নিউইয়র্কের স্কুল-কলেজ চলতি শিক্ষাবর্ষে বন্ধই থাকছে

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সব স্কুল–কলেজ শিক্ষা বছরের বাকি সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে। রাজ্যের তিন লাখের বেশি মানুষ এখন করোনাভাইরাস সংক্রমিত। হাসপাতালে এখনো প্রতিদিন প্রায় এক হাজার করোনা আক্রান্ত মানুষ ভর্তি হচ্ছে অথবা চিকিৎসা নিতে আসছে। টানা লকডাউনে থাকা নগরের কার্যক্রম আবার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছেন রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। নগরের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন, করোনাভাইরাস এখনো নিউইয়র্ক নগরে বেশ সক্রিয়। প্রতিদিন নতুন নতুন লোক সংক্রমিত হচ্ছে।

নিউইয়র্কের পাশের অঙ্গরাজ্য নিউজার্সিতেও ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার এই অঙ্গরাজ্যে ৩১১ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এ প্রথমবারের মতো এক দিনে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যায় নিউইয়র্ককে ছাড়িয়ে গেছে নিউজার্সি। এ রাজ্যে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে প্রায় ৭ হাজার ৫৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গভর্নর ফিল মারফি জানিয়েছেন।

১ মে শুক্রবার মেয়র ডি ব্লাজিও বলেছেন, 'আমরা খুব খারাপ সময় পার করে এসেছি।' তিনি আশা করেন, মে মাসটা হবে আশা জাগানিয়া। নগরে করোনাভাইরাস ভালোভাবেই জীবন্ত আছে উল্লেখ করে তিনি নগরের প্রায় সাত মাইলের সড়ক পথ নাগরিকদের হাঁটা চলার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেছেন। মে মাসের মধ্যে মোট চল্লিশ মাইল এবং একপর্যায়ে ১০০ মাইলের সড়ক পথ নাগরিকদের প্রশস্ত চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে তিনি জানান। এসব সড়ক পথে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নাগরিকদের চলাচলের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অঙ্গরাজ্যের স্কুল কলেজ চলতি শিক্ষা বর্ষে বন্ধ থাকবে। রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো স্কুল বোর্ডগুলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা উপস্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিভিন্ন ধাপে অঙ্গরাজ্যের সব কিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা এ সপ্তাহে জানানোর কথা বলেছিলেন গভর্নর। শুক্রবার তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির ক্রমাগত উন্নতির দিকে লক্ষ্য রেখে মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে এসব পদক্ষেপের কথা তিনি জানাবেন।

গত বৃহস্পতিবার অঙ্গরাজ্যের মৃত্যু তালিকায় ২৮৯ জনের নাম যুক্ত হয়ে হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় নিউইয়র্কে মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬১০ জনে। রাজ্যের তিন লাখের বেশি মানুষ এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিদিন হাসপাতালে এখনো এক হাজারের কাছাকাছি মানুষ ভর্তি হচ্ছে বা চিকিৎসা নিতে আসছে। এ পরিস্থিতিকে আরও সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য গভর্নর ও মেয়র উভয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। লকডাউন মেনে চলার ওপর আবারও জোর দিয়েছেন তাঁরা।

নিউইয়র্কের নাগিরেকরা ইতিমধ্যে কর্মহীন ভাতা পেতে শুরু করেছে। অনেকের এই ভাতা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। রাজ্যের লেবার ডিপার্টমেন্ট থেকে সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই, যারা সময়মতো আবেদন করেছেন, তাদের জরুরি সাহায্য হিসেবে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। 'পে চেক প্রোটেকশন' নামের অন্য একটি কর্মসূচির অধীনেও অর্থ পেতে শুরু করেছেন।

নগরের ভাড়াটিয়াদের ভাড়া মওকুফের এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা নেই। কেবল ভাড়া না দেওয়ার কারণে বাড়ির মালিকের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া জুন মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। বাড়ির মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই বেকারভাতা ও ফেডারেল সহযোগিতার অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ভাড়া দেওয়ার বিষয় এমন সমঝোতা করছেন বাড়ির মালিকদের সঙ্গে।