মায়াজাল

ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলানোর অভ্যাস আমার কোনো কালে না থাকলেও আজ সূর্যোদয় দেখতে ছাদে এসে বার কয়েক চোখ কচলাতেই হলো। কিন্তু তারপরও কেন জানি আমার মনে জাগা বিস্ময়ের বিন্দুমাত্র উবসান হলো না।
তিন মাসেরও বেশি সময় পর সেমিস্টার ফাইনাল শেষ করে কাল রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরেছি। ফেরার পথে অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম, যে ঘোরের মুখোমুখি আগে কখনো হয়েছি বলে মনে পড়ে না। ভেবেছিলাম ঘুম হলে সেটি কেটে যাবে। কিন্তু এখন দেখছি তা মোটেও কাটেনি, বরং তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ঘোর কাটেনি বলে ভুল দেখছি না তো, সেটি নিশ্চিত হতেই আমার চোখ কচলানি।
কাল রাতে জামালপুর স্টেশনে যে সহযাত্রীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়েছি এবং ট্রেন ছাড়ার পরও যার চলে যাওয়া দেখে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছি, তাকেই এখন পাশের ছাদে দেখে বিস্ময়ে ঠিক থাকতে পারছি না। বরং এমন এক অনুভূতি হৃদয়ে ভর করছে, যা কাল রাতেও তার সঙ্গে কথা বলা এবং চোখাচোখির সময়ও ভর করেনি। সে আমার হতবিহ্বল অবস্থা দেখে কেমন মিটিমিটি হাসছে। ভেজা চুলের গোছা থেকে নীল তোয়ালে খুলে তারে শুকাতে দেওয়ার সময় আমার অমন চাহনি দেখে সে তার হাসি আড়াল করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারল না। দাঁত বের না করেও তার সেই অদ্ভুত সুন্দর হাসির ভঙ্গি দেখে আমি ঠিক থাকতে পারলাম না। কাল রাতে তার নিষ্ঠুরভাবে চলে যাওয়া দেখেছি। আজ আর সে রকম কিছু চাই না বলে তার হাসিকে মনের ফ্রেমে বন্দী করে নিজেই সিঁড়ির পথ ধরলাম।
সারা সকাল আর দুপুর কাটল অদ্ভুত এক অনুভূতিকে সঙ্গী করে। মা একবার বলে গেল, ‘তোকে এমন লাগছে কেন? কাল রাতেও তোর চেহারা কেমন অন্য রকম দেখেছি।’ আমি মায়ের কথার কোনো উত্তর খুঁজে পাইনি।

২.
এখন বিকল পেরিয়ে আমাদের উকিলপাড়ায় সন্ধ্যা নামছে। এই সময়ে আমি ছাদে উঠেছি আমার সহযাত্রীর দেখা পাব বলে। আশ্চর্য, আমার সেই আশা পূরণ হলো! তাকে এখন ঠিক রমণী রমণী লাগছে। কিন্তু আমার সহযাত্রী তো ছিল অষ্টাদশী! তবু সেই তাকে কিশোরী ভেবে যখন আমি বিহ্বল হয়ে আছি, ঠিক সেসময় তিথি আপুর ডাকে যেন আমার চেতনা ফিরল। আপু তাকে দেখিয়ে বলল, ‘তোমার ভাবি।’
আমি আমাদের ভাবি, মানে মিসেস শাহিন কিংবা আমার সহযাত্রীর পানে ফের চাওয়ার সাহস করিনি।