প্রবাসে দেশি গয়নার শখের কারিগর

সবারই কিছু না কিছু শখ থাকে। কেউ শখ করে বাগান করেন, কেউ কাপড়ে নকশা করেন। আর শখের বশে দেবশ্রী পাল তুষ্টি বনে গেছেন গয়নার কারিগর।
কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া তুষ্টি ছোটবেলা থেকেই আঁকা আঁকি ভালোবাসেন। স্কুলে পড়ার সময় কুমিল্লার নজরুল মেমোরিয়ালে আর্ট শেখেন। ছবি আঁকার পাশাপাশি, ঘর সাজানোর টুকটাক উপকরণও তৈরি করেছেন। সে সময় পূজার আলপনা বা গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের ঘর সাজাতে সাজাতে ডাক আসত তুষ্টির।
‘আওয়ার লেডি অব ফাতেমা’ স্কুলের ক্লাস নাইনে পড়ুয়া উচ্ছল কিশোরীটি প্রিয় শহর, প্রিয় বন্ধু সব ছেড়ে ২০০৯ সালে পরিবারের সঙ্গে থিতু হন আমেরিকায়। শখ শিকেয় তুলে ঘড়ির কাটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে তাঁর প্রবাস জীবন।
২০১৭ সাল। তখন সেন্ট জোসেফ কলেজে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছেন তুষ্টি। চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার পর হাতে অখণ্ড অবসর। হঠাৎ একদিন চোখ আটকে যায় টিভিতে সুতোর কানের দুলের ওপর দেখানো অনুষ্ঠানে। পুরোনো শখ মাথায় চেপে বসল। ইউটিউবের টিউটোরিয়াল দেখে দিব্যি বানিয়ে ফেললেন এক জোড়া সুতোর দুল। তারপর অনলাইন থেকে প্লাস্টিকের ছাঁচ, সুতা, আঠা, পুঁতি অন্যান্য আরও প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে পুরো দমে শুরু হলো গয়না তৈরির কাজ।
গয়নার ঝাঁপি খুলতেই বেরিয়ে পরে ‘এসো হে বৈশাখ’, ‘গায়েহলুদ’, ‘দেবী’সহ একের পর এক বাঙালি ঐতিহ্যের থিমে তৈরি করা গয়না। রং বেরংয়ের প্রতিটি গয়না সচেতনভাবে তৈরি করা হয়েছে বাঙালিয়ানার পরশে। ছোট্ট ঝুমকো দিয়ে শুরু, একে একে তৈরি করেছেন হাতের বালা, গলার মালা, বড় কানের দুল সবই।
প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত দেবী সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশ থেকে ‘দেবী’ শাড়ি কিনে আনেন। পরে শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা কানের দুল বেশ প্রশংসা কুড়োয়। সেই থেকে ঝুঁকেছেন হাতে লেখা গয়নার দিকে। কার্ড বোর্ডের ওপর কাগজ সেঁটে তাতে রং তুলি দিয়ে লেখা হয়, পরে পাতলা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যাতে লেখা নষ্ট না হয়।
বর্তমানে নিউইয়র্কের একটি স্কুলে বিজনেস অ্যান্ড এইচআর ডিপার্টমেন্টে পূর্ণকালীন চাকরিতে করছেন তুষ্টি। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন শখের কারিগরি। হাতে তৈরি অন্যরকম এসব গয়না দেখে বিভিন্ন সময়ে অনেকেই পরামর্শ দিয়েছেন অনলাইন ব্যবসার। তবে ব্যবসায় অনীহা আছে তুষ্টির। সময়ের অভাব তো আছেই, ক্রেতার অভাবও এর পেছনে বড় একটি কারণ।
তুষ্টি বলেন, নিউইয়র্কের বাংলাদেশি মেলাগুলোতেও ক্রেতাদের নজর থাকে পাথরের অথবা ইমিটেশনের গয়নার দিকে। দেশীয় উপকরণে তৈরি গয়নার শিল্প মর্যাদা খুব কম লোকই বোঝে। বাংলাদেশে এসব গয়নার কদর আছে, সেখানে পণ্যের ডেলিভারিও এখানকার তুলনায় সহজ।
বাংলাদেশে থাকলে কি তাহলে গয়নার ব্যবসা করতেন? উত্তর আসে—হয়তো না। শিল্পী মনের খোরাক মেটাতে নিতান্তই শখের বসে করা এ কাজের বিনিময়ে আর্থিক লাভবান হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তাঁর।