দুটি দায়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব

ক্যাপিটল হিলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিশংসন তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের ঘোষণা দেন হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান জেরল্ড ন্যাডলার। ছবি: রয়টার্স
ক্যাপিটল হিলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিশংসন তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের ঘোষণা দেন হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান জেরল্ড ন্যাডলার। ছবি: রয়টার্স

অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনলেন ডেমোক্র্যাটরা। আজ মঙ্গলবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উপস্থাপন করে। কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে প্রকাশিত আর্টিকেল অব ইমপিচমেন্টে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ইউক্রেন তদন্ত নিয়ে কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টিকে মূল অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসনের মুখোমুখি হলেন ট্রাম্প।

প্রতিনিধি পরিষদের হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান জেরল্ড ন্যাডলার আজ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিশংসন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের পক্ষে দুটি শক্ত অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এর একটি ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্যটি কংগ্রেসের কাজে বাধা।

এ–সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলনে জেরল্ড ন্যাডলার বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন। একই সঙ্গে ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ফেলেছেন হুমকির মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকেও সংকটে ফেলেছেন তিনি। ন্যাডলার বলেন, ‘কেউ, এমনকি প্রেসিডেন্টও আইনের ঊর্ধ্বে নন।’

ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে ন্যাডলারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, হাউস ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের চেয়ারওম্যান ম্যাক্সিন ওয়াটারস, হাউস ফরেইন অ্যাফেয়ার্স চেয়ারম্যান এলিয়ট অ্যাঙ্গেল, হাউস ওভারসাইট অ্যান্ড রিফর্ম চেয়ারওম্যান ক্যারোলিন ম্যালোনি, হাউস ওয়েস অ্যান্ড মিনস কমিটি চেয়ারম্যান রিচার্ড নিল ও হাউস ইন্টেলিজেন্স চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনটির ওপর আগামী সপ্তাহেই ভোট গ্রহণ হতে পারে প্রতিনিধি পরিষদে। ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাবটির পাস হওয়াটা একরকম নিশ্চিত। এরপরই অভিশংসনের প্রক্রিয়াটি চলে যাবে উচ্চকক্ষ সিনেটে। রিপাবলিকান–নিয়ন্ত্রিত সিনেটে অভিশংসন শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।

আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে সম্ভাব্য এ প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে চাপ প্রয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ জন্য ট্রাম্প ইউক্রেনকে প্রতিশ্রুত সামরিক সহায়তা তহবিলও আটকে দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিষয়টি নিয়ে অভিশংসন তদন্তের ঘোষণা দেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। পরে অভিশংসন তদন্তের প্রক্রিয়া নির্ধারণে কংগ্রেসে ভোট হয়। সেখানে ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাব পাস হলে দুই সপ্তাহ উন্মুক্ত শুনানি গ্রহণ করে হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটি। এ পর্যায়েই হোয়াইট হাউসের কর্তাব্যক্তিদের অনেককে শুনানিতে হাজির হওয়ার সমন দেওয়া হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্টের নির্দেশে হোয়াইট হাউস এতে পুরোপুরি অসহযোগিতা করে। হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হয় হাউস জুডিশিয়ারি কমিটিতে, যা আজ প্রকাশ করা হলো।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ট্রাম্প নিজের স্বার্থকে দেশের স্বার্থের ওপরে স্থান দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসন তদন্তে নজিরবিহীনভাবে বাধা সৃষ্টি করেছেন।

ক্যাপিটল হিলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের জন্য অন্য কোনো বিকল্প রাখেননি। এমন বাস্তবতায় কিছু না করে বসে থাকার সুযোগ নেই।’

প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচার ব্যবস্থাপক ব্র্যাড পার্সক্যাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অভিশংসন প্রস্তাব ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি রাজনৈতিক নাটক। আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে তাদের কোনো ভালো প্রার্থী নেই বলেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে।’

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ১৮৬৯ সালে অ্যান্ড্রু জনসন, ১৯৭৪ সালে রিচার্ড নিক্সন ও ১৯৯৮ সালে বিল ক্লিনটন অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে রিচার্ড নিক্সন অভিশংসিত হতে পারেন বুঝতে পেরে আগেই পদত্যাগ করায় পুরো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়নি। এ পর্যন্ত চারজন প্রেসিডেন্ট অভিশংসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্টই অভিশংসিত হননি।