এফডিএনওয়াইয়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

আমেরিকার স্বপ্নের শহর নিউইয়র্কে এ সময় বসন্ত। গাছের ডালে ডালে এথন বাহারি ফুল, ওলতা পাতার সমাহার, মৃদু বাতাস, বাতাসে সুগন্ধি ফুলের সৌরভ, সে এক ভিন্ন মুগ্ধতা। কিন্তু এই বসন্তে সেই নিউইয়র্ক শহরের রূপ বদলে গেছে। এই শহরে চলছে আজ মৃত্যুর মিছিল। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি—কেউ রেহাই পাচ্ছেন না করোনাভাইরাস থেকে।

পুলিশের পাশাপাশি নিউইয়র্ক ফায়ার ডিপার্টমেন্টের (এফডিএনওয়াই) অনেকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ২৭ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৭০ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। তথ্যটি ডেইলি নিউজকে জানিয়েছেন এফডিএনওয়াই।

এফডিএমওয়াই অর্থাৎ ফায়ার ডিপার্টমেন্ট আরও জানায়, ২৭ মার্চ পর্যন্ত ১৭০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে এবং এর মধ্যে ব্রুকলিন সদর দপ্তরে ফায়ার ফাইটার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল সার্ভিস কর্মী ও বেসামরিক কর্মী রয়েছে।

এফডিএনওয়াই কমিশনার ড্যানিয়েল নেগ্রো বলেন, ‘আমার বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আর বাড়বে না। আমাদের স্টাফদের মনোবল এখনো শক্ত, সার্বিক পরিস্থিতি কিছুটা নাজুক। কারণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আমাদের কর্মীরা এখন কাজ করতে পারছেন না। তবে আমরা কারও ওপর খুব বেশি কাজের চাপ না দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

দ্য নিউজের খবরে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ এফডিএনওয়াই নথিগুলো দেখায়, করোনাভাইরাস কীভাবে দ্রুত কর্মীদের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। ৯ মার্চ এফডিএনওয়াইয়ের মধ্যে কেবল ১৯ জন কর্মচারী কোয়ারেন্টিনে ছিল এবং তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কভিড-১৯ পজিটিভ। সেই একজন ছিলেন ইএমএস সদস্য। এফডিএনওয়াইয়ের তারপর কেবল ১০টি করোনভাইরাস কেস ছিল। তবে ২২ মার্চের মধ্যে এই সংখ্যা ২৫ পর্যন্ত গড়ায়। ২৭ মার্চ এফডিএনওয়াইয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই সংখ্যা ১৭০ জনে পৌঁছেছে।

এফডিএনওয়াইয়ের একজন ইএমএস প্যারামেডিক ক্রিস্টাল ক্যাডেট, যিনি গত সপ্তাহে লং আইল্যান্ড হাসপাতালের বিছানা থেকে বিশ্বের সঙ্গে তার করোনভাইরাস লড়াই সম্পর্কে শেয়ার করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে শ্বাস নিতে পারছেন না। তাঁকে এখন ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে। তাঁর পরিবার ও বন্ধুরা জানিয়েছে, ৩৪ বছর বয়সী ক্যাডেটের গলায় একটি শ্বাস নল দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো সে লড়াই ছাড়েনি।

লং আইল্যান্ডের হাসপাতাল থেকে ওই ক্যাডেট সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেছেন, যেখানে তাকে এক সপ্তাহ আগে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে সপ্তাহান্তে তার অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়। তাঁর পরিবার ও বন্ধুরা ভাইরাসের সংক্রামনের কারণে তাকে দেখতেও যেতে পারছেন না। ক্যাডেটের বন্ধু ও সহযোগী এফডিএনওয়াই ইএমএস প্যারামেডিক শেরি সিঙ্গেলটন বলেন, ‘ক্যাডেট অবশ্যই খারাপের দিকে যাচ্ছে।’ তিনি জানান, গত শনিবার টেক্সটের মাধ্যমে ক্যাডেটের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়।’

৬১ বছর বয়সী তার মা জেসি ক্যাডেট বলেন, ‘আমি এখনো কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না, কেন আমার এত স্বাস্থ্যবতী মেয়েটিকে এই ভাইরাস আক্রমণ করল। এটি খুবই হৃদয় বিদারক। কাউকে বোঝানোর ভাষা আমার নেই।’

এফডিএনওয়াইয়ের মুখপাত্র জিম লং বলেন, ‘আমরা আশা করছি কোভিড-১৯–এ ক্ষতিগ্রস্ত এফডিএনওয়াইয়ের সব সদস্য দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন বলে আমরা আশা করি।