নিউইয়র্কের কুইন্সে আক্রান্ত বেশি

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হওয়া বাংলাদেশি সুজাউর রেজা চৌধুরী ও কামাল হোসেন সালেহ এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া শিশু। ছবি: সংগৃহীত
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হওয়া বাংলাদেশি সুজাউর রেজা চৌধুরী ও কামাল হোসেন সালেহ এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া শিশু। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস সংক্রমণের গ্রাউন্ড জিরো আমেরিকার নিউইয়র্ক। এ রাজ্যো মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ হাজার ছুঁই ছুঁই। ২৯ এপ্রিল রাজ্যে ৩৩০ জনের নাম মৃত্যু তালিকায় যুক্ত হয়েছে। রাজ্যের মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৯৬৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সুজাউর রেজা চৌধুরী ও কামাল হোসেন সালেহ নামের আরও দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। করোনার উপসর্গ এক বাংলাদেশি শিশুরও মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে আমেরিকায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ২১৯ বাংলাদেশির মৃত্যু হলো।

নিউইয়র্ক নগরীর কুইন্সে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির বাস। আর কুইন্সে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। নগরীর শুধু কুইন্সে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজারের বেশি মানুষের। আমেরিকায় মারা যাওয়া দুই শতাধিক বাংলাদেশির মধ্যে কুইন্সে বসবাসরত প্রবাসীর সংখ্যাই বেশি।

কুইন্সের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেলিন্ডা কার্টজ জানিয়েছেন, মহামারি সমস্যা শুরু হওয়ার পর কুইন্সে আত্মহত্যার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। নগরীর এ বরোতে গত এক মাসে ১৬ জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যাটি দ্বিগুন। মহামারী আর মৃত্যুর মিছিলের সরাসরি প্রভাব পড়েছে নাগরিকদের ওপর। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, কুইন্সে এখন ৫০ হাজার ৭৪১ জন করোনা পজিটিভ রোগী রয়েছে।

এদিকে নিউইয়র্ক রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও সহনীয় পর্যায়ে যায়নি। হাসপাতালে এক হাজারের কাছাকাছি রোগী এখনো ভর্তি হচ্ছেন। রাজ্য গভর্নর নির্বাহী আদেশে নগরকেন্দ্রের বাইরের কিছু হাসপাতালে নিয়মিত অন্যান্য মেডিকেল সার্জারি করার অনুমতি দিয়েছেন। এ ধরনের সার্জারি নিউইয়র্ক নগরকেন্দ্রের হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের সামাল দিতে হচ্ছে এসব হাসপাতালে।

নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগের সামনে থাকা (ফার্স্ট রেসপন্ডার) দুই হাজার জনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ শতাংশের বেশি লোকজনের শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে। নিউইয়র্ক নগরীর পুলিশের মধ্যে সাড়ে ১০ শতাংশ করোনা পজিটিভ।

করোনায় দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য নিউজার্সির গভর্নর ফিল মারফি রাজ্যের সংকট সামাল দেওয়ার জন্য ফেডারেল বিশেষ সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন। এ নিয়ে সরাসরি কথা বলার জন্য হোয়াইট হাউসে ৩০ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে।

এদিকে লকডাউনে থাকা অবস্থায় সর্বত্র অপরাধ তৎপরতা বেড়ে গেছে। লোকজন কর্মহীন। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সিতে কর্মহীন ভাতার জন্য আবেদনের চার সপ্তাহ পরেও এখনও বহু আবেদনকারী কোনো জবাব পাননি। রাজ্য কতৃর্পক্ষ থেকে অপেক্ষার কথাই বলা হচ্ছে শুধু। সাপ্তাহিক ভাতা নিয়মিত না পাওয়ায় অসংখ্য পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য রিলিফের বা ঋণের অর্থের প্রথম দফায় বড় ব্যবসায়ীরা নিয়ে গেছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে আবেদনই করতে পারেননি। আবেদনের জন্য যেসব নথিপত্রের প্রয়োজন, তা অনেক প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের হাতে নেই।

অনেকের কাছে ডাকযোগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা চেক আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ঘরের সামনের মেইলবক্স থেকে চেক চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এই অভিযোগে ২৪ এপ্রিল নিউয়র্ক নগরীর ব্রুকলিন থেকে ফেংগ চেন (৩১) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর কাছে কিছু চুরি করা ক্রেডিট কার্ডও পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।