সূর্যমুখীর বাগানে

সোফিয়া লরেনের সান ফ্লাওয়ার ছবিটি দেখার পর থেকেই সূর্যমুখীর বাগান দেখার ইচ্ছে জাগে মনে। সূর্যমুখীর বাগানের ছবি দেখার পর এর প্রতি একটা ভালোবাসাও জন্মায়। এবার গ্রীষ্মের ছুটিতে ভার্জিনিয়ায় সূর্যমুখীর বাগানে যাওয়ার সুযোগ হয়। বাগানে পৌঁছাতেই মন ভালো হয়ে গেল। সারা মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর সারি। এই ফুল এক নিমেষেই মনকে প্রজাপতির মতো চঞ্চল করে তোলে।
চারদিকে সবুজ পাহাড়, নীল আকাশ আর মাঝে হলুদ রঙের গালিচার মতো সূর্যমুখীর বাগান। টিকিট কেটে যাওয়ার পর তাঁরা সুন্দর সূর্যমুখীর প্রিন্ট করা একটা ছাতা দিলেন। সঙ্গে সুন্দর ফুলের ঝুড়ি। ছাতাটা মাথার ওপর ধরতেই মনে হলো সূর্যমুখীর বাগানের নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
সূর্যমুখী যাকে ইংরেজিতে ‘সান ফ্লাওয়ার’ বলা হয়। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলেই বাংলায় এমন নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু কেন এই ফুল সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে? এর সন্ধান করে পাওয়া যায়, গাছের বৃদ্ধি ও শারীরিক কার্যকলাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের হরমোন সাহায্য করে। এমনি একটি হরমোন অক্সিন। অক্সিন হরমোনের নানা কাজের মধ্যে রয়েছে কাণ্ড ও পাতার বৃদ্ধি। এই অক্সিন হরমোনই আবার ফটোট্রপিক ক্রিয়ার জন্য দায়ী। আলোর সঙ্গে উদ্ভিদের যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাই-ই হলো ফটোট্রপিক ক্রিয়া। অক্সিন হরমোনের যে পাশে সূর্যের আলো পড়ছে না অর্থাৎ যে পাশে ছায়া থাকে সে পাশে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি উদ্ভিদের যে অংশে থাকে সেখানে পি এইচ এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে এর সেলুলোজ কোষগুলো ফেটে যায় ও অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপই সূর্যমুখী ফুলকে সূর্যের দিকে ঘুরতে বাধ্য করে। উদ্ভিদে আলো ও অন্ধকারের এই ছন্দকে বায়োলজিক্যাল ক্লকও বলা হয়।
সূর্যমুখীর বেড়ে ওঠা দেখার মতো আকর্ষণীয় অন্য কিছু ভাবতে পারি না। বীজ থেকে ফুল এবং আবার বীজ পর্যন্ত, এই গ্রীষ্মের ফুলের পুরো জীবনচক্রটি কেবল সুন্দরই নয়, অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে কাজ করে। বাগানে একটি পপ রং সরবরাহ করে এবং সুস্বাদু বীজ উৎপাদন করে। তবে সূর্যমুখীর প্রেমে পড়ার জন্য আরও অনেক দুর্দান্ত কারণ রয়েছে, যেমন—
সূর্যমুখী বীজ প্রকৃতির নিখুঁত খাবার হতে পারে। এগুলো সেলেনিয়ামের একটি 3ভালো উৎস, যা ক্যানসারের কোষগুলোর বিস্তারকে বাধা দেয়। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই এবং অঙ্কুরিত সূর্যমুখী বীজ অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস।
সূর্যমুখী কাণ্ড কাগজ, পোশাক তৈরি করতে জ্বালানি হিসেবে এবং মাইক্রোস্কোপ স্লাইড মাউন্ট তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। রাশিয়ান ম্যামথ বীজের ঘাটতি ছিল, তাই মানুষ আমেরিকান জায়ান্ট বীজের পরিবর্তে এর ব্যবহার শুরু করলেন। আমেরিকার ৫০টি রাজ্যে সূর্যমুখী ফুল ফোটে। গ্রীষ্মে সবচেয়ে বেশি ফোটে। তাদের পরিসর কানাডা, উত্তর মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকা পর্যন্তও প্রসারিত।
মন খারাপের দিনে কিংবা মনকে রাঙানোর জন্য যে কেউ ঘুরে আসতে পারে সূর্যমুখীর এই বাগানে। যেমন আমার স্মৃতির পাতায় এই সূর্যমুখীর বাগান থেকে যাবে আজীবন।