আমেরিকায় জুনে দিনে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হবে

নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর পর মরদেহ এই রেফ্রিজারেটর ট্রাক্টরে স্থাপিত অস্থায়ী মর্গে রাখা হয়। সেখানে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: রয়টার্স
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর পর মরদেহ এই রেফ্রিজারেটর ট্রাক্টরে স্থাপিত অস্থায়ী মর্গে রাখা হয়। সেখানে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে আমেরিকায় আগামী জুন মাস থেকে দিনে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ নথিপত্র পর্যালোচনা করে ‘দ্য হিল’ নামের প্রভাবশালী এক সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

এদিকে দেশটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর তালিকায় ৪ মে আরও তিন বাংলাদেশির নাম যুক্ত হয়েছে। তাঁরা হলেন নুরুল ইসলাম শুকুর (৬৬), নূর জাহান বেগম (৬২) ও ছওয়াবুর রহমান (৮২)। এ নিয়ে আমেরিকায় গত ৪৮ দিনে ২৩৪ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হলো।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর আমেরিকার সব রাজ্যেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়। প্রস্তুতির বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছানোর আগেই নিউইয়র্ক মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠে। আমেরিকার মতো দেশ সবকিছু বন্ধ রেখে অর্থনীতি সামাল দিতে পারছে না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পুনর্নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার শুরু করতে চান। এ নিয়ে আমেরিকা কার্যত বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প–সমর্থকেরা সবকিছু খুলে দেওয়ার পক্ষে। তবে এ নিয়ে রাজ্যে রাজ্যে শ্বেতাঙ্গদের ব্যাপক বিক্ষোভও দেখা দেখা গেছে। ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের চাঙা রাখার চতুর চাল দিয়ে বিভিন্ন রাজ্য খুলে দেওয়ার নানা প্রয়াস চালাচ্ছেন। যদিও মেডিকেল কমিউনিটি বারবার সতর্ক করছে, এখনই সব খুলে দেওয়ার পরিণাম ভালো হবে না। নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো প্রকাশ্যে বলেছেন, মানুষের জীবনের নিয়ে তিনি ছিনিমিনি খেলতে পারবেন না। মানুষের জীবনের মূল্য তিনি ডলারের অঙ্কে হিসাব করতে পারবেন না।

ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু খুলে দেওয়া হলে জুন মাস থেকে দিনে গড়ে মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসছে। প্রান্তিক রাজ্যগুলোয় সংক্রমণ সীমিত হয়ে আসছে। এর মধ্যে সব খুলে দেওয়া হলে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল তাদের মূল্যায়নে বলেছে, সব খুলে দিলে জুন মাস থেকেই আবার মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে।

সিডিসির এমন আশঙ্কা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে আমেরিকায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সব খুলে দিলে দিনে তিন হাজার মৃত্যু ও দুই লাখ করে সংক্রমণ ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই ডজনের বেশি রাজ্য খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেলুন, সিনেমা হল—এসব খুলে দেওয়ার পর সংক্রমণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় হোয়াইট হাউসের অন্যতম সমন্বয়ক ডেবোরা ব্রিকস ৩ মে ফক্স নিউজকে বলেছেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মেনে চললেও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে আমেরিকায় এক লাখ থেকে আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়েই তিনি কাজ করছেন।

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে আমেরিকায় নিশ্চিত মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও ১২ লাখ ১২ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮ জন। বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বিপর্যস্তের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।