে গেলে কালগাড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘুরতে যাওয়াটা ভালো। রকি মাউন্টেনের অনেক জায়গায় নেটওয়ার্ক কাজ করে না। বিশেষ করে হাইওয়ে ৯৩-তে। এ ছাড়া ১০০-১২০ মাইলের মধ্যে কোনো গ্যাস স্টেশনও চোখে পরবে না। একা ঘুরতে গেলে ড্রাইভ না করায় শ্রেয়।

রকি মাউন্টেনের সৌন্দর্য শীতকালে একরকম আবার গ্রীষ্মে অন্য রকম। শীত প্রধান এই দেশে বছরের সাত থেকে আট মাস বরফ পরে। তবে বেস্ট ভিউ দেখতে চাইলে জুন, জুলাই অথবা আগস্ট মাসে যাওয়ার পরিকল্পনা করা উচিত।

১৯৪৮ সালে কানাডিয়ান রকিসের সবগুলো ন্যাশনাল পার্ক ও প্রভিন্সিয়াল পার্কগুলোকে এক সঙ্গে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান ঘোষণা করেছে।

ক্যালগারি–বানফ হাইওয়ে
ক্যালগারি–বানফ হাইওয়ে

এবার কানাডিয়ান রকি ছুঁয়ে দেখার গল্প শোনা যাক। ক্যালগারি শহর থেকে গাইড নিয়েছিলাম। ১২-১৩ জনের ছোট দল। ক্যালগারি শহর থেকে বের হলেই দূরের রকি মাউন্টেন চোখে পড়বে। ক্যালগারি থেকে বানফ পর্যন্ত হাইওয়ে অনেক সুন্দর। রাস্তার দুই পাশেই বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। একটু পর পর দেখা যাবে গরু, মহিষ বা ঘোড়ার দল।

বানফ ন্যাশনাল পার্কে ঢোকার পর থেকেই সতর্ক থাকতে হবে ক্যামেরা নিয়ে। ভাগ্য ভালো হলে দেখা হয়ে যেতে পারে বিভিন্ন প্রজাতির ভালুক, হরিণ ও নানা ধরনের বন্য পশুর। আমি দুই প্রজাতির ভালুক ও হরিণ দেখেছি। তবে গাইড গাড়ি থেকে নামতে তো দেয়নি এমনকি গাড়ির জানালাও খুলতে দেয়নি। কারণ এরা নাকে লাফ দিয়ে গাড়ির ভেতর চলে আসতে পারে। বানফ ন্যাশনাল পার্কে ভালুকের আক্রমণ খুব সাধারণ ব্যাপার।

হাইওয়ে ৯৩। ১০০-১২০ মাইলের মধ্যে কোনো গ্যাস স্টেশনও চোখে পরবে না
হাইওয়ে ৯৩। ১০০-১২০ মাইলের মধ্যে কোনো গ্যাস স্টেশনও চোখে পরবে না

বানফ ন্যাশনাল পার্কের লেক লুইস, মোরেইন লেক ও বো লেক অবশ্যই দেখা উচিত। এসব লেকের পানির উৎস পাহাড়ের ওপরের বরফ গলা পানি। একেক লেকের পানির রং একেক রকম। কোনোটা গাঢ় সবুজ, কোনোটা হালকা নীল, আবার কোনোটা স্বচ্ছ।

বানফ ন্যাশনাল পার্কের মধ্য দিয়ে হাইওয়ে ৯৩-ধরে এগিয়ে গেলেই পৌঁছে যাবেন জাসপার ন্যাশনাল পার্কে। এই পার্ক রকি মাউন্টেনে গড়ে ওঠা ন্যাশনাল পার্কগুলোর মধ্যে আয়তনে বড়। এই পার্কে গেলে স্কাই ওয়াক আর কলাম্বিয়া আইস ফিল্ড মিস করা উচিত হবে না। কলাম্বিয়া আইস ফিল্ড কানাডিয়ান রকিসের বড় গ্লেসিয়ার। কলাম্বিয়া আইস ফিল্ড আলবার্টা এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রভিন্সকে ভাগ করেছে। যাদের হার্ট দুর্বল তাঁদের জাসপার ন্যাশনাল পার্কের স্কাই ওয়াকে যাওয়া উচিত নয়।

এ ছাড়া যেতে পারেন বানফ গন্ডোলাতে। এখানে রয়েছে কেবল কার ও অ্যাডভেঞ্চারাস জার্নি। কেবল কার ২ হাজার ২৮১ মিটার ওপরে চূড়ায় পৌঁছে দেবে আপনাকে। বানফ ট্যুর শেষ করতে পারেন হুডুস আর জনস্টোন ক্যানিয়নে হাইকিংয়ের মাধ্যমে। জনস্টোন ক্যানিয়নের পাহাড়ি ঝরনার স্বচ্ছ পানির স্রোত হাইকিংয়ের কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। হুডুস কানাডিয়ান রকিস ও বানফের মধ্যে পাওয়া কঠিন পাথর দ্বারা আবৃত পলিযুক্ত শিলা।

যদি হাতে সময় থাকে তবে বানফ সিটি ট্যুর এবং ক্যালগারি সিটি ট্যুর দিতে পারেন। ক্যালগারি শহর অনেক পরিচ্ছন্ন ও গোছানো। বো রিভারের পাড়ে গড়ে উঠেছে ক্যালগারি শহর। জুন মাসে ক্যালগারিতে সূর্যাস্ত হয় রাত ১০টায়। এখানে ১৩ লাখ মানুষের বাস।