ধনী ও শ্বেতাঙ্গরাই শুধু আমেরিকায় আসবে!

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কারণে ফুড স্ট্যাম্প, আবাসন এবং মেডিকেইড গ্রহীতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রিনকার্ড আবেদন নানা বিধি-নিষেধের মুখে পড়েছে। তাঁর দেওয়া এমন আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯ ডিসেম্বর আদালতে মামলা করেছেন প্রেসিডেন্টের অভিবাসন নীতিবিরোধী কিছু সংগঠন। এ মামলা প্রশাসনের আগের ‘পাবলিক চার্জ’ নীতির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে আরও জোরালো করবে বলে অনেকে ধারনা করছেন। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ধনী ও শ্বেতাঙ্গরাই যাতে আমেরিকায় ঢোকার সুযোগ পায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। তাই মামলার আর্জিতে এসব নীতিকে বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করা হয়। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, যারা অথবা যাদের কোন স্বজন কখনো সরকারি সাহায্য গ্রহণ করায় পরে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হয়েও তারা গ্রিনকার্ড পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবেন—এমন বিধান সে সব ব্যক্তির ওপর অন্যায় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যেই নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য, ইলিনয় ও ম্যারিল্যান্ডের ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট আদালত থেকে নতুন এই আইনের কার্যকারিতা বন্ধে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

১৯ ডিসেম্বর করা এই মামলার বাদী হিসেবে যেসব সংস্থা ও ব্যক্তির নাম রয়েছে তাদের মধ্যে লিগ্যাল এইড সোসাইটি, দ্য সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইট, দ্য পোল ওয়েইস ল’ সোসাইটি অ্যান্ড দ্য ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল’ সেন্টার, মেক দ্য রোড নিউইয়র্ক, আফ্রিকান সার্ভিসেস কমিটি ও ডিভিশন অব ক্যাথলিক চ্যারিটিজ এবং অন্যান্য অ্যাডভোকেসি গ্রুপ উল্লেখযোগ্য।

মামলার বাদীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন এমন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও পাঁচ ব্যক্তি অভিবাসীদের প্রতি এই নীতিমালার মাধ্যমে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেন।

আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির ওপর বোঝা হতে পারে এমন অভিবাসীদের প্রত্যাহার, নিজের পকেট থেকে চিকিৎসা ব্যয় বহন করার নিশ্চয়তা প্রমাণ করাকে গ্রিনকার্ড আবেদনের পূর্ব শর্ত হিসেবে বেঁধে দেওয়ার যে প্রজ্ঞাপন প্রেসিডেন্ট জারি করেছেন, এটি ও প্রশাসনের পাবলিক চার্জ নীতির কার্যকারিতা বন্ধের আবেদন অন্তর্ভুক্ত হয় ওই মামলায়।

সুসান ওয়েলবার নামের লিগ্যাল এইড সোসাইটির এক আইনজীবী বলেন, ‘দুই দফায় পাবলিক চার্জ বিধি প্রণয়ন ও সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য সেবা প্রজ্ঞাপন জারি, দরিদ্র ও অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের আমেরিকায় প্রবেশ বন্ধের লক্ষ্যে প্রণীত এ তিন নীতির সব কটি বিধিকে একসঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে এটাই প্রথম মামলা।’

আইনজীবী বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণের এক অদৃশ্য দেয়াল, যা আমাদের মক্কেলদের আমেরিকায় নিজেদের পরিবারের সঙ্গে জীবনযাপনে বাধা দেয়। এ আইন প্রণয়ন থেকে বিরত রাখতে আমরা তাঁর এ সংক্রান্ত তিন নীতির প্রত্যেকটিকে চ্যালেঞ্জ করে এগুলোর কার্যকারিতা বন্ধের দাবি জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, প্রশাসনের পাবলিক চার্জ নীতিটি ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে কি না, এ বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট।

নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালতে দায়ের করা সিভিল মামলার বিবাদী হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর নাম রয়েছে। হোয়াইট হাউস অথবা পররাষ্ট্র বিভাগ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা আমেরিকার অভিবাসী গ্রহণের মানদণ্ড ও পরিবারভিত্তিক অভিবাসন পদ্ধতিকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে প্রশাসন।

প্রতিনিধি পরিষদকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করেছেন ট্রাম্প। তা করে শুধু ধনী ও শ্বেতাঙ্গরাই যাতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার পায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘এটি আমেরিকান মূল্যবোধ, এর আলোকে গঠিত আইন ও সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞা-প্রদর্শন। আমেরিকার অভিবাসন প্রক্রিয়াকে ধনী ও শ্বেতাঙ্গদের একচেটিয়া সুবিধার জন্য ব্যবহার করার অপচেষ্টা চলছে। মামলার বিবাদীরা অবৈধ ‘আর্থিক সচ্ছলতার’ উপর গুরুত্বারোপ করে সম্ভাব্য অভিবাসন প্রত্যাশীদের তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসে ও উন্নততর জীবনযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন।’

মামলার আর্জিতে বলা হয়, ‘অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের বর্জন ও শুধু শ্বেতাঙ্গ ও ধনীদের আমেরিকায় অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত স্পষ্ট আর নির্লজ্জ উদ্দেশ্য যদি এই প্রশাসন বাস্তবায়ন করতেই চায়, তবে তা নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে করা সম্ভব নয়।’

বাদী পক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি আর যে পাঁচ ব্যক্তি রয়েছেন, তার একজন ৩২ বছর বয়সী এল সালভাদরের অভিবাসী। আমেরিকার নাগরিক স্ত্রী ও এক প্রাপ্তবয়স্কা কন্যাসহ কুইন্সে একটি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। নিউইয়র্কে ফ্লোর স্থাপনার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিবাসী বলেন, তিনি পরিচয় গোপন রাখতে চান, কারণ তিনি প্রশাসনের প্রতিহিংসার ভয় পান। প্রশাসনের গৃহীত নতুন বিধি অনুসারে তিনি একজন সম্ভাব্য ‘পাবলিক চার্জ’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাঁর আর্থিক অবস্থার কারণে তিনি সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হবেন, প্রশাসনের নতুন মানদণ্ড অনুযায়ী ধরে নেওয়া যায়।

‘কার্ল ডো’ ছদ্মনাম ব্যবহারকারী এই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, নতুন নীতি কার্যকর হলে তাকে এল সালভাদরে ফিরে যেতে হবে এবং প্রশাসনের গৃহীত নতুন বিধিনিষেধের কারণে তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখানে আটকা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মামলাটির বিবরণে বলা হয়, যদিও আগের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী কার্ল পাবলিক চার্জের আওতাধীন ছিলেন না। এখন সেই ব্যক্তিই অনির্দিষ্টকালের জন্য তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। যে বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমা থাকলে তিনি আমেরিকায় প্রবেশের যোগ্য বিবেচিত হবেন, স্ত্রীর সামান্য আয় দিয়ে বছরে বিশ হাজার ডলার আয় দেখানোর সামর্থ্য কার্ল ডোর পরিবারের নেই।

মামলার রায় যদি বাদীদের পক্ষে যায়, তা হলে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘পাবলিক চার্জ’ নীতি ও প্রেসিডেন্টের ‘স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রজ্ঞাপন’–এর কার্যকারিতা সাময়িকভাবে হলেও বন্ধ হবে এবং তাতে বহু আবেদনকারীর গ্রিনকার্ড প্রাপ্তি ও আমেরিকায় প্রবেশ ত্বরান্বিত হবে।