বিপর্যস্ত নিউইয়র্ক

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী আমেরিকাই এখন হয়ে উঠেছে মহামারির কেন্দ্র। চার লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে নিশ্চিত সংক্রমিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়। মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নিউইয়র্কে, যেখানে আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকাংশের বাস। এরই মধ্যে আমেরিকায় মারা গেছেন ৯১ জন প্রবাসী। সংখ্যা আরও বাড়ছে।
নিউইয়র্ক নগরীতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। নগরীর বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় এখন নীরবতা। কোন দিক থেকে ধেয়ে আসবে পরবর্তী দুঃসংবাদ, তা কেউ জানে না। প্রিয়জনদের কুশল ভাবনায় সবাই উদ্বিগ্ন। আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র।
করোনাভাইরাস নিউইয়র্কে যেভাবে বিস্তার করেছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সময় একই সঙ্গে শক্ত মানসিকতা ও সাহসও দাবি করে। এই সময় দাবি করে পারস্পরিক সহমর্মিতার, সহযোগিতার। বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই ব্যক্তি ও সাংগঠনিক উদ্যোগে অন্য মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। খাবার, ওষুধ থেকে শুরু করে নানা নিত্যপণ্য বিতরণ করছেন। এটি সাহস জোগাচ্ছে। কেউ কেউ অনলাইনে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন, দিচ্ছেন সুপরামর্শ। এই সবই এখন ভীষণভাবে জরুরি।
নতুন করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত যতজনকে আমাদের মধ্য থেকে কেড়ে নিয়েছে, তাদের ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাকিদের রক্ষায় সবাই মিলে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মেনে চলা যায় লকডাউনসহ নানা সতর্কতা কৌশল। এতে ক্ষতি কমানো সম্ভব। যারা মারা গেছেন, তাঁদের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো যায়, দেওয়া যায় আশ্বাস। এই আশ্বাস দেওয়াকে সাদা চোখে অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। কিন্তু এ তো সত্য যে, যে মানুষ হতাশ নয়, সে মানুষের জীবনীশক্তি বেশি থাকে। আর ঢাল-তলোয়ার ছাড়া করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের এই মুহূর্তে এটিই তো মানুষের একমাত্র অস্ত্র।
এখন পর্যন্ত নিউইয়র্কসহ পুরো আমেরিকায় ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির যারা আক্রান্ত হয়েছে, যারা মারা গেছে, তাদের ফিরে পাওয়া সম্ভব না হলেও একটু সমবেদনা একটু সাহস দেওয়া অন্যদের জন্য অনেক বড় কাজ করতে পারে। বাংলাদেশি কমিউনিটির যেকোনো একজনের মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, সবাইকে অনেক বেশি শঙ্কিত করে তুলছে। এ অবস্থাতেই সবাইকে সবার পাশে দাঁড়াতে হবে। দূরে থেকেই, সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলো মেনেই এই সাহস জুগিয়ে যাওয়ার কাজটি করতে হবে। এই দুর্যোগে শুধু এইটুকু প্রত্যাশাই রাখা যায় যে, আর কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি মারা যাবে না। আর কেউ অকালে চলে যাবে না।