ট্রাম্পের অভিশংসন তদন্ত শুরুর বিষয়ে প্রস্তাব পাস

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর লক্ষ্যে দেশটির প্রতিনিধি পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। অভিশংসন তদন্তের পদক্ষেপটি কীভাবে আরও গণ পরিসরে আনা যাবে, এর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে প্রস্তাবে। প্রেসিডেন্ট অপসারণ হবে কি হবে না, সে ভোট নয় এটি।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি পাস হয়েছে। ডেমোক্রেটিক নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রক্রিয়ার পক্ষে দলটির এটি প্রথম পরীক্ষা। হোয়াইট হাউস এই প্রস্তাব পাসের নিন্দা জানিয়েছে।

আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, প্রতিনিধি পরিষদে সব রিপাবলিকান সদস্যের সঙ্গে মাত্র দুজন ডেমোক্র্যাট এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেন। ওই দুই ডেমোক্র্যাট সদস্য যে দুটি জেলার প্রতিনিধিত্ব করছেন, সে দুটিতে ট্রাম্প ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সহজেই জয়ী হয়েছিলেন।
প্রস্তাবে কংগ্রেসনাল তদন্তের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের আইনজীবীদের আইনি লড়াইয়ের অধিকার দেওয়া হয়েছে।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অপ্রমাণিত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চাপ দিয়েছিলেন। জো বাইডেনের ছেলে ইউক্রেনের গ্যাস কোম্পানি বুরিসমায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন।

ট্রাম্পের ভাষায়, ওই গ্যাস কোম্পানিতে থাকার সময় বাইডেনের ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল এবং বাইডেন ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেই দুর্নীতির তদন্ত বন্ধ করেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি ওই তদন্ত আবারও শুরু করতে চাপ দেন এবং এই চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে তিনি ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখেন।

তবে ট্রাম্প জানান, তিনি কোনো অন্যায় করেননি।

প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি গতকাল বৃহস্পতিবার পাস হয়। ছবি: রয়টার্স
প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি গতকাল বৃহস্পতিবার পাস হয়। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এই ফোনালাপের ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ে একটি হুইসেলব্লোয়ার বা সতর্কতাকারী ব্যক্তির অভিযোগ থেকে। এ নিয়ে হইচই হলে হোয়াইট হাউস টেলিফোন আলাপচারিতার ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করে। তবে ওই হুইসেলব্লোয়ার আরেকটি অভিযোগে জানান, গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দিয়ে ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করা হয়েছে। হোয়াইট হাউস বিষয়টি ধামাচাপা দিচ্ছে।
ওই আলাপচারিতার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে ওই বিষয়ে তদন্তের শুনানি বন্ধ করে দেওয়ায় ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই শুনানিতে রিপাবলিকানরাও অংশ নিয়েছিলেন। তবে ডেমোক্র্যাটরা জোর দিয়ে বলেন, তদন্তটি প্রকাশ্যে আনার লক্ষ্যে তাঁদের আরও বেশি সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এ–বিষয়ক কিছু গোপনীয় রাখার অভিযোগও অস্বীকার করেন ডেমোক্র্যাটরা।

প্রস্তাবটি পাসের মধ্য দিয়ে তদন্তকে একটি নতুন পর্যায়ে নিয়ে আসা হলো। এর মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের সুপারিশ সংবলিত ধারাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি তা ঘটে এবং প্রতিনিধি পরিষদ যদি ধারাগুলো পাস করতে পারে, তাহলে সিনেটে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।

পাস করা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা কমিটি আসছে সপ্তাহগুলোতেই প্রকাশ্যে শুনানি করবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত ফলাফলের প্রতিবেদন প্রতিনিধি পরিষদের বিচার বিভাগীয় কমিটিতে পাঠানো হবে। কমিটি ওই প্রতিবেদনের ওপর নিজস্ব প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হবে। কমিটি ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব, অভিশংসনের ধারা অথবা অন্য যেসব বিষয় যথার্থ মনে হবে, সে–বিষয়ক সুপারিশগুলোর’ ওপর প্রতিবেদন তৈরি করবে।

বিচার বিভাগীয় কমিটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবীরা থাকতে পারবেন।

রিপাবলিকানরা নথি ও সাক্ষীদের ব্যাপারে সমন জারি করতে পারবেন। যদিও দুটি প্যানেলই ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় রিপাবলিকানরা যে বাধাগ্রস্ত হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রস্তাব পাসের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, এর মাধ্যমে ‘সত্যের ওপর ভিত্তি করে’ ট্রাম্পের অভিশংসন হবে কি হবে না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন সদস্যরা। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কেন সত্যকে ভয় পাচ্ছেন রিপাবলিকানরা।’

অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি বলেছেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে সরানোর চেষ্টা করছেন, কারণ, তাঁরা ভীত যে তাঁরা ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে তাঁকে (ট্রাম্পকে) পরাজিত করতে পারবেন না।’