ট্রাম্প-ইউক্রেন তদন্ত, তথ্য চেয়ে হোয়াইট হাউসকে চিঠি

ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি।

ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন তদন্তে হোয়াইট হাউসের কাছে তথ্য চেয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টেলিফোন কথোপকথনের এ তথ্য চাওয়া হয়েছে।

আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, হোয়াইট হাউসকে দেওয়া ডেমোক্র্যাটদের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা গভীরভাবে দুঃখিত যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের এবং জাতিকে এ অবস্থায় ফেলেছেন। তাঁর কর্মকাণ্ড এই সপিনা ইস্যু করার দিকে আমাদের ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় রাখেনি।’

প্রমাণ হস্তগত করার নির্দেশ সংবলিত এই সপিনা স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার ইস্যু করেছেন কংগ্রেসের নজরদারি, গোয়েন্দা এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক ডেমোক্র্যাট কমিটিগুলোর চেয়ারম্যানরা।

হোয়াইট হাউসের তথ্যসচিব স্টেফানি গ্রিশাম সপিনাটিকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেছেন, এতে ‘কোনো পরিবর্তন আসবে না’।

এ ছাড়া রেকর্ড পেতে একটি পৃথক অনুরোধ পাঠানো হয়েছে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে। ওই চিঠিতে মাইক পেন্স ট্রাম্পের ইউক্রেন ফোনালাপে ‘কোনো ভূমিকা পালন করে থাকলে’ তা স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে।

ট্রাম্প-ইউক্রেন ফোনালাপের বিষয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় আলোড়ন তোলা অভিযোগ থেকে।
হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগে বলা হয়, গত ২৫ জুলাই ইউক্রেনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেন ট্রাম্প। ফোনে তিনি ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে জেলেনস্কিকে চাপ দেন।

বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর শীর্ষ আইনজীবীর কাছে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি সিআইএর একজন কর্মকর্তা। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে হুইসেলব্লোয়ারের পরিচয় গোপন রাখাসহ তাঁর আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।

ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির ব্যাপারে সে দেশের সরকার যে তদন্ত শুরু করে, তা বন্ধে তিনি (বাইডেন) চাপ প্রয়োগ করেন।

হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগের বিষয়টি সামনে আসার পর ইউক্রেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসনযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না, তা তদন্তে কমিটি করেছেন ডেমোক্র্যাটরা।

হুইসেলব্লোয়ারের আরেকটি অভিযোগে ওই ফোনালাপের বিতর্কিত অংশ ধামাচাপা দিয়ে হোয়াইট হাউস ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করেছে বলা হয়।

হোয়াইট হাউসকে দেওয়া ডেমোক্র্যাটদের চিঠিতে সেই বিষয়টিও তুলে আনা হয়। এতে বলা হয়, ফোনালাপের সঙ্গে সম্পর্কিত একাধিক অনুরোধে বাধা সৃষ্টি করছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘অসহযোগিতা, প্রতিবন্ধকতা ও ধামাচাপা’ দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন।

অভিশংসন তদন্তের ব্যাপারে গতকাল ট্রাম্প প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, তাঁকে অভিশংসিত করার জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের হাতে ভোট রয়েছে। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে তিনি জয় পাবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন।

ট্রাম্পের এমন ভবিষ্যদ্বাণী করার কারণ হচ্ছে, তাঁকে অভিশংসন করার প্রস্তাব ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে পাস হলে তা সিনেটে অনুমোদনের জন্য উঠবে। সিনেটে ওই প্রস্তাব পাস হতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাগবে। আর রিপাবলিকবান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে তা পাস হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

বেশির ভাগ রিপাবলিকান ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছেন। যদিও দুজন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।

২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডকে ‘আতঙ্কজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ট্রাম্প জো বাইডেন ও তাঁর ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে ইউক্রেন ও চীনকে তদন্ত করার আহ্বান জানানোর পরদিন এই মন্তব্য করেন রমনি।