টেলিফোনে বিয়ে গ্রহণযোগ্য নয়

নিউইয়র্কভিত্তিক বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল টাইম টেলিভিশনের ল’ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অনুষ্ঠানে দর্শকদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন অ্যাটর্নি নাজমুল আলম। আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাভাষাভাষী প্রত্যেকে ইমিগ্রেশনের বিষয়টি নিয়ে কোনো না কোনো ঝামেলায় পড়ে থাকেন। অনেকে সঠিকভাবে অনেক কিছু জানতে পারেন না বলে নানা অসুবিধায় পড়েন এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তও হন। তাই ঘরে বসে সরাসরি প্রচারিত ‘ল অ্যান্ড ইমিগ্রেশন’ অনুষ্ঠানটি দেখে কিংবা অনুষ্ঠানটি নিয়ে আমাদের এই আয়োজনের মাধ্যমে পাঠকেরা ইমিগ্রেশন বিষয়ক অনেক অজানা বিষয় জানাতে পারবেন। আধা ঘণ্টার সরাসরি এই অনুষ্ঠানে টেলিফোন ও ফেসবুক পেজে দর্শকের প্রশ্ন নেওয়া হয় এবং এসব প্রশ্নের উত্তর দেন আমেরিকায় বসবাসরত অ্যাটর্নি নাজমুল আলম। অনুষ্ঠানটি কোনো আইনি পরামর্শ নয়, দর্শকদের নানা প্রশ্নের উত্তর থেকে ইমিগ্রেশন নিয়ে কেবল একটি দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।
সর্বশেষ অনুষ্ঠানের শুরুতে নাগরিকত্ব, পারিবারিক ভিসা এবং পাবলিক চার্জের ওপর কিছু আলোচনা করেন এই অনুষ্ঠানের নিয়মিত অতিথি অ্যাটর্নি নাজমুল আলম। এ ছাড়া নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি নিয়ে কথা বলে একটি সমঝোতায় যে এসেছেন, সে কথাও বলেন তিনি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি নিউইয়র্কের ট্র্যাভেলিংয়ের ক্ষেত্রে একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে এয়ারপোর্টে পাস পাবেন না। গভর্নর ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে আলোচনার পর সেটি শিথিল করে এখন থেকে কেবল অবৈধভাবে যারা আমেরিকায় আছেন, তারা বাইরে যাওয়ার সময় তাদের পাসপোর্ট দেখাতে হবে। তাদের স্ট্যাটাস ডেটাবেইসে থাকবে না। কিন্তু যাদের বৈধ কাগজপত্র বা এখানকার নাগরিক, তাদের স্ট্যাটাস ডেটাবেইসে থাকবে এবং তাদের পাসপোর্ট দেখাতে হবে না, কেবল ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখালে হবে। তিনি এটিকে একটা ভালো সংবাদ বলে উল্লেখ করেন।
এরপর নাজমুল ফ্যামিলি ভিসা সম্পর্কে বলেন, ইদানীং ভিসা সেন্টার ভিসা দিতে অনেক দেরি করছে। তবে এটি হয়তো জনশক্তি স্বল্পতার কারণে হচ্ছে। অথবা অন্য কোন কারণও হতে পারে। তিনি বলেন, সাধারণত ভাই-বোনের ভিসা প্রক্রিয়ায় ১০-১৩ বছর লাগে। গ্রিনকার্ড হোল্ডাররা যে অ্যাপ্লিকেশন করে, তা এখন আপডেট আছে। এটি বিশেষ করে ভিসা সেন্টারের মাধ্যমে হচ্ছে। এরপরই নিয়মিত দর্শকদের প্রশ্ন শুরু হলে নাজমুল আলম দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন।

>গ্রীনকার্ডধারী মা তার মেয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করলে ৮ থেকে ১০ বছর লাগবে এবং তার বোন এই আট বছর অবিবাহিত থাকতে হবে। এ ছাড়া তিনি বলেন, সুলতানা ইউএস সিটিজেন হলে তিনি নিজে তার বোনের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন, এতে ১২–১৩ বছর লাগবে। এই ক্যাটাগরিতে বোন বিয়ে করলেও তার স্বামী এবং বাচ্চাদেরও নিয়ে আসতে পারবেন।


আজকের অনুষ্ঠানের প্রথম প্রশ্নটি করেন ফেসবুকে খালেদা সাদেক। তিনি জানতে চান, এখন কি মা-বাবাকে দেশ থেকে আনতে হলে আসার আগে এখানে মেডিকেইড বা ইন্স্যুরেন্স পে করে আনতে হবে?
জবাবে নাজমুল বলেন, বিষয়টি ২৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে স্টাবলিস্ট হবে। আর সেটি হচ্ছে, যিনি এখানে আসবেন তিনি এখানে আসলে কোন পাবলিক চার্জ নেবেন কিনা যেমন—মেডিকেইড, ফুড স্ট্যাম্প এবং কোন ধরনের ফেডারেল। এসব সুবিধা নেবেন কিনা, তার ওপর তারা তদন্ত করবে বা জিজ্ঞাসাবাদ করবে। যদি তারা বুঝতে পারে, যিনি আসছেন তিনি এসেই এসব বেনিফিট নেবেন, তাহলে তারা ভিসা না দেওয়ারই চেষ্টা করবে।
টেলিফোনে ব্রুকলিন থেকে আসলাম জানতে চান, তিনি তাঁর স্ত্রীর জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন গত ৩ অক্টোবর, এখনো তিনি ডকুমেন্টারি কোয়ালিফায়েড ইমেইল পাননি। এখন পর্যন্ত কোন ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়নি, আর কত দিন তাকে অপেক্ষা করতে হবে?
জবাবে নাজমুল জানান, ভিসা সেন্টারে এখন একটু সময় নিচ্ছে। তাই তাকে একটু অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন। তবে ছয় মাস পরে না পেলে তাকে ভিসা সেন্টারের সঙ্গে যোগযোগ করার পরামর্শ দেন নাজমুল আলম।
ফেসবুকে মোহাম্মদ রহমান জানতে চান, আই থ্রি সিক্সটি অ্যাপ্রুভের পরের প্রসেস কি?
জবাবে নাজমুল বলেন, আই থ্রি সিক্সটি হচ্ছে বেটার স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কিত কেস। এটা একটা স্পেশাল ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে, এসব মামলায় একটু অপেক্ষা করতে হয়। কারণ এই ক্যাটাগরিতে নির্দিষ্ট কিছু ভিসা থাকে। এসব ভিসায় তাদের একটা কোটা থাকে, তাই যত দিন পর্যন্ত কোটা পূরণ না হবে, তত দিন সময় লাগবে। এবং সে জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ফেসবুকে একজন জানতে চান, তার ভাই তার জন্য ২০১৪ সালের ২০ মে অ্যাপ্লাই করছেন। এ পর্যন্ত তিনি কেবল রেসিভ লেটার পেয়েছেন, কিন্তু কোন আপ্রুভল লেটার এখনো পাননি। এটি পেতে আর কত দিন লাগবে?
উত্তরে অ্যাটর্নি নাজমুল বলেন, ভাই–বোনের অ্যাপ্লাই হচ্ছে এফ-৪ ক্যাটাগরি। এই ক্যাটাগরিতে এখন অ্যাপ্লাইয়ের তারিখ থেকে অ্যাম্বাসিতে যেতে ১০-১২ বছর লাগে। অনেক সময় ওদের হাতে প্রচুর কাজ থাকলে এসব মামলাকে তারা লো প্রাইয়োরিটিতে রাখে। স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মায়ের মামলা এবং যারা নাগরিক তাদের মামলাগুলোকে ওরা হাই–প্রায়োরিটিতে দেখে। এ জন্য তাকে আরও অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি। তবে কোন কারণে ঠিকানা পরিবর্তন করলে যেন ১০ দিনের মধ্যে তাদের জানিয়ে দেন।
মেরিল্যান্ড থেকে টেলিফোনে খুরশেদ আলম জানতে চান, তিনি ২০১০ সাল থেকে গ্রিনকার্ডধারী। এর মধ্যে ২০১৪ সালে তিনি ২ বছরের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। এখন তার গ্রিনকার্ড এই মাসে এক্সপায়ার হয়ে যাচ্ছে এবং তিনি এক্সটেনশন করার জন্য অ্যাপ্লিকেশন করেছেন। এখন গ্রিনকার্ড অফিস থেকে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি দিতে বলে এবং তারা এক বছরের জন্য এক্সটেনশন দেয়। এক বছর শেষে নাগরিকত্বের জন্য অ্যাপ্লাই করতে বলেছে, এখন তিনি নাগরিকত্বের জন্য কবে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন?
জবাবে নাজমুল বলেন, ২০১৪ থেকে রেগুলার এখানে অবস্থান করলে এখন তার সিটিজেন শপের জন্য অ্যাপ্লিকেশন করার সময় হয়েছে, যদি ২০১৪ সালের পর আর কোন ব্রেক অব রেসিডেন্ট না থাকে। তবে এ ব্যাপারে মেরিল্যান্ডের কোন একজন অভিজ্ঞ অ্যাটর্নি নিয়োগ দিয়ে তার কাছে সবকিছু খুলে বলতে এবং ওই অ্যাটর্নি দিয়ে অ্যাপ্লিকেশনের সব কাজ করতে পরামর্শ দেন।
টেলিফোনে নাসরিন জানতে চান, তিনি তার মায়ের জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন গত বছরের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সবকিছু জমা দিয়েছেন। আর কত দিন লাগবে অ্যাম্বাসি থেকে কোন লেটার পেতে?
নাজমুল বলেন, সিস্টেম আপডেট অথবা অন্য কোন কারণে ভিসা সেন্টারে সব মামলা–ই আগের তুলনায় এখন অনেক দেরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি যদি সঠিকভাবে তার ডকুমেন্টস জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। তাদের সিরিয়াল অনুযায়ী তারা কাজ করবে। তাই অন্তত ৬ মাস অপেক্ষা করে ভিসা সেন্টারে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
টেলিফোনে ফ্লোরিডা থেকে শারমিন জানতে চান, তাঁর ভাই গ্রিনকার্ড হোল্ডার, এখন তিনি বিয়ে করবেন। বিয়েটা যদি টেলিফোনে হয় তাহলে তার ভাবির জন্য এখান থেকে কাগজপত্র করা যাবে কিনা?
জবাবে নাজমুল বলেন, টেলিফোনের বিয়ে আমেরিকার ভিসার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। আমেরিকার ভিসার সিস্টেমে স্বামী-স্ত্রী একই ছাদের নিচে থেকে বিয়ে করতে হবে। এবং এক সঙ্গে থাকতে হবে।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিন থেকে টেলিফোনে সুলতানা জানতে চান, তাঁর মা গ্রিনকার্ডধারী। তার ২১ বছরের বোনের জন্য যদি মা অ্যাপ্লিকেশন করেন, তাহলে কত বছর লাগবে?
জবাবে অ্যাটর্নি নাজমুল আলম বলেন, গ্রীনকার্ডধারী মা তার মেয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করলে ৮ থেকে ১০ বছর লাগবে এবং তার বোন এই আট বছর অবিবাহিত থাকতে হবে। এ ছাড়া তিনি বলেন, সুলতানা ইউএস সিটিজেন হলে তিনি নিজে তার বোনের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন, এতে ১২–১৩ বছর লাগবে। এই ক্যাটাগরিতে বোন বিয়ে করলেও তার স্বামী এবং বাচ্চাদেরও নিয়ে আসতে পারবেন। দুটি অ্যাপ্লিকেশনে পরিস্থিতি বুঝে যেটা ভালো হবে, সেটার মাধ্যমে তার বোনকে আনার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
দর্শকদের সব প্রশ্ন ও উত্তর শেষে নাজমুল আলম সবার উদ্দেশে ইমিগ্রেশনের জন্য প্রত্যেকটি ডকুমেন্ট সঠিকভাব তৈরিসহ আবেদন জমা দেওয়ার এবং কোন বিজ্ঞ অ্যাটর্নির সাহায্য নিয়ে কাজটি করার পরামর্শ দেন।