বিপদগ্রস্ত স্বদেশিদের পাশে তাঁরা

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে নিউইয়র্কে কর্মহীন ও ঘরবন্দী মানুষকে নিজ উদ্যোগে খাবার, মাস্কসহ নানা জরুরি সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া ও সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি আমেরিকান। করোনায় যখন গোটা আমেরিকা বিপর্যস্ত, লকডাউনে কয়েক কোটি মানুষ স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী, তখন ‘মানুষ মানুষের জন্য’ স্লোগানে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন।
এসব উদ্যোগী বাংলাদেশি আমেরিকানের মধ্যে রয়েছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম, মোবাইল ক্যারিয়ার ব্যবসায়ী হিমু আমিনসহ অনেক। তাঁদের এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন আরও বাংলাদেশি আমেরিকান। তাঁরা ছাড়াও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান স্বদেশিদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।
কুইন্সের ওজোন পার্কের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম এক মাস ধরে প্রায় ৫০০ পরিবারকে খাবার বিতরণ করছেন। করোনা মোকাবিলায় প্রতি শুক্রবার ওজোন পার্কের স্কাইলাইন পার্টি হলে তিনি এই খাবার বিতরণ অব্যাহত রাখবেন বলে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে জানান। তিনি বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০-৩০০ ফোন কল আসে। আমাদের একটি টিম এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়।
খাইরুল বলেন, কয়েক দিন আগে একজন বাংলাদেশি নারী আমাদের ফোন করে বলেন, দীর্ঘ ১২ দিন শুধু সিরিয়াল ও দুধ খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর বাসা এলমহার্স্ট হাসপাতালের পাশে হওয়ায় কোন পরিচিতজন ভয়ে তাকে সাহায্য করতে পারছেন না। এমনকি স্বামী নেই বিধায় সন্তানদের চিন্তায় ঘর থেকে বের হননি।
হিমু আমিন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তহবিল উত্তোলন করে কমিউনিটিতে মাস্ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করছেন। সংকটময় এই সময়ে কীভাবে কাজটি করছেন এ সম্পর্কে হিমু বলেন, ‘আমি আমেরিকায় মোবাইল ক্যারিয়ারের ব্যবসা করি। যখন পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে দেখছি করোনায় অনেকে নিজের সুরক্ষার জন্য মাস্ক ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী না থাকায় আতঙ্কে ভুগছেন, তখনই আমি একজন মানুষ হিসেবে এই মানবিক কাজটি শুরু করি।’

আমিন আরও বলেন, ‘প্রথমে আমার ম্যানহাটনের স্টোর থেকে এই কার্যক্রম শুরু করি। সেখান থেকে যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের বাসায় গিয়ে আমরা
মাস্ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী
পৌঁছে দিই।’
যখন ঘরে বসে দেখি একজন বাংলাদেশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাস্ক ও অন্যান্য সাহায্য করছেন, তখন নিজে ঘরে থাকতে পারিনি।
আরেক বাংলাদেশি-আমেরিকান বংশোদ্ভূত তানভীর আহমদ লং আইল্যান্ডে বসবাস করেন। তিনিও নিজ উদ্যোগে মাস্ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, ডাক্তারদের পার্সোনাল

প্রটেক্টশন ইকুইপমেন্টসহ (পিপিই) অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ সম্পর্কে তানভীর বলেন, ‘আমার স্ত্রী একজন চিকিৎসক। করোনা মহামারি আমেরিকার সব অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার পর আমরা সবাই ঘরবন্দী। আমার স্ত্রী যেহেতু চিকিৎসক, তখন প্রতিদিন অনেক করুণ অভিজ্ঞতার কথা তিনি শেয়ার করেন। এসব শুনে নিজ থেকে আমি বাংলাদেশি ও আমেরিকান নাগরিকদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসি। এমনকি অনলাইনে তহবিল উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করি।’
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কের অনেক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ কর্মকর্তাও মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। এঁদের একজন এনওয়াইপিডির পুলিশ অফিসার ইফতি চৌধুরী। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি এই প্রাণঘাতী করোনায় পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়ে ফেলেছি। তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমেরিকান নাগরিকদের রক্ষা করার শপথ নিয়েছি, সেহেতু জীবন বাজি রেখে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব।
এই পুলিশ অফিসার বলেন, ‘আমি ফেসবুকে মাস্ক ও পিপিইর জন্য একটি পোস্ট দিই। তখন তানভীর আমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এখন তানভীর ও হিমুর এই উদ্যোগে তাঁদের সহায়তা করছি। তবে এই মানবিক কাজে আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ তহবিল নেই। তাই আশা করব, করোনা মোকাবিলায় আমাদের সহযোগিতায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা এগিয়ে আসবেন।
নিউইয়র্কে যাঁরা জরুরি বিভাগে কাজ করছেন, বিশেষ করে ফার্স্ট রেসফন্ডার, তাঁরা ফ্রিতে সার্জিক্যাল মাস্ক পেতে পারেন নিচের ঠিকানায়:
এটিঅ্যান্ডটি আমস্টারডাম অ্যাভিনিউ, ৫২৬, আমস্টারডাম অ্যাভিনিউ, ম্যানহাটান,এনওয়াই, মোবাইল নম্বর: ২১২-৪৭০-৩১৮৪
এ ছাড়া জ্যামাইকা, ওজোন পার্ক, ব্রঙ্কসে মাস্ক পেতে যোগাযোগ করতে পারেন পুলিশ কর্মকর্তা ইফতির সঙ্গে। মোবাইল নম্বর—৩৪৭-৬১৪-৮৯৪৯
কারও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দরকার হলে যোগযোগ করতে পারেন—খাইরুল ইসলাম, ফোন নম্বর: ৩৪৭-৬৭২-২২৫৬।