ভালো কবিতা লেখার উপায়

আপনি নিয়মিত কবিতা লিখেন এবং নিজের কবিতাগুলো মানুষের মনে স্থান পেয়ে যাক, সেটাই আপনার প্রত্যাশা। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আপনার প্রত্যাশা পূরণের সবচেয়ে সহজ মাধ্যমের নাম হচ্ছে ফেসবুক। কিন্তু এখানেও অনেকেই ব্যর্থ হচ্ছেন। কবিতার পর কবিতা লিখে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে সেটা খুব সহজেই সম্ভব হবে—
১. যাঁরা কবিতা লিখেন, নিজের মনের খোরাক থেকে কবিতা লিখে থাকেন। তবে কবিতা সময় নিয়ে লিখতে হবে এবং অধিক যত্নশীল হতে হবে। যেমনি একজন গর্ভধারিণী মা দশ মাস দশ দিন একটি সন্তান অতি যত্নে গর্ভে ধারণ করে ভূমিষ্ঠ করেন। তেমনি একজন কবি অতি যত্নশীল হয়ে সময় নিয়ে সুচিন্তিতভাবে তার কবিতার জন্ম দেবেন। জোর করে প্রসব করালে যেমন বিকলাঙ্গ কিংবা মৃত সন্তান জন্ম নেয়, কবিতার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়।
২. সন্তান প্রসবের পর যেমন করে সন্তানকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করা হয়, তেমনি কবিতাকে নিজের সন্তানের মতোই পরিচর্যা করতে হবে। কবিতা লেখা শেষ হলে বানানগুলো ভালো মতো চেক করে দেখতে হবে। কোথাও কোন ভুল থাকলে, সেটা সংশোধন করে নিতে হবে।
৩. একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার পর জনসম্মুখে প্রদর্শন না করে প্রথমে যেমন অতি আপন মানুষ ছাড়া তেমন কাউকে দেখতে দেওয়া হয় না, তেমনি একটি কবিতা লিখে বানান ভুল চেক করে আপনার খুব কাছের কবি বন্ধুদের সামনে প্রদর্শন করুন এবং কবিতা সম্পর্কে যুক্তিসংগত মতামত নিন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে কোন পরিবর্তন প্রয়োজন মনে হলে, আপনি সেটা করে নিন। তবে হ্যাঁ, মতামতগুলো ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক হতে পারে। আপনি সবার মতামত অতি বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করুন। এতে করে আপনি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন।
৪. সন্তান ভূমিষ্ঠের কিছুদিন পর যেমন অতি যত্ন করে সাজিয়ে গুছিয়ে জনসম্মুখে প্রদর্শন করা হয়, এবারে আপনার কবিতাটিও তেমনি জনসম্মুখে প্রদর্শন করুন, মানে ফেসবুকে পোস্ট দিন। আপনার সন্তান দেখতে যেমন হোক, কেউ যেমন দেখতে কুৎসিত বলবে না, তেমনি আপনার কবিতা নিয়ে সাধারণত কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করবে না। তাই আপনার কবিতা সম্পর্কে সবার কাছে যুক্তিসংগত মতামত চাইতে পারেন। এতে করে পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানতে পারবেন এবং আপনি কবিতা লিখতে আরও যত্নশীল হতে পারবেন।
৫. আপনাকেই আপনার কবিতার যোগ্য মূল্যায়নদাতা হতে হবে। আপনাকে নিজেই মূল্যায়ন করে বের করতে হবে, আপনার লেখা কোন কোন কবিতাগুলো অন্যান্য কবিতার চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো এবং পাঠকের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য। আপনি এমন কিছু কবিতা নির্বাচন করে রাখুন, যেসব কবিতা কিছুদিন পর পর ফেসবুকে পোস্ট দেবেন। পাঠক যেন আপনার এই কবিতাগুলো ভুলে না যায়। আপনার এই ভালো মানের কবিতাগুলো পাঠককে বারবার পড়তে দিন। এক সময় দেখা যাবে, আপনার লেখা কিছু কবিতা পাঠক হৃদয়ে পাকাপোক্ত স্থান করে নিয়েছে। আপনার লেখা হাজার কবিতার মধ্যে একটি মাত্র কবিতা যদি পাঠক হৃদয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়, এটাই ধরে নিতে পারেন আপনার কবিতা লেখার সার্থকতা।
৬. ফেসবুকে অতিরিক্ত কবিতা পোস্ট করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। ফেসবুকে অতিরিক্ত কবিতা পোস্ট অনেক সময় আপনার পাঠকদের বিরক্তি সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত কবিতা পোস্টের কারণে আপনার অসংখ্য কবিতার ভিড়ে ভালো মানের কবিতাগুলো চাপা পড়ে যায়। তাই নিজের সেরা লেখাটি ফেসবুকে পোস্ট দিতে চেষ্টা করুন এবং অপ্রকাশিত কবিতাগুলো পরিচর্যা করতে থাকুন।
৭. পরিশেষে, বেশি বেশি করে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার কারণে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে। এতে করে অনেক উপমা দিয়ে কবিতা লেখা সম্ভব হয়। বিশেষ করে স্বনামধন্য কবিদের কবিতার বইগুলো মনোযোগ দিয়ে নিয়মিতভাবে পড়বেন। এতে খুব সুন্দরভাবে শব্দের অলংকার, ছন্দের ঝংকার ও নান্দনিক প্রকাশ করে কবিতা লেখা সম্ভব হবে।