আমিশ গ্রাম

বছর বিশেক আগে বিবিসিতে এক ডকুমেন্টারি দেখছিলাম। ডকুমেন্টারি বিষয় আমিশ মানুষ। আমি হতভম্ব হয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছি। যিনি ধারাবর্ণনা দিচ্ছেন, তাঁর কথা শুনে আমি অবাক! এই যুগেও এমন মানুষ আছে? তারপর ভাবলাম, এত অবাক হওয়ার তো কিছুই নেই? আমাদের দেশের কৃষক সমাজওতো এঁদেরই মতন। একমাত্র পার্থক্য আমিশদের বাস আমেরিকায় আর আমাদের দেশের হতদরিদ্র কৃষকের বাস বাংলাদেশে।

আমিশ সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়ে আমার কৌতূহল অনেক দিনের। টিভি, ইউটিউবে আমিশদের নিয়ে বেশ কিছু প্রোগ্রাম দেখেছি এবং তাঁদের জীবনধারা দেখে অবাক হয়েছি। একবিংশ শতাব্দীর এই যুগেও মানুষগুলো গাড়ি চালায় না, তাঁদের বাসাবাড়িতে কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই, তারা প্লেনে চড়ে না, নিজেদের ব্যবহার্য তেল, সাবান, শ্যাম্পু কাপড়চোপড় সবই নিজেরাই তৈরি করে। প্রায় তিন শ বছর আগে এরা পেনসিলভানিয়ায় বসতি শুরু করে। তিন শ বছর কম দিন নয়। এত দিনে এই পৃথিবী অনেকখানি বদলেছে, মানুষ চাঁদে গিয়েছে আর বছর দশেকের মধ্যে হয়তোবা মঙ্গল গ্রহে যাবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমিশ মানুষের জীবনযাত্রায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। সময় যেন এখানে থেমে গেছে। 

নিউইয়র্ক থেকে সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগল ঝাড়া তিন ঘণ্টা। দূরত্ব দু শ মাইলের কাছাকাছি। ল্যাংকাস্টার নামের ছোট্ট শহরটি বেশ ছিমছাম, চারদিকে ভালোমতো চোখ বোলালে বোঝা যায় এখানকার মানুষের জীবিকা কৃষিনির্ভর। মাইলের পর মাইল ভুট্টার খেত, টোবাকোর খেত। ল্যাংকাস্টার কাউন্টিতে বেশ বড় আকারের একটি আমিশ বাজার আছে। আমাদের সবার উদ্দেশ্য বাজার ঘুরে দেখা। পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে ঢুকলাম বাজারে। বাজারজুড়ে ছোট ছোট সব দোকানপাট। সেখানে স্যুভেনিরের দোকান আছে, আমিশদের বেকারি, মাংসের দোকান সবই আছে। আমিশ নারীরা বেকিংয়ে বেশ পারদর্শী। তাঁদের বানানো কেক, পেস্ট্রি কেনা হল, খাওয়া হল। যদিও ডায়াবেটিসের কারণে আমি হতাশ চোখে সবার খাওয়া দেখলাম, নিজে কিছুই খেলাম না। বাজারে উদ্দেশ্যহীন এদিক-ওদিক হাঁটছি, হঠাৎ করেই একটি জেলির দোকান চোখে পড়ল। নানান পদের জেলি থরে থরে সাজানো। একেকটা বয়ামের দাম পাঁচ ডলার পঞ্চাশ সেন্ট। আমি স্ট্রবেরি আর এপ্রিকট ফ্লেভারের দুটো জেলি কিনলাম।

আমিশ দোকানি বলল, তুমি যদি তিনটি জেলি নাও, তাহলে ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা আছে। তৃতীয় জেলির জন্য তোমাকে দিতে হবে মাত্র তিন ডলার। আমি আরেক বয়াম জেলি কিনলাম। সেই জেলি আবার মরিচের তৈরি। খেতে ঝাল ঝাল। একসময় আমিশ বাজার দেখা শেষ হল। আমাদের বর্তমান গন্তব্য গাইডেড আমিশ কান্ট্রি ট্যুর। বাসে চড়ে পুরো আমিশ কান্ট্রি ঘুরে দেখা। বাসের ড্রাইভার কাম ট্যুর গাইড মধ্যবয়সী আমেরিকান নারী। তিনি বাস চালাবেন তাঁর সঙ্গে চলবে ধারাভাষ্য। সবাই বাসে চেপে বসলাম। গাড়ি চলতে শুরু করল, চিকন সরু রাস্তা। দুটো গাড়ি পার হতে পারে এমন প্রস্থ। বাসের ড্রাইভার মাইক্রোফোনে আমিশদের সম্পর্কে নানান তথ্য দিচ্ছেন।

১. আমিশ মানুষদের পড়াশোনা এইট গ্রেড পর্যন্ত। তারা এর বেশি পড়াশোনা করে না। তাঁদের নিজস্ব স্কুল আছে, সরকারি স্কুলে তারা যায় না। স্কুলে যে শিক্ষক তাঁদের পড়ান, তাঁর নিজের পড়াশোনাও এইট গ্রেড পর্যন্ত। আমিশ স্কুলে একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ থাকে। প্রথম গ্রেড থেকে এইট গ্রেড পর্যন্ত সবাই একই ক্লাসে বসে। ১৪/১৫ বছর বয়সে তাঁদের ছাত্রজীবনের সমাপ্তি ঘটে। ২০/২১ বছর বয়স পর্যন্ত এঁরা পরিবারের লোকজনকে খেত কৃষিতে সাহায্য করে এবং ২১/২২ বছর বয়সে বিয়ে করে। আমিশ সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় না বললেই চলে।

২. আমিশদের যৌথ পরিবার। তারা জন্মনিয়ন্ত্রণবিরোধী। প্রতিটি আমিশ পরিবারে সন্তান–সন্ততি অনেক। গড়ে ৫–৭ জন। তারা মনে করে, অধিক সন্তান ঈশ্বরের আশীর্বাদ। জীবনযাপনে তাদের কাছে পরিবার ও খেতখামার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরপরই আছে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আছে নিজস্ব উপাসনালয়। তবে রোববারটা তারা রাখে গির্জার জন্য। রোববারে কেউ দোকান খোলে না, খেতেও যায় না। 

৩. আমিশ পুরুষের বেশির ভাগই চাষি। তাঁদের উৎপাদিত শস্য ভুট্টা, সয়াবিন ও টোবাকো। যারা চাষাবাদ করে না, তারা আসবাবপত্র বানায়। অতি টেকসই সেসব আসবাবপত্র ১০০–২০০ বছর বংশ পরম্পরায় ব্যবহার করা যায়।

৪. ল্যাংকাস্টার কাউন্টিতে প্রতিটি আমিশ বাড়ি চেনার সহজ উপায় হচ্ছে সবুজ রঙের জানালার পর্দা। অন্য কোনো রঙের পর্দা আমিশরা ব্যবহার করে না। কেন কে জানে?

৫. আমিশদের যাতায়াতের বাহন ঘোড়ার গাড়ি। প্রতিটা বাড়ির সামনে একটা করে ঘোড়ার গাড়ি আছে, যা ছাই রঙের। এক একটির মূল্য চার থেকে পাঁচ হাজার ডলার। আমিষরা নিজেদের মানুষজনের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করে, দূরে কোথাও বেড়াতে যায় না। লাখ লাখ আমিশ মানুষ আছে যারা জীবনে কখনো ল্যাংকাস্টার কাউন্টির বাইরে বের হয়নি!

৬. আমিশদের নিজস্ব ভাষার নাম পেনসিলভানিয়া ডাচ, যা একটি জার্মান ডাইলেক্ট। নিজেদের মধ্যে তারা ওই ভাষাতেই কথা বলে তবে তারা ইংরেজি ভাষায়ও কথা বলে।

৭. আমিশরা সরকারি কোনো সাহায্য (ফুডষ্ট্যাম্প, ফ্রি মেডিকেল) এসবের কোনো সুযোগ নেয় না। এটা তাদের ধর্মীয় চেতনাবিরোধী। বিস্ময়কর ব্যাপার হল, আমিশদের কোনো মেডিকেল ইনস্যুরেন্স নেই। প্রতিটি পরিবার বছরে দুবার গির্জায় অনুদান দেয়। চার্চ সেই অর্থ নিজেদের তহবিলে রাখে। কমিউনিটির কেউ অসুস্থ হলে সেই অর্থ থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসার জন্য যদি কোনো রোগীকে প্লেনে চড়তে হয়, তখন চার্চের পাদরি বিশেষ বিবেচনায় অনুমতি দেন।

৮. যেসব আমিশ পুরুষের দাঁড়ি আছে তারা বিবাহিত।

৯. আমিশরা রেডিও, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, টিভি কিছুই ব্যবহার করে না। শুধু যারা ব্যবসায়ী তাঁদের বাড়িতে টেলিফোন আছে, তবে সেটি মূল বাড়ির বাইরে।

১০. আমিশরা নিজেদের গোত্রের বাইরের মানুষকে ইংলিশ ম্যান বলে সম্বোধন করে।

১১. আমিশদের ব্যবহৃত বাইসাইকেল সাদৃশ্য স্কুটারে কোনো প্যাডেল নেই।

কারা এই আমিশ?
সুইজারল্যান্ডের জ্যাকব আম্মান ছিলেন ভিন্ন মতবাদের খ্রিষ্টান ধর্মযাজক ও একজন মন্ত্রী। ১৬৯৩ সালে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রকৃত বাইবেলীয়’ জীবনধারার একটা মতামত প্রকাশ করেন তিনি। এই মতের সঙ্গে মিলে যারা তাঁর অনুসারী, পরে তারাই পরিচিত হলো আমিশ নামে। তাদের কিছু লোক ছড়িয়ে পড়ল আমেরিকা, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে। গত দুই শ বছরে তাদের সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি। আমেরিকায় পেনসিলভানিয়ার মাধ্যমে শুরু হয় আমিশদের অভিবাসন। পরে ওহাইও, ইন্ডিয়ানা, উইসকনসিন, নিউইয়র্ক, মিশিগান, মিজৌরি, কেনটাকি—এসব অঙ্গরাজ্যেও বসবাস শুরু করে তারা। ১৯২০ সালের জনমত জরিপে পুরো আমেরিকায় তাদের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারের মতো। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখে। ১৯৫০ সালের পর নিজেদের উত্তর পুরুষ ছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মের মাত্র ৭৫ জন যুক্ত হয়েছে আমিশ জীবনধারায়। তবে এখানেও আছে বিভাজন। আমেরিকায় ২৫ রকম আচারিক গির্জা আছে তাদের। নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত তারা। প্রতিটি গোত্রের আছে নিজস্ব কিছু সংস্কার ও বিধিমালা। এর বাইরে কেউ যায় না।

আমাদের ভাড়া করা ট্যুর বাসটি সবাইকে এক আমিশ ফার্মের সামনে নামিয়ে দিয়েছে। নামার সময় মধ্যবয়সী শ্বেতাঙ্গ নারী গাড়িচালক বলল, তোমাদের হাতে ২০ মিনিট সময় আছে, যা দেখার দেখে নাও। তবে আমিশদের বানানো প্রেটজেলস খেতে ভুলবে না, আর তাঁদের কোনো ছবি তুলবে না।

আমরা সায় জানিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। নামার পর বিস্মিত চোখে চারপাশটা দেখছি আর মনে মনে বলছি, এ কোথায় এলাম? চারদিকে ভুট্টার খেত। প্রতিটা গাছের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট! শস্য দেখে মনে হল, আমেরিকার অগ্রহায়ণ মাস চলছে। আমাদের দেশের সোনালি ধানের ফসলের মতন সোনালি ভুট্টার ফসল।

গরুর গোবর, বিকট গন্ধ। পাকা শস্যের ঘ্রাণ নাকে লাগছে, মনে হচ্ছে বাংলাদেশের কোনো গ্রামে এসে পড়েছি। বিচিত্র শোনালেও সত্য এই গন্ধ আমার ভালো লাগছে। গ্রাম তো এমনই হবে। যা হোক। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছি, ঠিক তখনই লক্ষ্য করলাম আমার সামনের জমিতে এক আমিশ কৃষক তিনটা ঘোড়া আর লাঙল নিয়ে হাল বাইছে। ঘোড়াগুলো অত্যন্ত বলশালী। আমি বাংলাদেশের মানুষ, সারাটা জীবন গরু দিয়ে হাল চাষ করতে দেখেছি, ঘোড়া দিয়েও যে হাল বাওয়া যায় সেটা আমার জানা ছিল না। ঘোড়ার পেছনে যে লাঙল লাগানো, সেটি লোহার তৈরি। লাঙলের দুপাশে দুটো চাকাও আছে। দেখে মনে হল হাই-টেক লাঙল! যে লোকটি হাল বাইছে, সেও আমার মনে যথেষ্ট আগ্রহের সৃষ্টি করেছে, আমি তাঁর দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছি। বিগত দুই যুগে এমন কাউকে আমেরিকায় দেখিনি কিংবা চোখে পড়েনি। আমার বাস নিউইয়র্ক নামের এক কংক্রিটের জঙ্গলে, যেখানে এসব অনুপস্থিত!

লোকটির উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট, তাঁর হালের ঘোড়ার মতন সে নিজেও বলশালী, চমৎকার স্বাস্থ্যের অধিকারী! লোকটির মুখ ভর্তি হালকা বাদামি রঙের দাঁড়ি, তবে গোঁফ নেই। তাঁকে দেখাচ্ছে আমাদের দেশের হুজুরদের মতো। লোকটির গায়ের রং ধবধবে ফরসা, তবে তীব্র রোদের কারণে চেহারাখানা গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে। তাঁর মুখটা ঘামে ভেজা, চোখগুলো ক্লান্ত, চুলের জুলফির দুপাশ দিয়ে ঘাম বেয়ে নামছে। লোকটির পরনে হালকা বেগুনি রঙের হাফ শার্ট, সঙ্গে কালো প্যান্ট। মাথায় বেত দিয়ে বানানো বিশেষ ধরনের হ্যাট। হ্যাটটি দেখতে অনেকটা টেক্সান স্টেটসন হ্যাটের মতন। লোকটির পরনের প্যান্টে কোনো বেল্ট নেই, কালো রঙের সাসপেন্ডর বেল্টের কাজ সারছে। সাসপেন্ডের দুই ফিতা দু কাঁধের ওপর ঝুলে আছে।

আমি পকেট থেকে ফোন বের করলাম। উদ্দেশ্য একটা ছবি তুলব, ঠিক তখনই ড্রাইভারের কথা মনে পড়ল, আমিশ মানুষ ছবি তুলতে পছন্দ করে না। এমনকি তাঁদের বাসাবাড়িতে গেলেও কোনো ছবি চোখে পড়বে না! তাঁদের জীবনধারা আর বিশ্বাসের প্রতি সম্মান রেখে আমি ফোনটি পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম। দলের সবাই তখন প্রেটজেলস খেতে ব্যস্ত। আমি নিজেও খেলাম। এমন উপাদেয় প্রেটজেলস এর আগে কখনো খাইনি। আবারও গাড়িতে চড়ে বসলাম। বর্তমান গন্তব্য আমিশ ফার্ম।

আমিষদের ফার্মগুলো বিশাল, যা সাধারণত মূল বাড়ির কাছেই থাকে। সেখানে ঘোড়ার আস্তাবল আছে, গরুর ঘর আছে। সোজা বাংলায় যাকে বলে গোয়াল ঘর। এঁদের একেকটা গরু বিশাল আকৃতির। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে গরুগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি।

আমিশ ফার্ম দেখা শেষ হল, ওঁদের বাড়িঘরই বা বাদ যাবে কেন? ষোলো কলা পূর্ণ হোক! এবার আমিশ বাড়ি দেখা আর ঘোড়ার গাড়ি চড়ার পালা। বাড়ি দেখার আগে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বসলাম। গাড়ির চালক ৮২ বছর বয়সী আমিশ ভদ্রলোক। কথাবার্তায় অত্যন্ত রসিক। আমাদের পুরো বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১১ জন। ঘোড়ার গাড়িতে ১০ জনের বেশি ধরে না। আমার ভায়রা গাড়িতে উঠল না। সে এর আগে দুবার ঘোড়ার গাড়ি চড়েছে।

যাত্রা শুরু হল। আমি আর আমার আরেক ভায়রা বসেছি ড্রাইভারের পাশে সামনের আসনে চালকের পাশে। হেলে-দুলে ঘোড়াটি আমাদের নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঘোড়ার চালক বকবক করেই যাচ্ছে। এক বাড়ির সামনে থামলাম। চালক ভদ্রলোক বাড়ির দিকে হাত ইশারা করে বললেন, ওই যে বাড়িটি দেখছ, ওই বাড়িতে আজ থেকে ৬১ বছর আগে অতি রূপবতী এক মেয়ে বাস করতো। কেউ কি বলতে পারবে, ওই মেয়েটি কে? আমি হেসে বললাম, তোমার স্ত্রী। চালক হেসে সায় জানাল।

আমিশ লোকেরা তাঁদের ঘোড়ার ভালো যত্ন নেয়। একপর্যায়ে আমি চালককে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা এই ঘোড়ার বয়স কত। চালক বলল, ২০ বছর। ঘোড়া সমাজে সে আমার মতনই একজন প্রৌঢ়! বৃদ্ধ ঘোড়াটি আমাদের নিয়ে এক ব্রিজের ওপর উঠল। বুঝতে পারলাম, বেচারার কষ্ট হচ্ছে। ঘোড়া যে ঘামে সেটা আমার জানা ছিল না। দেখলাম, ঘোড়ার পেটের দিকটা ঘামে ভেজা। ব্রিজে ওঠার আগ মুহূর্তে আমার দুই মেয়ে এক লাফে ঘোড়ার গাড়ি থেকে নেমে পড়ল, তাঁদের দেখাদেখি আমার শালিকারা। তারা বৃদ্ধ ঘোড়াটিকে কষ্ট দিতে চায় না। পুরো ব্যাপারটি ঘোড়ার চালককে বিস্মিত করেছে।

আমিশদের ঘরবাড়ির সাজসজ্জা একেবারে সাদামাটা। তাঁদের শোয়ার ঘরের বিছানা দেখে আমার নানাবাড়ি, দাদা বাড়ির বিছানার কথা মনে পড়ল। দেখতেও মোটামুটি এক!

আমিশ ভিলেজ দেখে রাতে নিউইয়র্কে ফিরছি। স্ত্রীকে বললাম, চলো এক কাজ করি, বাড়িঘর সব বিক্রি করে আমিশদের এলাকায় একটা বাড়ি কিনে ফেলি। সে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, খেতে কে কাজ করবে, তুমি? তোমার মতন অলস লোক? আমি বললাম, না। এক আমিশকে জমিজমা ভাড়া দিয়ে দেব। সে চাষবাস করবে, বছর শেষে টাকা দেবে। আমার স্ত্রীর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো, আমার প্ল্যানটা তার পছন্দ হয়েছে!