তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি করবে নারীর ক্ষমতায়ন

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা
গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন পর্যায়ের নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়বে। নারীরা আরও বেশি আয় করতে শুরু করলে তা ক্রমেই বেড়ে চলা ধনী ও দারিদ্র্যের বৈষম্য ঘোচাতেও ভূমিকা রাখবে। ৫ ফেব্রুয়ারি কোডারস ট্রাস্ট বাংলাদেশের বনানী শাখায় আয়োজিত ‘নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কোডারস ট্রাস্ট বাংলাদেশের কার্যক্রম ও নারীর ক্ষমতায়নে তাদের ভূমিকা-বিষয়ক একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়। সেখানে বলা হয়, কোডারস ট্রাস্ট শুধু নারীদের জন্যই নয়, অটিস্টিক, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সমতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নেও কাজ করছে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করা কোডারস ট্রাস্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ডের সদস্য আজিজ আহমেদ বলেন, ‘নারীদের দক্ষতা বাড়লে তারা কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে। পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।’ তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ও বিপিও খাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রযুক্তি শিক্ষা যুক্ত করা জরুরি।
কোডারস ট্রাস্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওসমান গনি বলেন, ‘দক্ষতা থাকলে সবই সম্ভব। তাই কোডারস ট্রাস্ট দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। বর্তমানে ঢাকায় পাঁচটি ক্যাম্পাসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালালেও ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ফ্রি ল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু বড় কাজ ধরতে না পারায় আয় অনেক কম। প্রায় ৩০০টি কাজের মধ্যে আমাদের অংশগ্রহণ এখনো মাত্র ৭২টিতেই সীমাবদ্ধ।’ তিনি এ ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতির জন্য নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করেন।
কোডারস ট্রাস্ট বাংলাদেশের শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব শ্রেণির নারী-পুরুষের দক্ষতা অর্জনে কাজ করছে। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওসমান গণি কড়াইল বস্তির উদাহরণ দেন। সেখানে ২০ জন নিরক্ষর ছেলেমেয়েকে সাত মাস বেসিক ইংরেজি ও বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই ২০ জন এখন ফ্রি ল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন।
বাংলাদেশে সফটওয়্যার নির্মাতাদের সংগঠন বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। এ ক্ষেত্রে এক ধরনের সংশয় কাজ করে। কিন্তু এ খাতই নারীদের জন্য বেশি উপযুক্ত।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের অদক্ষ, নিরক্ষর ও অল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কাজ হারাবে উল্লেখ করে আলমাস কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪০ লাখ নারী শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের অধিকাংশই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নন। এসব নারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী নতুন করে দক্ষতা অর্জনের শিক্ষা দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর ২২ হাজার ছেলেমেয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হন। কিন্তু তাদের দক্ষতা নেই। ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ করার মাধ্যমে আলাদা করে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এ প্রশিক্ষণ তিন-চার বছরের কোর্সেই অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত যে অর্থনৈতিক অর্জন, তা মূলত সস্তা শ্রমের ভিত্তিতে অর্জিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ থাকলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। এ জন্য সাহসী নারীদের এগিয়ে আসতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলেও অনেক ছেলেমেয়ে স্কুলে যায় না বা ঝরে পড়ছে। যেকোনো দক্ষতা অর্জনের প্রাথমিক শর্তই হলো সাক্ষরতা অর্জন।’
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘নারীর জন্য এগিয়ে আসা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। এর প্রধান কারণ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার নারী ও পুরুষ। এ ছাড়া নিয়মকানুন ও আইন থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনও এখনো বন্ধ করা যায়নি। এ কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন।’
সাংবাদিক সামিয়া রহমান বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমকে অগ্রগণ্য মাধ্যম বলা হলেও সংবাদকর্মীরা অনেক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক সস্তা শ্রম দেন।’
কাজী আইটির কান্ট্রি ডিরেক্টর জারা মাহবুব জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানে ২৩ শতাংশ নারী কর্মী রয়েছে। দেশে যোগ্য নারী কর্মীর অভাব নেই। কিন্তু অবকাঠামো ও নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা পিছিয়ে আছে। নারীদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ছাড়াও সামাজিক বাধা অনেক বড় একটি বাধা। এসব দূর করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে।