ইন্টারভিউয়ে প্রশ্নের বাইরে বাড়তি কিছু বলবেন না

রওশন চৌধুরী
নিউইয়র্কভিত্তিক বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল টাইম টেলিভিশনের ল’ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অনুষ্ঠানে দর্শকদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন অ্যাটর্নি নাজমুল আলম। আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাভাষাভাষী প্রত্যেকে ইমিগ্রেশনের বিষয়টি নিয়ে কোনো না কোনো ঝামেলায় পড়ে থাকেন। অনেকে সঠিকভাবে অনেক কিছু জানতে পারেন না বলে নানা অসুবিধায় পড়েন এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তও হন। তাই ঘরে বসে সরাসরি প্রচারিত ‘ল অ্যান্ড ইমিগ্রেশন’ অনুষ্ঠানটি দেখে কিংবা অনুষ্ঠানটি নিয়ে আমাদের এই আয়োজনের মাধ্যমে পাঠকেরা ইমিগ্রেশন বিষয়ক অনেক অজানা বিষয় জানাতে পারবেন। আধা ঘণ্টার সরাসরি এই অনুষ্ঠানে টেলিফোন ও ফেসবুক পেজে দর্শকের প্রশ্ন নেওয়া হয় এবং এসব প্রশ্নের উত্তর দেন আমেরিকায় বসবাসরত অ্যাটর্নি নাজমুল আলম। অনুষ্ঠানটি কোনো আইনি পরামর্শ নয়, দর্শকদের নানা প্রশ্নের উত্তর থেকে ইমিগ্রেশন নিয়ে কেবল একটি দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।
সর্বশেষ অনুষ্ঠানের প্রথম প্রশ্নটি করেন বাংলাদেশ থেকে হাসান। তিনি জানতে চান তাঁর স্ত্রী তাঁর জন্য আবেদন করেছেন এবং তার সবকিছু চলে এসেছে, তিনি পাসপোর্ট জমা দেবেন্ ২০১৯ সালের ট্যাক্স ফাইলে ট্রান্সক্রিপ্টা এখনো আসেনি, এখন তিনি যদি ২০১৭/২০১৮ সালের ট্রান্সক্রিপ্ট জমা দেন তাহলে কি কোন অসুবিধা হবে? এ ছাড়া সবকিছু সাবমিট করার পর ভিসা প্রসেসিং করতে কত দিন লাগবে?
জবাবে নাজমুল বলেন, কোন অসুবিধা হবে না্ যে ট্রান্সক্রিপ্ট তার কাছে তা জমা দিয়ে, নতুন ট্রান্সক্রিপ্ট তার কাছে এখনো আসেনি বলে তাদের জানিয়ে দিতে বলেন। এ ছাড়া প্রসেসিংয়ে এখন একটু দেরি হচ্ছে, ম্যান পাওয়ার কম আছে বলে।
টেলিফোনে একজন দর্শক জানতে চান তিনি গ্রিনকার্ডধারী। এক সপ্তাহ হয় তাঁর স্ত্রীর সাপোর্ট তিনি দিয়েছেন, এখন আর কত দিন লাগবে?
জবাবে নাজমুল জানান, সবকিছু ঠিকমতো সাবমিট করা হলে কিছুদিন তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে। তারা কিছুদিনের মধ্যে রিসিভ লেটার পাঠাবে ইমেইল থাকলে ইমেইলে আর না থাকলে মেইল করবে। এখন তারা প্রসেসিংয়ে একটু সময় নিচ্ছে।
টেলিফোনে একজন জানতে চান, তিনি তার বোনের জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলেন, তার কাগজপত্র আসছে। এখন তিনি পরবর্তী কাগজপত্র রেডি করছেন। অ্যাপ্লিকেশন করার সময় তার বোনের স্বামী ও একটা বাচ্চার জন্যও একসঙ্গে নাম ছিল। কিন্তু কিছুদিন হয় তার বোনের স্বামী তার বাচ্চাকে নিয়ে চলে গেছেন এবং তাদের সঙ্গে এখন তেমন ভালো সম্পর্ক নেই। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এখন তার বোনের স্বামী ও বাচ্চার ব্যাপারে কি করবেন?
জবাবে নাজমুল বলেন, এ ব্যাপারে কিছু করার নেই। একমাত্র পুলিশি কেস করতে হবে। তা না হলে ইমিগ্রেশনে এমন কিছু বলা যাবে না যে, সে বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে গেছে তাহলে সম্পূর্ণ কেসটা বাতিল হয়ে যাবে।
ফেসবুকে সাদ তামিম জানতে চান, ফ্যামিলি ভিসায় কত দিন লাগে। যদি ভাইবোন ভাইবোনের জন্য আবেদন করে থাকেন?
জবাবে নাজমুল বলেন এটা হচ্ছে এফ-৪ ক্যাটাগরি। মার্চ মাসের যে বুলেটিনে বলা হচ্ছে যে, ২০০৭ সালের ২২ জুলাই যে অ্যাপ্লিকেশনগুলো আপ্রুভ করা হয়েছিল, সেগুলো মার্চ মাসে তারা কাজ শুরু করবে।
ফেসবুকে সাকিল জানতে চান, তার সব কাগজপত্র অ্যাম্বাসিতে জমা দেওয়া হয়েছে ৪ জানুয়ারি এবং কেসটা রিভিউ হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। ট্যাক্স ফাইল জমা দেওয়ার কথা বলাতে তাও জমা দিয়েছেন, এখন তার কেস রিভিউ করতে কত সময় লাগবে?
উত্তরে অ্যাটর্নি নাজমুল বলেন, একটু সময় লাগবে এই মুহূর্তে, কারণ ইমিগ্রেশন প্রসেসিংয়ে হায়ারিং বন্ধ। পর্যাপ্ত ম্যান পাওয়ার নেই বলে এখন কাজে দেরি হচ্ছে।
রাজিব বাঁধন ফেসবুকে জানতে চান, তিনি কি নাগরিকত্বের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন, তাঁর কন্ডিশনাল গ্রিনকার্ড এখনো পেন্ডিং।
জবাবে নাজমুল বলেন, তিন বছরের বেশি যদি কন্ডিশনাল গ্রিনকার্ড থাকে, তাহলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু যে পর্যন্ত তারা গ্রিনকার্ডের কন্ডিশন রিমুভ না করবে, সে পর্যন্ত তারা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকবে না।
সাকিলা হাসান জানতে চান, তার মা গ্রিনকার্ড হোল্ডার, তিনি অবিবাহিত। তার জন্য তার মা অ্যাপ্লাই করেছে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে, এটি আপ্রুভ হতে কত দিন লাগবে? তার বয়স এখন ৩০ বছর?
জবাবে নাজমুল বলেন, জুলাই ২০১৫ সালের প্রসেসিং কাজ শুরু হয়েছে। তাই খুব তাড়াতাড়ি তার জন্য হয়তো সুখবর চলে আসবে। তবে অবশ্যই অবিবাহিত থাকতে হবে। আর লুকিয়েও বিয়ে করে থাকলে তাদের কানে যাবে এবং এতে ভিসা বাতিল হয়ে যাবে।
টেলিফোনে সাগর জানতে চান, তাঁর মা তাঁর আন্ডার–এইজ ছোট ভাইয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন। দুই সপ্তাহ আগে তার সব ফি ও অন্যান্য সবকিছু জমা দেওয়া হয়েছে। এটির জন্য কত দিন সময় নেবে?
জবাবে নাজমুল বলেন, এই প্রসেসিংয়ে মাত্র ২ মাস সময় লাগে, কিন্তু তারা একটু বেশি সময় নিচ্ছে। কারণ ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজে ফেডারেল সরকার প্রয়োজনের তুলনায় লোক নিয়োগ দিচ্ছে না। লোকবলের কারণে ইমিগ্রেশনের কাজ এখন অনেক দেরিতে হচ্ছে। তাই অন্তত ৬ মাস অপেক্ষা করতে বলেন।
টেলিফোনে শাহাদাত হোসেন দুটি প্রশ্ন করেন। প্রথমে তিনি জানতে চান অ্যাসাইলাম ক্যাটাগরিতে কি কোন পরিবর্তন হয়েছে? অল্প কিছুদিন হয় গ্রিনকার্ডের জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন তার পরিচিত কয়েকজনের মধ্যে সাত আটজনের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়েছে। তার ফিঙ্গার প্রিন্ট দুই বার নিয়েছে। ফিঙ্গার প্রিন্ট কি দুইবার নেয়া যায়? দ্বিতীয় প্রশ্ন ফিঙ্গার প্রিন্টের পরে গ্রিনকার্ড পেতে কত সময় লাগবে?
জবাবে নাজমুল বলেন, ফিঙ্গার প্রিন্ট যদি ওরা নেয়, তাহলে ওদের সিস্টেম আপডেট করছে। একটি ফিঙ্গার প্রিন্টের ভেলিডিটি দুই বছরের জন্য থাকে। অনেক সময় তারা রি-চেক করতে দুইবার নেয়, মিলিয়ে দেখে আগের প্রিন্টের পরে ওই লোকের কোন গান কেস বা ক্রিমিনাল কেস হয়েছে কিনা। যদি দ্বিতীয়বারে রিপোর্ট ভালো আসলে সে গ্রিনকার্ড পাবে। আর নতুন কোন ক্রিমিনাল কেস ধরা পড়লে গ্রিনকার্ড আটকে দেবে।
ফেসবুকে তামান্না জাহান জানতে চান, তার মেডিকেইড ও মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স আছে। কিন্তু তিনি কোন পাবলিক চার্জ নেননি। এতে কি তাঁর স্বামীকে আনতে কোন অসুবিধা হবে?
একইভাবে আদিল ফেসবুকে প্রশ্ন করেন, গ্রিনকার্ড হোল্ডার তাঁর স্ত্রীর জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন, এখন কি তার স্ত্রী আসার পর মেডিকেল সুবিধা পেতে কোন অসুবিধা হবে?
আবদুল হামিদ জানতে চান, স্ত্রী তাঁর জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন। তার মেডিকেইড আছে ও মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স আছে। তিনি এডুকেশন এইডও নিয়েছেন, এটা কি তার ভিসার পেতে কোন অসুবিধা হবে?
এই তিনজনের প্রশ্ন একই বিষয়ে। তাদের প্রশ্নে জবাবে নাজমুল বলেন, পাবলিক চার্জের বিষয়টি দেখা হবে যিনি ভিসা পাবেন, তার বিষয়ে ভিসা কনস্যুলেটরা দেখে। যিনি আসবেন তিনি এখানে এসে কাজ না করে পাবলিক চার্জের ওপর নির্ভর করবেন কিনা, যদি তারা দেখে তিনি পাবলিক চার্জ নেবেন, তখন তার ভিসাটা না দিতে পারে।
টেলিফোনে একজন দর্শক জানতে চান, তিনি অ্যাসাইলামের অ্যাপ্লাই করেছেন ২০১৬ সালে, এখনো তিনি কোন ইন্টারভিউয়ের ডেট পাননি, এখন এর ভবিষ্যৎ কি?
উত্তরে নাজমুল বলেন, ২০১৬ সালের অ্যাপ্লিকেশন এখন প্রসেসিং হচ্ছে। তাই তাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দেন।
ফেসবুকে একজন জানতে চান, তিনি মেট্রোপ্লাস ইনস্যুরেন্স ব্যবহার করছেন, সামনে তার নাগরিকত্ব পরীক্ষা এতে কি তার কোন অসুবিধা হবে?
উত্তরে নাজমুল বলেন, মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে নাগরিকত্ব ইন্টারভিউতে তেমন জিজ্ঞেস করে না। তবে ইন্টারভিউদাতা যেন নিজে থেকে এসবের কিছু বলতে না যান। এতে তারা অন্যান্য কিছু প্রশ্ন করে আরও কিছু ডকুমেন্টস চাইতে পারে, এতে সময় নষ্ট হবে। এ ব্যাপারে যেন সবাই সতর্ক থাকে। প্রশ্নকর্তা যা জিজ্ঞেস করবে, তার উত্তর শুধু দেবেন। নিজে থেকে কিছু করতে না যাওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
সব শেষে নাজমুল আলম সবার উদ্দেশ্য বলেন, ইমিগ্রেশনের যেকোনো কাজে অবশ্যই
যেন একজন বিজ্ঞ অ্যাটর্নির পরামর্শ নিয়ে কাজ করেন।

>

ভিসা সম্পর্কিত বার্তা

পরিবারভিত্তিক এবং চাকরিভিত্তিক ভিসা প্রদানের বার্ষিক সংখ্যা কংগ্রেস কর্তৃক সীমাবদ্ধ। এই ক্যাটাগরির আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নির্ধারিত হয় যদি তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখ হালনাগাদ থাকে ও ভিসার সংখ্যা বর্তমান থাকে। যদিও সম্ভাবনা আছে, অগ্রাধিকার তারিখের পরিবর্তন হতে পারে এবং সাক্ষাৎকারের সময় ভিসার সংখ্যা আর বর্তমান নাও থাকতে পারে। আপনার ক্যাটাগরির ভিসার সংখ্যা যদি বর্তমান না থাকে, তবুও আপনার সাক্ষাৎকার যথা সময়ে হবে, তবে আপনার ভিসা ততদিন পর্যন্ত ইস্যু হবে না, যতদিন পর্যন্ত অগ্রধিকার তারিখ হালনাগাদ হয় এবং নতুন ভিসার সংখ্যা বর্তমান হয়। সকল অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীগণ তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে (https://bit.ly/2EfaUuN) ভিসা বুলেটিন দেখতে পারেন।
বর্তমানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে সকল তারিখ সমূহের কাজ চলছে?

মাস : মার্চ ২০২০
F1 : ০৮ অক্টোবর ২০১৩: (আমেরিকান নাগরিকদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F2A : চলতি: [এলপিআর ব্যক্তিদের স্বামী বা স্ত্রী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য (দেশভিত্তিক কোটা সাপেক্ষে)]
FX : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০: (F2A কেইসেস যাদের অগ্রাধিকার তারিখ পুরোনো)
F2B : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪: [এলপিআর ব্যক্তিদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য (২১ বছর বা উপরে)]
F3 : ২২ ডিসেম্বর ২০০৭: (মার্কিন নাগরিকদের বিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F4 : ০১ জুলাই ২০০৬: (প্রাপ্ত বয়স্ক মার্কিন নাগরিকদের ভাই/বোন ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)

এমপ্লয়মেন্ট ভিসা
E3 : ০১ জানুয়ারি ২০১৭: (দক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
EW : ০১ জানুয়ারি ২০১৭: (অদক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)