জমজমাট নবান্ন উৎসব

নবান্ন উৎসবে শিল্পাঙ্গনের শিল্পী ও কলাকুশলীরা
নবান্ন উৎসবে শিল্পাঙ্গনের শিল্পী ও কলাকুশলীরা

গত বছরের ধারাবাহিকতায় নিউইয়র্কে শিল্পাঙ্গনের উদ্যোগে দিনব্যাপী জমজমাট নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১০ নভেম্বর লং আইল্যান্ডের লেভিটটাউন কমিউনিটি হলের বৃহৎ পরিসরের মিলনায়তনে এই আয়োজন করা হয়।
শিল্পাঙ্গন নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সাধনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা ও উপস্থাপন করে থাকে। শিল্পাঙ্গনের শিল্পী, পৃষ্ঠপোষক, উপদেষ্টা ও কর্মীদের সম্মিলিত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে নবান্ন উৎসবের সূচনা হয় দুপুর একটায়। প্রদর্শনী ও পিঠা উৎসবের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করা হয়। উত্তর আমেরিকার প্রখ্যাত বিপণি প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ, শাড়ি, গয়না ও খাবারের মেলা সুধীজনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বেলা সাড়ে তিনটায় নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করা হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে। শিল্পাঙ্গনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রেজিনা কবির উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উপস্থাপক ও আবৃত্তি শিল্পী সাবিনা শারমিন নিহার ও লিপি দেওয়ানের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় জাঁকজমকপূর্ণ উৎসবের সূচনা হয় মঞ্চে। বাংলার চিরন্তন প্রকৃতির আদলে মঞ্চ সজ্জা করেন বাশিরুল হক। শিল্পাঙ্গনের পক্ষ থেকে অতিথি ফালাহ আহমেদ ও আকতার কামালকে শিল্পাঙ্গনের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানের সঙ্গে প্রধান অতিথি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করেন।
নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক শাহপার খানের স্বাগত বক্তব্যের পর অতিথি রেজিনা কবির সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। শিল্পাঙ্গনের পক্ষ থেকে সভাপতি আমর আশরাফ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এরপরই শিল্পাঙ্গনের নবান্ন উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়।
মাঝে ১০ মিনিটের বিরতি ছাড়া রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলে। শিল্পাঙ্গনের নিজস্ব পরিবেশনার পাশাপাশি আমন্ত্রিত তারকা শিল্পীদের পরিবেশনাও ছিল। শিল্পাঙ্গনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরা একে একে পরিবেশন করেন কবিতা ‘জিহ্বা’, নৃত্য ‘চল বাংলাদেশ’, পুথি ‘নবান্নের বিয়ে’, কাব্যালেখ্য ‘আনন্দধারা’, গীতিনাট্যালেখ্য ‘বৃষ্টির প্রতীক্ষায়’, নৃত্যালেখ্য ‘উৎসবে ও আনন্দে নবান্ন’ এবং নবান্নের বিশেষ আলেখ্যানুষ্ঠান ‘সদা থাকো আনন্দে’।
শিল্পাঙ্গনের শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন জিনাতুন নাহার, জাহিয়া হাসান, নুসায়বাহ কবির, সামায়রা মাহিবা, সোনিয়া হক, সোনিয়া পান্না, শিরীন আখতার, আফরিন খান, ফাহমিদা ইয়াসমিন, ইশরাত কুমু, ছন্দা খান, ফারজানা সুলতানা শরমিন, শাহপার ইসলাম, মাহনাজ হাসান, সামিনা আশরাফ, সায়েম শাহরিয়ার, মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, শাহপার খান, তাহরিনা পারভীন, রাফিয়া খান, অশোক চৌধুরী, শফিউল আলম, মোহাম্মদ শানু, লতিফুর রহমান, আহমেদ নাসিম, সৌগত সরকার ও বিদিশা দেওয়ানজী।
গীতিনাট্যালেখ্য পরিকল্পনা, পরিচালনা ও শিল্পাঙ্গনের ভাব সংগীতের সুর করেন বিদিশা দেওয়ানজী। শিল্পাঙ্গন একাডেমি সংগীত বিভাগের প্রশিক্ষণ ও আলেখ্যানুষ্ঠানের পরিকল্পনা এবং পরিচালনা করেন শিল্পী অনুপ বড়ুয়া।
শিল্পাঙ্গনের পরিবেশনার পাশাপাশি মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন আমন্ত্রিত বিশিষ্ট শিল্পীরা। আমর আশরাফের পরিকল্পনায় কবিতা পাঠের আসর কবিতা আমার প্রাণে অংশ নেন শরফুজ্জামান মুকুল, গোপন সাহা, মঞ্জুর কাদের, বাশিরুল হক, রেজাউল করিম ও হুসেন শরীফ আহমেদ। উপস্থাপনা করেন ডিনু ইসলাম।
প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী প্রিয়া ডায়েস শিল্পাঙ্গন একাডেমি নৃত্য বিভাগের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর পরিকল্পনা ও পরিচালনায় বাংলাদেশ ও নবান্নের ওপর ভিত্তি করে এক অতুলনীয় নৃত্যালেখ্য উপস্থাপন করা হয়। শিল্পী শিরীন বকুল একাধারে আবৃত্তি ও শ্রুতি নাটকে মনোমুগ্ধকর অভিনয় করেন। নবান্ন উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় দুজন শিল্পী। ধ্রুপদি ও আধুনিক গানের মিষ্টি কণ্ঠ কৃষ্ণা তিথি এবং বাংলা ধ্রুপদি সংগীতের শিল্পী অনুপ বড়ুয়ার সুরের জাদুতে হারিয়ে যান দর্শক। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন—তবলায় তপন মোদক, কী-বোর্ডে মাসুদ, অক্টোপ্যাডে সজীব মোদক ও গিটারে আকাশ আহসান।
শিল্পাঙ্গন নবান্ন উৎসবে বাংলাদেশ ও আমেরিকার বিভিন্ন কূটনৈতিক নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন—সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো, সিনেটর কার্স্টেন গিলিব্র্যান্ড, এক্সিকিউটিভ লরা করেন, মেয়র বিল ডি ব্লাজিও এবং কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা।
নাসাউ কাউন্টি থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় নাট্যশিল্পী রেখা আহমেদ ও তবলা বাদক তপন মোদককে।
অনুষ্ঠান শেষে লটারি অনুষ্ঠিত হয়। লটারিতে ৫৫ ইঞ্চি টিভি, আইপ্যাডসহ অন্যান্য সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়।
নবান্ন উৎসবের আহ্বায়ক ছিলেন শাহপার খান, সদস্যসচিব আকতার কামাল। পৃষ্ঠপোষক ও আবৃত্তি সমন্বয় করেন আমর আশরাফ, প্রদর্শনী সমন্বয়ক ফালাহ আহামেদ, মঞ্চসজ্জ্বা ও স্মরণিকার প্রচ্ছদ করেন বাশিরুল হক, মিলনায়তন সজ্জায় আহমেদ নাসিম, পোশাক সমন্বয়ক সোনিয়া হক, আলো ও শব্দ সমন্বয়ক জাওয়াদ হোসেন, রেস্তোরাঁ সমন্বয়ক ম ম জসীম, আলো ও শব্দ সরবরাহ এবং নিয়ন্ত্রণ বিডি সাউন্ড, মিলনায়তন ব্যবস্থাপনায় স্বপন কবির, সংবাদমাধ্যম সমন্বয়ক মাহবুব রশীদ, আপ্যায়নের দায়িত্বে ছিলেন সোনিয়া পান্না, ছাপাখানা ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন, পোশাক সরবরাহে ছিলেন বিপ্লব সাহা, বিশ্বরঙ।
আরও সহযোগিতা করেন মীরা রহমান, রেজা খান, মুস্তফা মোর্শেদ এবং লতিফ রহমান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সমন্বয়, গ্রন্থনা, শিল্পাঙ্গনের গীত রচনা, নাট্যরচনা ও প্রকাশনা সম্পাদনা করেন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।