জন্ম তারিখ ভুল হলে অ্যাম্বাসিকে জানান

নিউইয়র্কভিত্তিক বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল টাইম টেলিভিশনের ল’ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অনুষ্ঠানে দর্শকদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন অ্যাটর্নি নাজমুল আলম। অনুষ্ঠানটি কোন আইনি পরামর্শ নয়, দর্শকদের নানা প্রশ্নের উত্তর থেকে ইমিগ্রেশন নিয়ে কেবল একটি দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। সরাসরি এই অনুষ্ঠানে টেলিফোনে দর্শকের প্রশ্ন নেওয়া হয় এবং এসব প্রশ্নের উত্তর দেন নাজমুল আলম। অনুষ্ঠানে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফজলু পরিচয় দিয়ে কুয়েত থেকে একজন প্রশ্ন করেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, তাঁর মা ৮ মাস আগে নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন, এ পর্যন্ত ইন্টারভিউয়ের কোনো চিঠি পাননি। এখন উনি দেশে যেতে চাচ্ছেন, এতে কি কোনো অসুবিধা হবে?

জবাবে নাজমুল আলম বলেন, যেতে পারবেন, তবে যেহেতু ৮ মাস হয়েছে সেই ক্ষেত্রে এখন না যাওয়াই ভালো। কারণ যেকোনো সময় কল করলে যদি সময়মতো আসতে না পারেন, তাহলে ওনার ইন্টারভিউটা বাতিল হয়ে যাবে। বিশেষ জরুরি হলে যেতে পারেন, তবে ইন্টারভিউতে উল্লেখ করতে হবে তিনি কিছুদিনের জন্য আমেরিকার বাইরে ছিলেন।

ব্রঙ্কস থেকে একজন প্রশ্ন করেন, তাঁর স্ত্রীর জন্য আবেদন করেছেন প্রায় দুই বছর আগে। গত ২ অক্টোবর চিঠি এসেছে সব সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। ৭ অক্টোবর ওরা বলছে, কেস নম্বর আর রসিদ নম্বর পাঠাতে। তিনি সব ডকুমেন্ট পাঠিয়েছেন, এখন আর কত দিন লাগবে?
জবাবে অ্যাটর্নি নাজমুল বলেন, কাগজপত্র ঠিকমতো পাঠালে আর বেশি দেরি হবে না, যেকোনো সময়ই ইন্টারভিউয়ের কল আসবে।

ফেসবুকে পারুল আক্তার জানতে চান, কেস কমপ্লিট হওয়ার পর ইন্টারভিউয়ের তারিখ পেতে কত দিন লাগে? এফ৪ ও এফ২ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে কি একই সময় লাগে?

জবাবে নাজমুল বলেন, দুইটা দুই ধরনের ক্যাটাগরি, এফ২ ক্যাটাগরিতে গ্রিনকার্ডধারীদের অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের জন্য যারা ২১ বছরের নিচে অথবা আবেদনকারীর স্বামী অথবা স্ত্রী। এফ৪ ক্যাটাগরি হচ্ছে ইউএস সিটিজেনের ভাইবোনের ক্যাটাগরি। প্রশ্ন অনুযায়ী ইন্টারভিউ ডেট যার যেদিন পড়বে, সেটাই ধরে নিতে হয় ওই দিনই তার ইন্টারভিউ হবে। কোনো কারণে যদি তার ভিসা না দেওয়া হয়, তাহলে বুঝতে হবে তার কোনো ডকুমেন্টের সঙ্গে ইন্টারভিউয়ের কোনো অমিল আছে, যাতে ইন্টারভিউয়ার সন্তুষ্ট হয়নি।

নাম প্রকাশ না করে একজন টেলিফোনে জানতে চান, তার অ্যাসাইলাম গ্রান্ট হয়েছে ৬ মাস আগে, তিনি গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করেননি। কিছুদিন হয় তিনি রিফিউজি ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেয়েছেন, এটা দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে কি ট্রাভেল করা যাবে? বাংলাদেশের পাসপোর্ট এখনো এক্সপায়ার হয়নি। তাই এখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে কোথাও ভ্রমণ করা যাবে কি?

জবাবে অ্যাটর্নি নাজমুল বলেন, অ্যাসাইলাম গ্রান্ট হওয়ার ১ বছর পরে গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করার সুযোগ হবে, এর আগে নেই। আর রিফিউজি ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাসপোর্ট হিসেবে কাজ করে, তাই এই ডকুমেন্ট দিয়ে ইন্টার ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল করা যাবে। এ ছাড়া খুব জরুরি না হলে গ্রিনকার্ড না পাওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো দেশে ভিজিট না করার পরামর্শ দেন তিনি।

সুমন হোসেন নামে একজন ফেসবুকে জানতে চান, অ্যাসাইলামের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্টের ডকুমেন্ট রিসিভ করার কত দিন পরে গ্রিনকার্ড পাওয়া যাবে?

জবাবে নাজমুল বলেন, অ্যাসাইলামের ক্ষেত্রে ফিঙ্গার প্রিন্ট রিসিভ করার পরে কোটার মধ্যে যায়। ওদের ১০ হাজার কোটা আছে, এই কোটা যদি ফুলফিল না হয়, আর ফিঙ্গার প্রিন্টে কোনো ভুল না থাকে, তাহলে যেকোনো সময়ই চলে আসবে।

টেলিফোনে একজন জানতে চান, তিনি সিটিজেন পাসপোর্ট পেয়েছেন, এখন তার বিবাহিত মেয়ের জন্য আবেদন করতে চান। আবেদনের পর কত দিনে ভিসা পাবে আর অ্যাপ্লিকেশন ফি চারজনের জন্য কত লাগবে? তার ভাইবোনের জন্য অ্যাপ্লিকেশন করতে কি করতে হবে?
নাজমুল বলেন, অন্তত ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে। শুধু মেয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করবেন, দরখাস্তে উল্লেখ করতে হবে মেয়ের জামাই ও ছেলেমেয়ে আছে, তাই অ্যাপ্লিকেশন ফি শুধু যার নামে অ্যাপ্লিকেশন করবেন তার জন্য লাগবে। সবকিছু ফাইনালে গেলে ভিসা ইস্যু বাবদ সবার ফি দিতে হয়। ভাইবোনের জন্যও একই ফরম্যালিটি, শুধু ক্যাটাগরিটা ভিন্ন হবে। এই ক্যাটাগরি হচ্ছে এফ৪ ক্যাটাগরি। একইভাবে একজনের জন্য প্রত্যেক ভাইয়ের জন্য একটা ও বোনের জন্য একটা করে ফি দিতে হবে। তারপর ফাইনালি ভিসার জন্য প্রত্যেকের আলাদা ফি দিতে হবে। অ্যাপ্লিকেশন করার সময় ভাইবোনের স্বামী/স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের কথা উল্লেখ করতে হবে।

আ. হানিফ ফেসবুকে চান জানতে, এনওয়াই কোর্ট কতটি অ্যাসাইলাম কেস আপ্রুভ করে এখন?

জবাবে নাজমুল আলম বলেন, অ্যাসাইলামে কোনো কোটা নেই, ঠিকমতো প্রমাণ দিয়ে কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারলে কেসটা হবে। ফিলাডেলফিয়া থেকে টেলিফোনে মো. ফারুক প্রশ্ন করেন, তাঁর গ্রিনকার্ডধারী মা, তার ভাইয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলেন ২০১৭ সালে। এরপর সব কমপ্লিট, ভিসা ফিও জমা দেওয়া হয়েছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। ওরা জানিয়েছে, ইন্টারভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে। এরপর ৪ মাস হয়ে গেছে এখনো ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকেনি।

জবাবে নাজমুল আলম ভিসা সেন্টারে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। বলেন, ডকুমেন্ট ঠিকঠাক জমা দেওয়া থাকলে ভিসা সেন্টার জানিয়ে দেবে, কেন তারা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকছে না।

কামরুন্নুর জানতে চান, তাঁর ভাগনের ইমিগ্রেশন অ্যাপ্লিকেশন ২০০৭ সালে করা। পেপারে জন্ম সাল ১৯৯৮ সালের পরিবর্তে ১৯৯৯ সালে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তার পাসপোর্ট ও সব কাগজ ’৯৮ সাল দিয়ে করা হয়েছে। এখন তার ইন্টারভিউয়ের সময় খুব কাছাকাছি, এ অবস্থায় কি করতে হবে তাদের?

জবাবে নাজমুল বলেন, ‘অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে জানাতে হবে। তাহলে তারাই বলে দেবে কী করতে হবে।

নিউইয়র্ক থেকে শম্পা টেলিফোনে প্রশ্ন করেন, তাঁর অ্যাসাইলামের জন্য ইন্টারভিউয়ের বারবার ডেট দিয়ে তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তার ১৮ বছর বয়সী মেয়ে যদি তার জন্য ইমিগ্রান্ট ভিসার অ্যাপ্লাই করতে চায়, তাহলে পারবে কি?
জবাবে অ্যাটর্নি তাকে আরও ছয় মাস ইন্টারভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। বাবা–মায়ের ক্যাটাগরিতে ২১ বছরের আগে কোনো ছেলেমেয়ে অ্যাপ্লাই করতে পারবে না।

মেজবা উদ্দীন টেলিফোনে জানতে চান, তাঁর এক আত্মীয় ছেলের জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন ৫ বছর আগে। কিছুদিন আগে ওরা একটা চিঠি পাঠিয়েছিল, চিঠিটি তারা পাননি, তারপর ওরা একটি ডিনাই চিঠি পাঠায়। এরপর অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করলে তারা কিছু মোশন লেটার ও আরও কিছু ডকুমেন্টস চাইলে ফিসহ সেসব ডকুমেন্ট পাঠিয়েছেন ১৫ দিন হয়েছে। এর জবাব পেতে সাধারণত আর কত দিন লাগবে?

নাজমুল আলম বলেন, এসব ডকুমেন্টের সঙ্গে ফি দিয়ে থাকলে তার একটা রসিদ দেবে। রসিদ লেটার পেলে আর কোনো চিন্তা নেই। আর যদি তারা এতে সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে তারা আবার কারণ জানিয়ে একটি লেটার দেবে।
আইনুল তাফাদার ফেসবুকে জানতে চান, তার বৃদ্ধ বাবা আরও দুই বছর পরে ইউএস নাগরিকত্ব পেতে পারেন। তারপর যদি তিনি তার বিবাহিত মেয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করেন তাহলে কত বছর পর সে আমেরিকা আসতে পারবে। আর অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের বেলায় কত বছর লাগবে?

জবাবে নাজমুল বলেন, এটি হচ্ছে এফ৩ ক্যাটাগরি। এই ক্যাটাগরিতে ১০–১২ বছর লাগবে।
গ্রিনকার্ডধারী একজন দর্শক প্রশ্ন করেন, তিনি তার মেয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন। মেয়ের বয়স ২০ বছর ২ মাস বয়স, এটা কি তারা অপ্রাপ্ত বয়স হিসেবে গণ্য করবে?

নাজমুল বলেন, হ্যাঁ। তবে লেখার সময় সিএসপিএস লিখে দিতে বলেন। কিন্তু মেয়েকে অবিবাহিত থাকতে হবে, তা না হলে অ্যাপ্লিকেশন বাতিল হয়ে যাবে। আর এর মধ্যে যদি অ্যাপ্লিকেন্ট সিটিজেনশিপ পেয়ে যান, তখন ওদের কাছে লিখিত দিয়ে স্ট্যাটাসটা পরিবর্তন করে দিলে মেয়ের বিয়ে হলেও আসতে পারবে।

নাহিয়ান জোয়ারদার লিখেছেন, তার বাবার জন্য অ্যাপ্লাই করা হয়েছে ২০১০ সালে, অ্যাপ্লিকেশন গ্রহণ করেছে ২০১২ সালে, তার বয়স জন্ম ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে। এখন কি তিনি তার বাবার সঙ্গে আমেরিকায় আসতে পারবেন?

অ্যাটর্নি নাজমুল বলেন, ভাইবোন ক্যাটাগরিতে যদি অ্যাপ্লিকেশন হয়, তাহলে ১৯৯৬ সালে জন্ম হলে এখন তার বয়স ২৪ বছর, তাই তিনি তার বাবার সঙ্গে আসতে পারবেন না। যদি তার বয়স ২১ বছরের নিচে হতো, তাহলে আসতে পারতেন।

একজন দর্শক জানতে চান, তিনি তার বোনের জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন ২০০৭ সালে। এখন তারা সব কাগজপত্র চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে, তারপর তিনি সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন, এখন কত দিনের মধ্যে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকবে?
উত্তরে নাজমুল বলেন, এখন যদি সব কাগজপত্র ঠিক থাকে, তাহলে ওদের রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রিভিউ হলে কয়েক মাসের মধ্যে ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতির জন্য লেটার দেবে।

ব্রুকলিন থেকে মফিজুল হক জানতে চান কো-স্পনসর সম্পর্কে। তিনি প্রশ্ন করেন, অনেকে কো-স্পনসরের জন্য বললে তারা নানা অসুবিধা হবে বলে দেখান, যেমন মেডিকেল থাকবে না ও অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা থাকবে না, আসলেই কি এ ব্যাপারটি ঠিক?

জবাবে নাজমুল বলেন, কো-স্পনসর দিলে এসব কোনো অসুবিধা হবে না। শুধু কো–স্পনসর যেন তার আয়ের ক্ষমতা ও নিয়মের মধ্যেই দেন, তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না।

পরিচয় না জানিয়ে টেলিফোনে একজন জানতে চান, তিনি নাগরিকত্বের জন্য অ্যাপ্লিকেশন করেছেন ২০১৯ সালের অক্টোবরে। ফিঙ্গার প্রিন্ট হয়েছে ৮ ডিসেম্বর, এখনো ইন্টারভিউয়ের তারিখ দেয়নি। জবাবে নাজমুল বলেন, ফিঙ্গার প্রিন্ট রিপোর্ট তারা যাচাই করে সবকিছু ঠিক পেলে আপনাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকবে।

সবশেষ প্রশ্নটি ফেসবুকে মো. নুরুল আমিন করেন। তিনি জানতে চান, এফ৪ ক্যাটাগরিতে অবিবাহিত ২৩ বছরের ওপরে হলে কি সে ভিসা পাবে?

জবাবে নাজমুল বলেন, এফ৪ ক্যাটাগরিতে ২৩ বছরের ওপরে অবিবাহিত ছেলেমেয়ে হলে তাদের সিএসপিএতে ফেলতে হবে। এটি অ্যাম্বাসি দেখে। যখন তারা ডাকবে, তখন সিএসপিএ লিখে দিতে হবে।