নিউইয়র্কে গুরুতর অসুস্থ সাংবাদিক ইলিয়াস খসরু ও আকবর হায়দার

সৈয়দ ইলিয়াস খসরু ও আকবর হায়দার কিরন
সৈয়দ ইলিয়াস খসরু ও আকবর হায়দার কিরন

নিউইয়র্কে বাংলা সংবাদমাধ্যমকর্মীরা ভালো নেই। টাইম টেলিভিশনের অন্যতম পরিচালক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ভয়েস অব আমেরিকার নিউইয়র্ক প্রতিনিধি সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরনের সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে (২৪ মার্চ) ম্যানহাটানের মাউন্ট সাইনাই হাসপাতালে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। বাংলা পত্রিকার এ বি এম সালাহ উদ্দিন উচ্চ রক্তচাপে নিয়ে অসুস্থ। এ ছাড়া আরও তিনজন বাংলা সংবাদমাধ্যমকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

এদিকে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ৩ হাজার ২০০ সদস্য অসুস্থ। এর মধ্যে ২৩০ জন গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদের শারীরিক পরীক্ষার ফলাফল অপেক্ষমাণ। ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পুলিশ (এনওয়াইপিডি) সদস্যদের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে।

করোনাভাইরাস তাণ্ডবে নাকাল হওয়া পুরো আমেরিকা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এরই মধ্যই দেশকে সচল করে দিতে চান তিনি। সবকিছু খুলে দিতে যান। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমেরিকা বন্ধ হয়ে পড়ার দেশ নয়। তিনি খুলে দিতে চান ১২ এপ্রিল থেকে। অন্তত ৩০টি রাজ্যের গভর্নররা বলেছেন, ওয়াশিংটনের নির্দেশ যা–ই আসুক না কেন, তাঁরা মানুষের জীবনকে অগ্রাধিকার রাখবেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত তাঁরা অর্থনীতি সচল করার জন্য সব খোলে দিচ্ছেন না।

নিউইয়র্ক নগরীতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২৮০ বলে জানানো হয়েছে। এলাকা অনুযায়ী কুইনসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৪২০ জন, ম্যানহাটনে ৩ হাজার ৬১৬ জন, ব্রুকলিনে ৫ হাজার ২৩২ জন, ব্রংকসে ৩ হাজার ৫৪২ জন, স্টেটেন আইল্যান্ডে ১ হাজার ১৬৬ জন। সংখ্যা এখনো দ্রুত বাড়ছে।

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নিউইয়র্কের একমাত্র এলমহার্স্ট হাসপাতালেই ১৩ জন করোনায় মারা গেছেন। ইমার্জেন্সি রুম, এমনকি ফ্লোরেও জায়গা নেই। নিউইয়র্কের কুইন্সে ৬ হাজার রোগী করোনায় আক্রান্ত। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে। নগরীর পুলিশ বিভাগের ২০০ জনের বেশি লোক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। নিউইয়র্ক থেকে অন্য কোথাও গেলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বুধবার বিকেলে বলেছেন, শহরের অর্ধেক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।

কুলাউড়া অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ-আমেরিকান সোসাইটির সাবেক সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা, কমিউনিটিতে সজ্জন হিসেবে পরিচিত ইলিয়াস খসরু সম্প্রতি তিনি সপরিবারে পবিত্র ওমরাহ হজ পালন করেন। সৌদি আরব সফর শেষে নিউইয়র্কে ফেরার পর ঠান্ডা-জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ছাড়া খসরু কিডনি, নিউমোনিয়াসহ শারীরিক নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। সাংবাদিক কিরন নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে এস্টোরিয়ার মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তিনি স্ট্রোক করেছেন।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আকবর হায়দার কিরন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। রোগীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তিন ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক কিরনকে ম্যানহাটানে স্থানান্তর করে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হন। রোগী এখন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশিরা ভালো নেই। লকডাউনে দিন কাটাচ্ছেন। রাজ্য গভর্নর বলেছেন লকডাউন কাজ করছে। সে হারে ভাইরাসে আক্রান্ত বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা থেকে কিছুটা ধীরগতিতে হচ্ছে। এক দিনেই দ্বিগুণ হচ্ছে না। নিউইয়র্কে এখনো ভাইরাস পরীক্ষা সহজলভ্য নয়। শরীরে লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেই কেবল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং ভেন্টিলেশন দেওয়া হচ্ছে।

বেকার ভাতার ব্যবস্থা
কর্মহীন লোকজনকে বেকারভাতা দেওয়া হচ্ছে। দ্রুতই এ ভাতার আবেদন প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। সবেতন পারিবারিক ছুটি দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ফুড স্ট্যাম্পের আবেদন দ্রুততার সঙ্গে মঞ্জুর করা হচ্ছে। নিচের লিংকগুলো ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সব আবেদন করা যাবে। নিজে না পারলে পরিবারের কারও সাহায্য নিয়ে আবেদন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাড়ির মালিকেরা প্রপার্টি ট্যাক্স নিয়ে নগরীর ফাইন্যান্স বিভাগে https://paidfamilyleave.ny.gov/COVID19, https://www.cdc.gov/coronavirus/2019-ncov/index.html; SNAP (Food Stamps) ফুড স্ট্যাম্পের জন্য https://a069-access.nyc.gov/accesshra/login; জটিল মানসিক সমস্যার জন্য https://www1.nyc.gov/site/dfta/services/find-help.page; Hotline 212-244-6469; ক্ষুদ্র ব্যবসায় সহযোগিতা ও ঋণ গ্রহণের জন্য NYC Small Business HELP/Grant/Loan; https://www1.nyc.gov/…/busin…/covid19-business-outreach.page; নিউইয়র্কের শিক্ষা বিভাগের যাবতীয় সহযোগিতা ও তথ্যের জন্য NYC Department of Education; শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য বিনা মূল্যে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জন্য https://coronavirus.schools.nyc/RemoteLearningDevices; কারও ঘরে ইন্টারনেট না থাকলে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট পাওয়ার জন্য To enroll, call Spectrum at 844-488-8395 যোগাযোগ করতে পারেন।

এসব ছাড়াও যাঁদের অভিবাসন কাগজপত্রে জটিলতা আছে, বৈধতার কাগজপত্র নেই তাঁরা নানা চ্যারিটিতে সাহায্যের আবেদন করতে পারবেন। এসব সহযোগিতার জন্য কোনো অভিবাসন পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
•Catholic Charities Community Services, Archdiocese of New York Helpline at 1-888-744-7900 - food resources and support for seniors.
•Immigrant and Refugee Services - Email [email protected] or call 212-419-3700.
•Call 888-NYC-WELL (888-692-9355)

মানবিক নগরী নিউইয়র্কের মানুষ সংকটেও হতাশ হবেন না। 311–এ কল দিন যেকোনো প্রয়োজনে। ২৪ ঘণ্টা খোলা এ নম্বর থেকে দ্রুততার সঙ্গে আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হবে করণীয় সম্পর্কে। ইংরেজি না জানলেও কথা বলতে পারবেন। এ ছাড়া কমিউনিটির নানা লোকজন সাহায্যের জন্য নানা প্রয়াস নিয়েছেন। নিউইয়র্কে যেকোনো সংবাদকর্মীকে ফোন করতে পারেন। ২৪ ঘণ্টা কর্মতৎপর এসব সংবাদকর্মী দ্রুত আপনাকে পরামর্শ দিয়ে, করণীয় নিয়ে পরামর্শ দিতে পারবেন।

কর্মহীনতার জন্য আবেদন করতে পারবেন নিচের লিংকে। যাঁরা ট্যাক্সি চালান, উবার, গ্রিন ক্যাব, লিফট চালান, স্বাধীন অন্যান্য কাজে ছিলেন, কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন, তাঁরা আবেদন করতে পারবেন। web:labour.ny.gov; Phone number:- 1888-469-7365 (Bangali). যাঁরা ট্যাক্সির মালিক, ম্যাডালিয়ান মালিক, তাঁরা অনুদান বা ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন, nyc.gov and apply for small business grant।

নগরীর প্রায় প্রতিটি স্কুলে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ফ্রি খাবার দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে কেউ খাদ্য সাহায্য নিতে পারেন। অবশ্যই মর্টগেজ কোম্পানিকে কল দিতে হবে। বাড়ির মালিক, ক্রেডিট কার্ডের ঋণ গ্রহীতা, গাড়ি কেনার ঋণ, ইউটিলিটি বিল/ইন্টারনেট বিল পরিশোধে বিলম্ব হবে জানিয়ে ওসব প্রতিষ্ঠানে কল দিতে হবে। উদ্যোগ না নিলে সুবিধা পাওয়া যাবে না ।

অর্থসহ নানা নাগরিক সুবিধা পাবেন নিউইয়র্কবাসী
করোনাভাইরাসে আমেরিকার ইতিহাসে বৃহত্তম নাগরিক সুবিধা সরাসরি জনগণের হাতে পৌঁছাতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। আগের উদাহরণ থেকে বলা যায়, তিন সপ্তাহের আগে এসব সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে। ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলার পাবেন, যাঁদের বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলারের নিচে। স্বামী স্ত্রী বা দম্পতি মিলে পাবেন ২ হাজার ৪০০ ডলার। ১৭ বছরের প্রতি সন্তানের জন্য পাবেন ৫০০ ডলার। বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলার থেকে ৯৯ হাজার ডলার পর্যন্ত কমতে থাকবে এবং বছরে এককভাবে যাঁরা ৯৯ হাজার ডলার আয় করেন, তাঁরা এ সহযোগিতা পাবেন না। আমেরিকার ৯০ শতাংশ মানুষই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির যোগ্য হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে করদাতা লোকজন এক হাজার ডলার করে পাবেন।