সৈয়দ আব্দুল হাদীর গানে বিমোহিত শ্রোতারা

অনুষ্ঠানে বরাবরের মতোই সংগীতের মূর্ছনায় দর্শক-শ্রোতাদের বিমোহিত করেছেন গুণী শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী
অনুষ্ঠানে বরাবরের মতোই সংগীতের মূর্ছনায় দর্শক-শ্রোতাদের বিমোহিত করেছেন গুণী শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী

ঊনবাঙালের আয়োজনে প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর একক সংগীতানুষ্ঠান ‘এই পৃথিবীর পান্থশালায়’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৫ আগস্ট জ্যামাইকার একটি ভেন্যুতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বরাবরের মতোই সংগীতের মূর্ছনায় দর্শক-শ্রোতাদের বিমোহিত করেছেন গুণী শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী।

বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে কবি কাজী জহিরুল ইসলাম অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ইয়ে ভি এক কাহানি থা’, এটি একটি উর্দু চলচ্চিত্র, মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে। ছবিটি নির্মাণের কিছুদিন আগে এর পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দেন। সেই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক তরুণ ছাত্র গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। তিনি সেই তরুণকে তাঁর চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাকের প্রস্তাব করেন। সেই থেকেই শুরু। সেদিনের সেই তরুণ শিল্পীই আজকের বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি সৈয়দ আব্দুল হাদী। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৫৫টি বছর। এই সময়ে তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে জমা হয়েছে অনেক মুক্তো-মানিক। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

এরপর কাজী জহিরুল ইসলাম শিল্পীকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান। একই সঙ্গে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয় অনুষ্ঠান আয়োজনের স্বপ্নদ্রষ্টা জুবায়ের হোসেনকে। ঊনবাঙালের পক্ষ থেকে শিল্পীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান মিতা হোসেন। এরপরই শুরু হয় সংগীত। সৈয়দ আব্দুল হাদী শুরু করেন রবীন্দ্রনাথের গান, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ দিয়ে। পরে দর্শকদের আগ্রহে সাড়া দিয়ে তিনি আরেকটি রবীন্দ্রসংগীত ‘মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে’ পরিবেশন করেন। এর পর একে একে গেয়ে শোনান নিজের অনেকগুলো জনপ্রিয় বাংলা গান শোনান শিল্পী। একপর্যায়ে দর্শকদের অনুরোধে তিনি তাঁর মেয়ে তনিমা হাদীকে মঞ্চে ডাকেন।

দর্শক-শ্রোতাদের ভালোবাসা ও অভিবাদনে সাড়া দিচ্ছেন শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী
দর্শক-শ্রোতাদের ভালোবাসা ও অভিবাদনে সাড়া দিচ্ছেন শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী

তনিমা হাদী তাঁর বাবার গাওয়া বেশ কিছু গান করেন। দর্শকদের বিশেষ অনুরোধে বাবা-মেয়ে কিছু দ্বৈত গান করেন। অনুষ্ঠানের প্রায় শেষের দিকে এসে যখন তিনি ‘আছেন আমার মোক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার’ গানটি ধরেন তখন করতালিতে ফেটে পড়ে মিলনায়তন। সব শেষে হল ভর্তি দর্শক দাঁড়িয়ে দুই শিল্পীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইতে শুরু করেন, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি, ও আমার বাংলাদেশ প্রিয় জন্মভূমি’।

দুই ঘণ্টা মন্ত্রমুগ্ধের মতো গান শোনেন হল ভর্তি আড়াই শতাধিক দর্শক। ঊনবাঙালের এই আয়োজনে সহযোগী সংগঠন ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক। সোসাইটির পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীকে ফুল দিয়ে সম্মান জানান এইচ এম ইকবাল, শাহ মোফাচ্ছের আহমেদ, কাজী জাহাঙ্গীর আলম, শফিউদ্দিন কামাল, শহিদুল হক, গোলাম মোস্তফা, নাসির উদ্দিন সরকার, এস এম আব্দুর রউফ, সিরাজ উদ্দিন মোর্শেদ, সেলিম রেজা পাঠান, এম এ হাকিম খান, নাসির উদ্দিন, আল মামুন সরকার প্রমুখ ঊনবাঙালের প্রেসিডেন্ট মুক্তি জহির ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে গিয়ে এমন সুন্দর সুস্থ একটি অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী ও তনিমা হাদীকে ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ যাদের পাওনা তাঁরা হচ্ছেন আজকের দর্শক।

শিল্পীদের তবলায় সংগত করেন তপন মোদক, কী-বোর্ডে ছিলেন মাসুদ রহমান। শব্দ ব্যবস্থাপনায় ছিল বিডি সাউন্ড। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল সনম টিভি। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বাদ্যযন্ত্র শিল্পীদের, সহযোগী সংগঠনকে এবং মিডিয়া পার্টনারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।