বিশ্বকে বাঁচাতে নিউইয়র্কে স্কুলপড়ুয়াদের বিক্ষোভ

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

বিশ্বকে চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকে রক্ষার এটাই শেষ সুযোগ—এই বার্তা সামনে নিয়ে পরিবেশ বাঁচাতে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা শুরু করেছে নতুন আন্দোলন ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’। বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশে তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে জলবায়ু সংকট রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গতকাল শুক্রবার অভূতপূর্ব বিক্ষোভ ও জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আগামী সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে যে জলবায়ু শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তার আগে নবীন নাগরিকদের বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভের মূল লক্ষ্য বিশ্ব নেতাদের শুধু কাছে শেষ সুযোগের বার্তাটুকু পৌঁছে দেওয়া।

বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের এই অভিনব আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে ১৬ বছর বয়সী সুইডিশ পরিবেশবাদী কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ। গত সপ্তাহে সৌরশক্তিচালিত নৌযানে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে সে নিউইয়র্ক এসে পৌঁছায়। জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ বৈঠকে তার ভাষণ দেওয়ার কথা।

শুক্রবার নিউইয়র্কের ব্যাটারি পার্কে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে গ্রেটা বলে, ‘পৃথিবী জ্বলছে, বিলম্বের সময় নেই।’ বিশ্বনেতারা হয়তো তার কথায় কান দেবেন না, সে কথা উল্লেখ করে সে বলে, ‘তাঁরা যাতে আমাদের কথায় কান দেন, আমরা তা নিশ্চিত করব।’

শুক্রবারের বিশ্বব্যাপী এই বিক্ষোভ সব দিক দিয়েই ছিল অভূতপূর্ব। গত বছর অক্টোবরের এক শুক্রবার গ্রেটা প্রথমবারের মতো সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে জলবায়ু সংকট রোধের দাবিতে একাই বিক্ষোভ করে। সেই থেকে ‘ফ্রাইডে ফর দ্য ফিউচার’ (বা এফএফএফ) আন্দোলনের শুরু। বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষার্থীরা শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে জলবায়ু সংকট রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছে। শুক্রবারের বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ ছিল তারই অংশ।

বেলা একটার দিকে এই বিক্ষোভে অংশ নিতে এই প্রতিবেদক যখন ব্যাটারি পার্কের লাগোয়া ফোলি পার্কে পৌঁছান, হাজার হাজার ছেলেমেয়ের উপস্থিতিতে পার্কটি ততক্ষণে জমজমাট। অধিকাংশই স্কুলের ছাত্রছাত্রী, প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই রয়েছে সযত্নে নিজ হাতে বানানো প্লাকার্ড।

অভিভাবকদেরও অনেকে এসেছেন, কেউ কেউ শিশুদের বুকে জড়িয়ে অথবা স্ট্রলারে ঠেলে নিয়ে এসেছেন। একটি শিশুর হাতে প্লাকার্ডে লেখা, ‘ডোন্ট বার্ন আওয়ার ফিউচার (আমাদের ভবিষ্যৎ জ্বালিয়ে দিয়ো না)’। পাশে এক কিশোরী, তার হাতে প্লাকার্ডে লেখা, ‘নেক্সট ইয়ার আই ভোট (পরের বছর আমি ভোট দিতে পারব)’।

এ দিন নিউইয়র্কের স্কুল প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নিলে কোনো শাস্তি পাবে না। মেয়র বিল ডি ব্লাজিও নিজে বিক্ষোভে এসেছিলেন, কথাও বলেছেন। তবে অধিকাংশ বক্তাই ছিল স্কুল শিক্ষার্থী।

বক্তাদের একজন ছিল বাংলাদেশের স্কুলছাত্রী রেবেকা শবনম। হাজার হাজার শ্রোতাকে লক্ষ্য করে সে বলে, ‘আমার দেশ বৈশ্বিক উষ্ণতার শিকার, এই সংকটের ফলে লাখ লাখ মানুষ জলমগ্ন হয়ে বাস্তুহারা হবে। তাই জলবায়ু সংকট শুধু পরিবেশগত একটি ব্যাপার নয়, মানবাধিকারেরও ব্যাপার।’ রেবেকা বাংলাদেশের ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করে অবিলম্বে এই সংকট সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।

এই বিক্ষোভে অংশ নিতে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এসেছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিশোর কেভিন প্যাটেল। সে বলে, ‘এই লড়াইতে আপনারা হয় আমাদের সঙ্গে অথবা আমাদের বিরুদ্ধে।’ বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে সে বলে, ‘কোন দিকে থাকবেন সেটা আপনারাই ঠিক করুন।’

দিনের প্রধান বক্তা ছিল গ্রেটা থানবার্গ। অল্পবয়সী এ মেয়েটির উদ্যোগেই বিশ্বব্যাপী এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ব্যাটারি পার্কে উপস্থিত অনেকের হাতে ধরা প্লাকার্ডে ট্রাম্পের স্লোগানের প্রতি পরিহাস করে লেখা ছিল, ‘মেক আমেরিকা গ্রেটা অ্যাগেইন’।

বিকেলের দিকে গ্রেটা যখন ভাষণ দিতে ওঠে, তখন পার্ক কানায় কানায় ভরা। আয়োজকদের দাবি, আড়াই লাখ মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। দর্শকদের দিকে লাজুক হাসি উপহার দিয়ে গ্রেটা বলে, ‘সারা বিশ্বের নজর এখন আমাদের দিকে। বিশ্বের নেতাদের ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এখনো আছে। জাতিসংঘের শীর্ষ বৈঠকে সে সুযোগ তাঁরা পাবেন।’

মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে গ্রেটা ঘোষণা করে, বিশ্ব নেতারা পছন্দ করুন বা না করুন, পরিবর্তন আসছে।