ক্রেডিট স্কোর নিয়ে যা জানা জরুরি

আমেরিকানদের অর্থনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্রেডিট স্কোর। ক্রেডিট স্কোর সম্পর্কে অপর্যাপ্ত জ্ঞান জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। কী এই ক্রেডিট স্কোর? ক্রেডিট স্কোর হলো তিন সংখ্যার একটি নম্বর, যা আপনার ঋণ করা এবং টাকা ফেরত দেওয়ার ইতিহাস প্রকাশ করে। আপনার স্কোর বেশি হলে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আপনার প্রতি আস্থা রাখবে। এই তিন সংখ্যার নম্বর নিম্নগামী হলে আপনার ঋণ পেতে সমস্যা হবে এমনকি মোবাইল ফোন কিনতে গেলেও আপনাকে অগ্রিম ডিপোজিট দিতে হবে।
ক্রেডিট স্কোর সাধারণত ৩০০ থেকে ৮৫০ সংখ্যার মধ্যে একটি নম্বর হয়ে থাকে, যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একটি মডেলের মাধ্যমে এই স্কোর নির্ধারণ করে। তিনটি প্রধান ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি হলো—এক্সপেরিয়ান, ট্রান্সইউনিয়ন ও ইকুফেক্স। ক্রেডিট স্কোর নির্ধারণ করার সূত্রগুলোকে আমরা কোকাকোলার রেসিপি কিংবা ক্রিকেটের ডিএসএলআর পদ্ধতির সঙ্গে তুলনা করতে পারি। যা যথেষ্ট জটিল সমীকরণ। ক্রেডিট স্কোর নির্ধারণের প্রধান বিষয়গুলো হলো—

ক. ঠিকমতো ঋণ ফেরত দেওয়া (৩৫ %)
সবগুলো ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ঋণ সময়মতো ফেরত দেওয়াকে এক নম্বর নির্ণয়ক হিসেবে গণ্য করে। আপনার ক্রেডিট কার্ড, গাড়ি ঋণ, মর্টগেজ ইত্যাদির মাসিক কিস্তি নির্দিষ্ট দিনে পরিশোধ করুন। যদি নির্ধারিত দিনে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তাহলে অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করুন। মনে রাখবেন, অধিকাংশ ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলোকে ৩০ দিনের মধ্যে খেলাপির তালিকা প্রদান করে। আপনার একটিমাত্র লেট পেমেন্টের কারণে ক্রেডিট স্কোর ১০০ পয়েন্ট পর্যন্ত কমে যেতে পারে এবং ক্ষতিকর প্রভাব অনেক দিন পর্যন্ত আপনার ক্রেডিট রিপোর্টে থাকবে। নিয়মিত ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি ইন্টারনেট বিল, ফোন বিল, ইউটিলিটি বিল সময়মতো পরিশোধ করুন। যেকোনো বিল বকেয়া থাকলে তা কালেকশন এজেন্সির মাধ্যমে ক্রেডিট রিপোর্টিং এজেন্সি অবগত হয় এবং দায় হিসেবে আপনার ক্রেডিট রিপোর্টে সেগুলো চলে আসে।

খ. ঋণের উদ্বৃত্তের পরিমাণ (৩০ %)
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে কেউ ঋণ প্রদান করতে চায় না। তাই বকেয়া ঋণ ক্রেডিট স্কোর নির্ধারণের অন্যতম পরিমাপক। একটি প্রচলিত ভুল ধারণা আছে, ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহার করা হলে পরবর্তী ঋণের সক্ষমতা বাড়বে। আপনার ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় ক্রেডিট লিমিটের ৩০ শতাংশের মধ্যে রাখুন। ধরুন, আপনার ক্রেডিট লিমিট ১০০০ ডলার, তাহলে আপনার ব্যয় ৩০০ ডলারের মধ্যে রাখুন। অনেকে আবার একেবারে ক্রেডিট ব্যবহার করেন না, অন্তত ২% ক্রেডিট ব্যবহার করুন। এতে আপনার স্কোর ভালো থাকবে।

গ. ক্রেডিট ব্যবহারের সময়কাল (১৫ %)
আপনার ক্রেডিট ব্যবহারের ইতিহাস অনেক পুরোনো হলে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার ওপর অধিক আস্থা রাখবে। তাই দ্রুত সম্ভব ক্রেডিট ব্যবহার শুরু করতে হবে, ছাত্র-ছাত্রীদের উচিত ছাত্র অবস্থাতেই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার শুরু করা। ভালো ক্রেডিট স্কোর সম্পন্ন নিকটজনের কাছ থেকে অনুমোদিত ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ব্যবহার করলে ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধি পাবে। প্রাথমিক অবস্থায় সিকিউর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা শ্রেয়।

ঘ. ভিন্ন ভিন্ন ঋণ প্রোডাক্ট (১০ %)
বিভিন্ন রকম ক্রেডিট বা ঋণ থাকা আপনার ক্রেডিট স্কোরকে সমৃদ্ধ করবে। শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ড নয়, গাড়ি ঋণ, স্টুডেন্ট লোন, মর্টগেজ ইত্যাদি আপনার স্কোরকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। অবশ্যই সব ক্রেডিট হিসাব ভালো অবস্থায় রাখতে হবে।

ঙ. স্বল্প সময়ে নতুন নতুন অ্যাকাউন্ট (১০ %)
স্বল্প সময়ের মধ্যে hard inquiry এবং নতুন নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা আপনার অর্থনৈতিক দৈন্য দশা বোঝায়। একেকটি hard inquiry কমপক্ষে দুই বছর আপনার ক্রেডিট রিপোর্টে থাকবে। আপনি যদি কোনো একটি ক্রেডিট কার্ডের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হন, তাহলে অন্য কোথাও ভাগ্য পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে এবং ক্রেডিট স্কোর ভালো হলে আপনি অন্য জায়গায় আবেদন করুন। অনেক সময় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করে। এ সমস্ত বিজ্ঞাপনে ‘Pre-Screened’, ’Pre-Selected’, ‘Opt-in’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে বিভ্রান্ত করা হয়। আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করা থেকে বিরত থাকবেন।

লেখক: ক্রেডিট ও রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ
[email protected]

>ক্রেডিট হেলথ টিপস
১. সময়মতো আপনার ক্রেডিট কার্ডসহ সমস্ত বিল পরিশোধ করুন।
২. আপনার ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ৩০ শতাংশের নিচে রাখুন।
৩. যথাসম্ভব দ্রুত ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার শুরু করুন। ছাত্রজীবন থেকেই মা-বাবার কাছ থেকে অনুমোদিত ব্যবহারকারী হিসেবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার শুরু করুন অথবা সিকিউর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার শুরু করুন।
৪. আপনার ক্রেডিট ব্যবহারের ইতিহাস দীর্ঘ করতে নিকটজনের কাছ থেকে অনুমোদিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন।
৫. ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ক্রেডিট গ্রহণ করুন। যেমন: গাড়ি ঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ, মর্টগেজ, স্টুডেন্ট লোন ইত্যাদি।
৬. স্বল্প সময়ের মধ্যে নতুন নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে বিরত রাখুন।
৭. নিয়মিত ক্রেডিট মনিটরিং করুন। যদি অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ে তাহলে ক্রেডিট এক্সপার্টদের সাহায্য সহায়তা নিন।