বয়স কম হলেই করোনার ঝুঁকি কম ভাববেন না

লেখক ফিওনা লোয়েনস্টেইন।
লেখক ফিওনা লোয়েনস্টেইন।

অনেকেই ভাবছেন কম বয়সীরা করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ‘মিলেনিয়াল’ নামে পরিচিত প্রজন্ম করোনাভাইরাসকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এটা তাঁদের বড় ভুল। করোনাভাইরাস মিলেনিয়ালদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের মতামত বিভাগে নিজে করোনাভাইরাসে ভোগার সময়কার কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরেছেন ফিওনা লোয়েনস্টেইন। তিনি লেখক, প্রযোজক ও নারীবাদী সুস্থতার প্রতিষ্ঠান বডি পলিটিকের প্রতিষ্ঠাতা।

ফিওনা লিখেছেন, ‘আমার বয়স ২৬। আমার আগে কখনো শ্বাসপ্রশ্বাসের কোনো সমস্যা ছিল না। আমি সপ্তাহে ছয় দিন ব্যায়াম করি এবং সিগারেট থেকে দূরে থাকি। আমি ভেবেছিলাম, বর্তমান স্বাস্থ্য সংকটে প্রবীণদের পাশে থেকে ভূমিকা রাখতে পারব। এভাবে আমি সংক্রমিত হলাম এবং কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হিসেবে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হলো।’

নিজের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের অবস্থার বর্ণনা করে ফিওনা লিখেছেন, ‘১৩ মার্চ উপসর্গ বোঝার পর অন্যদের কথা চিন্তা করে নিজেকে সামাজিকভাবে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওই দিনই আমার মাথাব্যথা ও জ্বর শুরু হয়ে গেল। আমি খারাপটি ধরে না নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তবে সতর্কতার অংশ হিসেবে আমার সঙ্গী এবং আমি আলাদা বেডরুমে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

‘পরের দিন সকালে শুরু হয়ে গেল কাশি। রোববার আবার জ্বর চলে গেল এবং ভালো লাগা শুরু হলো। মনে হলো, আমার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেনি। আমি সম্ভবত শুনেছিলাম যে ঘরে বসে আমি কাজ চালাতে সক্ষম হব। কারণ, আমি জানতাম আমার মতো লোকদের খুব চিন্তা করার দরকার নেই। পরের দিনের কাজের পরিকল্পনা এবং গোসল করার কথা ভাবতে শুরু করলাম। ওই দিনই মাঝরাতে আমার আবার কাঁপুনি নিয়ে জ্বর, বমি ও শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করল। সোমবার আর কথা বলার মতো অবস্থা থাকল না। কয়েকটি শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে প্রচণ্ড অক্সিজেনের অভাব বোধ করতে শুরু করলাম। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে আমি বাথরুমে পর্যন্ত যেতে পারছিলাম না। বাথরুম যেতে গেলে মনে হচ্ছিল কয়েক মাইল পর্যন্ত দৌড়াচ্ছি। সোমবার সন্ধ্যার দিকে খেতে গিয়েও মনে হলো আমি অক্সিজেনের অভাবে খেতে পারছি না। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়েও অক্সিজেনের অভাবে হাঁসফাঁস করছিলাম। নানা কারণে আমি হাসপাতালে যেতে চাইছিলাম না। আগে যখন করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ফোন করেছিলাম, তারা বলেছিল যে করোনারোগীকে অবশ্যই বাসায় থাকতে হবে। এ ধরনের উপদেশ আমি অন্য জায়গাতেও পেয়েছিলাম। আমার যদি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে থাকে, তবে তা আমি ছড়াতে চাইছিলাম না। আবার ভয় পাচ্ছিলাম, আমার করোনা না হলে আমি সেখানে গিয়ে আক্রান্ত হতে পারি। তবে ওই কঠিন পরিস্থিতিতেও মনে হচ্ছিল আমার বয়স যেহেতু কম ও স্বাস্থ্য ভালো, আমার কিছু হবে না।’

ফিওনা লিখেছেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ মিলে যাওয়ায় আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। আমাকে দেখে চিকিৎসক বা নার্সরা কেউ আশ্চর্য হয়নি। আমি জানতে পারলাম, পাশের ঘরেই ৩০ বছর বয়সী আরেকজন রোগী ভর্তি। তারও স্বাস্থ্য ভালো। তারও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানালেন, আমার মতো বয়সের আরও অনেকেই এ ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। যখন আমাকে অক্সিজেনের নল দেওয়া হলো, কেবল তখনই আমি কিছুটা স্বস্তি পেলাম। আমি ভাগ্যবান যে সমস্যার শুরুতেই হাসপাতালে জায়গা ও যত্ন পেয়েছিলাম।’

ফিওনা মিলেনিয়ালদের পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, ‘আপনি যদি কম বয়সী হন, তবে আপনাকে করোনাভাইরাসের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এ মহামারিতে তরুণদের ওপরে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে ভাইরাসটি। যেহেতু অনেকেই ধরে নিয়েছেন যে মিলেনিয়ালদের ক্ষেত্রে উপসর্গ বোঝা যায় না, তাই আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখতে হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের প্রজন্মের বেশির ভাগ এবং আমাদের চেয়ে কম বয়সীদের মধ্যে কেউ কেউ এই জনস্বাস্থ্য সংকটকে যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে না। আমরা দল বেঁধে জড়ো হয়ে যাচ্ছি, ভ্রমণ করছি এবং কোয়ারেন্টিনের সময়কে ছুটি মনে করে কাটাচ্ছি। সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন প্রজন্ম হিসেবে আমাদের উচিত আরও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহযোগী হিসেবে বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। তবে যদি কেউ যদি সামাজিক দায়িত্ব নিতে না চান, তবে নিজেকে সুরক্ষার জন্য হলেও তিনি যেন বাড়িতে অবস্থান করেন। এ রোগে মিলেনিয়ালরা প্রতিরোধী, এটা নিছকই মনগড়া, যা আমি অভিজ্ঞতা দিতেই বলতে পারছি। ইউরোপ ও এশিয়াতে তরুণদের সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস এ সপ্তাহে তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণে হাসপাতালে আসা ব্যক্তিদের ৪০ শতাংশের বয়স ৫৪ বছরের কম।’

ফিওনা বলেন, ‘আমরা প্রায় ক্ষেত্রে সঙ্গীসহ জনাকীর্ণ অ্যাপার্টমেন্টগুলোয় থাকি, যার অর্থ ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য আমাদের ক্ষমতা কম এবং আমাদের একে অপরের ওপর নির্ভর করা এবং আস্থা রাখতে হবে। অন্যান্য প্রজন্মের তুলনায় আমাদের মা–বাবার সঙ্গে থাকার সম্ভাবনা আরও বেশি, এভাবে প্রিয়জনদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি হতে পারে। আমাদের সমাজে এমন অনেক কিছুই রয়েছে, যা আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পাচ্ছি, যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তবে চলুন, আমরা যেখানে পারি সেখানে একটি প্রভাব তৈরি করার চেষ্টা করি।’