নিউইয়র্কে বাজছে ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট

নিউইয়র্কে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সব সময় অ্যাম্বুলেন্সের ভিড় লেগেই আছে। ছবি: এএফপি
নিউইয়র্কে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সব সময় অ্যাম্বুলেন্সের ভিড় লেগেই আছে। ছবি: এএফপি

বিকেলে রান্না করছি। এমন সময় মোবাইল ফোনে ইমারজেন্সি অ্যালার্ট বেজেই চলছে। প্রথমে ভেবেছি, হয়তো গাড়ি চুরি হয়ে বা বাচ্চা অপহরণ। হয়তো বা আবহাওয়ার কোনো জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। কাজ শেষ করে মোবাইল ফোনে চোখ দিতেই অসহায় মনে হলো নিজের জন্য, নিউইয়র্কের মানুষের জন্য।

আমার ভাবনা ঠিক নয়। নিউইয়র্ক সিটি হেলথ রেড অ্যালার্ট দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে লাইসেন্সধারী ডাক্তার, নার্স, স্বেচ্ছাসেবকসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সাহায্য চাচ্ছে।

সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৮ জন। আমেরিকা এখন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৮৪ জন

আমেরিকার মধ্যে নিউইয়র্কের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। নিউইয়র্কে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৫৩৮ জনের। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৯৩ হাজার ৫৫ জন। এ কারণে নিউইয়র্কের গভর্নর পুরো আমেরিকা থেকে নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মী চেয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছেন। সবার ফোনে ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট দিয়ে বার্তা পাঠাচ্ছেন। এতে কেউ যদি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে চান, তাহলে করতে পারেন। কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে তারাও কর্মী দিয়ে সাহায্য করতে পারে।

হাসপাতালের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। নির্দিষ্ট ঘণ্টার চেয়ে অনেক বেশি সময় কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। চিকিৎসক ও নার্সরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ কারণে হাসপাতালে তাদেরও সংকটও দেখা যাচ্ছে।

হাসপাতালগুলোতে এখন আর রোগী রাখার জায়গা নেই। রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ডাক্তার দেখানোর জন্য। হাসপাতালে শয্যা নেই, তাই মেঝে ও চেয়ারে রেখেই সেবা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, তাঁর ১২ ঘণ্টার ডিউটিতে ১৩ জন রোগী মারা গেছে। কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে রাতে তাঁরা ঘুমাতেও পারছেন না। চোখ বন্ধ করলে রোগীদের অসহায় চেহারা ভেসে উঠছে। যারা মারা যাচ্ছে, তাদেরও চেহারা ভেসে উঠছে। ভয়ে বারবার তাঁদের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। কেউ কেউ হাসপাতালে ১৮ ঘণ্টাও কাজ করছেন।

বর্তমানে ২২ হাজার চিকিৎসক ও নার্স সরকারি হাসপাতালে কাজ করছেন। নিউইয়র্ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এখনো ৫৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন।

মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন, ‘আমেরিকানদের সত্য জানার অধিকার আছে। পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে এবং আসল কথা হচ্ছে এপ্রিল ও মে মাসে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’

চিকিৎসা সামগ্রীর সংকটরে কারণে নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস আরও খারাপ রূপ নেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন নিউইয়র্ক শহরের মেয়র। প্রয়োজনের তুলনায় দিন দিন কমে আসছে চিকিৎসার সামগ্রী। এইভাবে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় জিনিস কমতে থাকলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।

মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেছেন, ভাইরাসটি মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। মহামারি কতটা ভয়াবহ হতে পারে প্রশাসন সঠিক অনুমান করতে পারেনি। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি। এর পরিণাম ভোগ করছে নিউইয়র্কবাসী।