একের পর এক হামলায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশিরা

হামলায় আহত রাবেয়া
হামলায় আহত রাবেয়া

নিউইয়র্কের প্রবাসীবহুল এলাকায় বাংলাদেশিদের ওপর একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব হামলায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি হতাহত আহত হয়েছেন। হামলা ও মামলার পর দু–এক জায়গায় দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিলেও সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ হচ্ছে না। এ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষজন।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে একজন নারীসহ দুজন বাংলাদেশি দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয়েছেন। এঁদের মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি ওজোন পার্কে দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হন সৈয়দ আজিজ আহমেদ। দুদিন আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে আহত হন রাবেয়া বেগম নামে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি ওজোন পার্কে শাহাব উদ্দীন হামলার শিকার হন। সম্প্রতি ব্রঙ্কস এলাকায় ক্যাবচালক মোহাম্মদ আলী দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হন।
গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ওজন পার্কে সাবওয়ে থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের হামলায় ফরহাদ হোসেন (২৬) গুরুতর আহত হন। আহতাবস্থায় স্থানীয় জনতা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ সিসি ক্যামেরা দেখে তাকে দুর্বৃত্তকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে।
জানা গেছে, কয়েক মাসের ব্যবধানে ওজোন পার্ক এলাকায় একাধিক হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কয়েক বছর অগে ওজোন পার্কে দুর্বৃত্তের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের নেতা নজমুল ইসলাম, ইমাম আকুঞ্জী ও তার সহযোগী নিহত হন। গত বছর আরও এক বাংলাদেশি দুর্বৃত্তের হামলায় মারা যান। এ ছাড়া অতীতে বাংলাদেশি ফটো সাংবাদিক মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন হতাহত হন। এ ধরনের একের পর এক হামলার ঘটনা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের দাবি উঠেছে। 

কিন্তু একের পর এক হামলার ঘটনায় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের নীরব ভূমিকা প্রবাসীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাদের নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে। আলোচনা হচ্ছে কমিউনিটি বোর্ডের প্রতিনিধিরা কী করছেন। তাদের দাবি, সময় থাকতেই কমিউনিটি নেতাদের এগিয়ে আসা উচিত। প্রয়োজন পুলিশ আর সিটি প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে ঘটনাগুলো জানিয়ে প্রতিকারের দাবি তোলা।
এভাবে একের পর সন্ত্রাসী হামলা প্রসঙ্গে কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ও আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, ‘হামলার বিরুদ্ধে বাংলাদেশিদের প্রতিবাদী হতে হবে এবং আমরা যাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি তাদেরও বিষয়টি জানাতে হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক ঘটনায় পুলিশ রিপোর্ট করতে হবে, তাহলে হামলা কিছুটা রোধ হতে পারে।
ওজোন পার্কের বাসিন্দা ও চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান বলেন, এসব হামলার ঘটনায় ওজোন পার্কে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনরা আতঙ্কে আছেন। এখানে পুলিশি টহল বাড়ানো উচিত।
ওজন পার্ক প্রিসিঙ্কটের এক কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর ইতিমধ্যে তাঁরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন। হামলা বন্ধে তাঁরা যথাযথ আইন প্রয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাবেয়ার বেগমের পরিবার সূত্র জানায়, ব্রঙ্কসের মটহ্যাভেন এলাকায় সাবওয়ে ট্রেনেই আক্রান্ত হন রাবেয়া। হামলাকারী তাঁর কপালে, ঘাড়ে ও বাহুতে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় রাবেয়া চিত্কার করলেও কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। গুরুতর আহতাবস্থায় রাবেয়াকে পুলিশ উদ্ধার করে লিংকন হাসপাতালে ভর্তি করে।
পুলিশ, রাবেয়া ও তাঁর ভাই জানান, রাবেয়া ব্রঙ্কসের হারলেম এলাকায় একটি ডানকিন ডোনাটের দোকানে কাজ করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি কর্মস্থল থেকে পার্কচেষ্টার এলাকার তার বাসায় ফিরতে ৬ ট্রেনে চড়েন। ব্রঙ্কস অ্যাভিনিউয়ের আগে আচমকাই ওই ব্যক্তি রাবেয়ার ওপর ধারালো চাকু দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ওই ব্যক্তি রাবেয়াকে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে হামলাকারী ব্রঙ্কস অ্যাভিনিউ স্টেশনে নেমে পালিয়ে যায়। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা শুরু করলেও গ্রেপ্তার করা যায়নি। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি এনওয়াইপিডির ক্রাইম স্টপার বিভাগ থেকে টুইটারে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যাতে সন্দেহভাজন হামলাকারী ব্যক্তি পুরোপুরি কালো পোশাক ও মাথায় হালকা রঙের টুপি পরিহিত দেখানো হয়েছে। ওই ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে পুলিশের এনওয়াইপিডিক্রাইম স্টপারস ডট কম, অথবা ১-৮০০-৫৭৭-৮৪৭৭ নম্বরে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
রাবেয়া বলেন, তিনি আগে কখনো হামলাকারী ওই লোকটিকে দেখেননি। হামলার কারণও তিনি জানেন না। অবিবাহিত রাবেয়া ৬ মাস আগে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি ব্রঙ্কসের সেন্ট লরেন্স এলাকায় তার এক ভাইসহ বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করছেন। তাদের দেশের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার নিমাইদল গ্রামে।
অন্যদিকে আরেক বাংলাদেশি সৈয়দ আজিজ আহমেদ ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে ওজোন পার্কের ৭৭ স্ট্রিট ও লিবার্টি অ্যাভিনিউতে হামলার শিকার হন। এতে তার মাথা ফেটে যায় এবং মুখে আঘাত পান। ঘটনার পরপরই তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ওজোন পার্কেই বসবাস করেন। তার দেশের বাড়ি সিলেট। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ফিরছিলেন।